চেয়ারম্যানের চামচা ও আমার দৌড় দৌড় খেলা

আরীফ খান স্বাধীন
Published : 3 Dec 2014, 04:58 PM
Updated : 3 Dec 2014, 04:58 PM

আমার মা বলেন আমি নাকি হাঁটার আগেই দৌড় শিখেছি। স্কুলে যাওয়ার আগেই পড়া শিখেছি। বয়স হওয়ার আগেই প্রেম শিখেছি। এসব নিয়ে মা আমার সাথে অনেক ঝগড়া করতেন। বকাবকি করতেন। পড়াশুনার ব্যাপার ছাড়া সব ব্যাপারেই মা আমার কাছে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেও মা বকতেন। মা বলতেন এত দৌড়াদৌড়ির করে প্রথম হওয়ার দরকারটা কী! দৌড়াতে কি কষ্ট হয় না? আমারও একসময় মনে হলো দৌড়ের মধ্যে কোন হিরোইজম নেই। তবে একবার দৌড়ের মধ্যে হিরোইজম খুুজে পেলাম। সেই ঘটনাটি বলি।

আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব আমার চেয়ে ছয় সাত বছরের বড়। তার ছেলে আমার চেয়ে চৌদ্দ পনের বছরের ছোট। একদিন চায়ের দোকানে বসে আছি এমন সময় চেয়ারম্যানের ছেলে আমার সামনে এসে সিগারেট ধরাল। নিজের খুবই প্রেস্টিজে বাধল। সেদিনের পুচকে ছেলে আমার সামনে সিগারেট ধরায়! যেহেতু আমি কিছুটা শিক্ষিত সেহেতু লোকজন এটা নিয়ে কানাঘুষা করল। যেহেতু আমি কিছুটা প্রতিবাদী, সেহেতু লোকজন এটার জন্য কিছু একটা করতে বলল। আমিও মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলাম, চেয়ারম্যানের ছেলেকে না, চেয়ারম্যানকে অপমান করব। বুদ্ধি খুঁজছিলাম। তো তারপরের দিন চাচার দোকানে চেয়ারম্যান চা খাচ্ছিল। সাথে তার চামচারা। এমন সময় আমার মনে হলো প্রতিশোধ নেয়ার সময় এসেছে। আমি দোকানদার চাচাকে চেঁচিয়ে বললাম, চাচা, আমাকে একটা ব্যানসন সিগারেট দিন তো। চাচা আমার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারল না। চেয়ারম্যান ও তার চামচারা মুখ চাওয়াচাওয়ি করল।

আমি চাচাকে ধমক দিলাম, সিগারেট চেয়েছি! চাচার চেয়ারম্যানের ছেলের কথা মনে পড়ল বোধ হয়। তিনি একটু হেসে একটা সিগারেট আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি বললাম, ম্যাচ! তিনি ম্যাচ দিতে থাকলেন। চেয়ারম্যান, তার চামচাসহ চা স্টলের সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। এক চামচা আমাকে বলল, তুই তো জীবনেও সিগারেট খাস নাই। আইজ খাইতাছস যে! তাও আবার চেয়ারম্যানের সামনে! বেয়াদবি করবি না। সিগারেট ধরাবি না।

আমি বললাম, চেয়ারম্যানের ছেলে আমার চেয়ে চৌদ্দ পনেরো বছরের ছোট হয়ে যদি আমার সামনে সিগারেট ধরাতে পারে তো আমি কেন চেয়ারম্যানের চেয়ে মাত্র ছয় সাত বছরের ছোট হয়ে সিগারেট ধরাতে পারব না? চেয়ারম্যান অগ্নিমূর্তি হয়ে বললেন, আমার ছেলের জন্য তুই আমাকে অপমান করছিস সাহস তো কম না! ঐ তোরা ওরে ধর! আইজ ওরে সাইজ করব। চামচারা আমাকে সাইজ করতে এলে আমি উল্টো ওদের ধাক্কা দিয়ে চেয়ারম্যানের উপর ফেলে দিলাম। একজনকে ঠাস করে ঘুষি মারলাম। তারপর দে দৌড়। আমার পেছনে পেছনে চেয়ারম্যানের চারজন চামচা দৌড়াতে লাগল। আমার চেয়ে অনেক পেছনে পড়ল। আমি পেছন দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে যাই। ওরা আবার দৌড়ায়। আমি বেশি এগিয়ে যাই। আবার থামি। ওরা আবারো দৌড়ায়। আমি এগিয়ে যাই। ওদের বলি, চেয়ারম্যানের চাম দিব কিন্তু খামচা! ওদের সাথে কমেডি করি। ওরা আরো রেগে যায়। আমাকে মারতে আসে। আমি থেমে থেমে দৌড়াই। আমার খুব মজা লাগে। মনে হয় জীবনে দৌড়টা খুবই জরুরী। দৌড়ের কারণেই আজ আমি চেয়ারম্যানের চামচাদের সাথে লড়তে সাহস পাচ্ছি। আমার মনে হলো এই দৌড়টা জীবনের জন্য খুবই জরুরী।

আমার মনে হল, যে জীবনে দৌড়ে দক্ষ, তাকে সহজে ঘায়েল করতে পারবে না কোনই পক্ষ।

বি.দ্র: সেই ঘটনার পরে বিচার হয়েছিল। বিচারে আমার নয় চেয়ারম্যানের ছেলের সাজা হয়েছিল। আর চেয়ারম্যান নিজে আমার কাছে তার ছেলের জন্য ক্ষমা চেয়েছিল এবং সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতো বলেছিল: তোর জন্যই আমার ছেলে আর কারো সাথে বেয়াদবি করতে পারবে না।

উপসংহার: আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান কিন্তু সব চেয়ারম্যানের মত অত খারাপ না। শুধু মেয়েদের প্রতি একটু….