‘অবাক পৃথিবী’তে এক ‘মাটির মানুষ’ মোস্তফা মেহমুদ

মুহাম্মদ দিদারুল আলম
Published : 2 March 2016, 02:37 PM
Updated : 2 March 2016, 02:37 PM

এখন তাঁর অবসর জীবন কাটছে। এখন তাঁর পরিচয় একজন সফল খামারি। মৎস্য, ডেইরি, পোলট্রি খামার করে আর প্রকৃতির সাথে মেলামেশায় তার দিন যায় এখন।
বাংলা চলচ্চিত্রে যখন কালো অধ্যায় নেমে এসেছে তখনেই তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেন। রাজধানীর বাস ছেড়ে আসেন নিজের মাটি, নিজের জন্মস্থানে। এখন এখানেই তাঁর বাস। এখানে তিনি সবুজের দিকে চেয়ে আর সমাজের কিছু কল্যাণকর কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখে সময় পার করছেন একা একা। ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি হারিয়েছেন সহধর্মিণীকে। একছেলে থাকেন কানাডা আরেকজন আমেরিকায়, ছেলেদের ডাকে প্রবাসে গেলেও তিনি মাটির টানকে অস্বীকার করতে পারেন না। ছুটে আসেন জন্মভূমি মায়ের কোলে। দেশের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চান প্রখ্যাত এই চলচ্চিত্র পরিচালক।

একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় বাবা ইঞ্জিনিয়ার দিল মাহমুদকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

এতক্ষণ বলছিলাম প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা মেহমুদ'র কথা। ষাটের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি প্রয়াত জহির রায়হানের হাত ধরে 'বেহুলা' ছায়াছবির সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ষাট, সত্তর ও আশির দশকে তার পরিচালিত ১৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি মুক্তি পায়। সর্বশেষ ১৯৮২ সালে তার পরিচালিত 'স্বামীর সোহাগ' ছায়াছবি মুক্তি পাওয়ার পর তিনি চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।
চলচ্চিত্রকে বিদায় জানিয়ে তিনি চলে আসেন নিজ জন্মস্থান চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠানালা গ্রামে। ১৯৯৮ সালে এখানেই তিনি গড়ে তোলেন খামার। সাড়ে ছয় একর জমির ওপর গড়ে তোলা এ খামারের নাম দেন 'মিরসরাই এগ্রো কমপ্লেক্স'। এক সময়ের সফল চিত্র পরিচালক মোস্তফা মেহমুদ এখন পরিচিত সফল খামারি হিসেবে।

১৯৩৬ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন পরিচালক মোস্তফা মেহমুদ। ১৯৫৭ সালে 'মৃদঙ্গ' নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন তিনি। লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৬৬ সালে জহির রায়হানের আগ্রহে 'বেহুলা' ছায়াছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন মোস্তফা মেহমুদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে জহির রায়হানের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর।

১৯৬৮ সালে মিতা ফিল্মসের ব্যানারে মোস্তফা মেহমুদের পরিচালিত প্রথম ছবি 'মোমের আলো' মুক্তি পায়। তিনি পাকিস্তান আমলে ছয়টি এবং স্বাধীনতার পর নয়টি ছবি পরিচালনা করেন। ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মোস্তফা মেহমুদ পরিচালিত এফডিসি থেকে মুক্তি পায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ছায়াছবি 'মানুষের মন'। এতে অভিনয় করেন নায়করাজ রাজ্জাক, ববিতা, আনোয়ার হোসেন।

তাঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে মায়ার সংসার, অবাক পৃথিবী, জয় পরাজয়, মধুমিতা, মাটির মানুষ ও মণিহার। ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারিতে 'স্বামীর সোহাগ' ছবির পর তিনি চলচ্চিত্র জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। ওই ছবিতে অভিয়ন করেন কবরী ও বুলবুল আহমেদ। এরপর কিছুদিন গার্মেন্টস ব্যবসার সাথে নিজেকে জড়িত করলেও এখন নিজ গ্রামেই তার বসবাস।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি মাসিক মীরসরাই পত্রিকার এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "এত বছর পর মানুষ আমাকে মনে রেখেছে এটা ভেবেই আমি সম্মানিত বোধ করছি। বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্র উন্নতি করতে হলে ভালো গল্পের বিকল্প নেই। আমার এই বয়সে আমি আরেকটি ছবি নির্মানের সাহস করছি। যেটি এখন সরকারী অর্থায়নে নির্মানের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি।"

একজন মোস্তফা মেহমুদের স্বপ্ন দেশে চলচ্চিত্রের সুস্থধারা ফিরে আসুক। পরিবার পরিজন নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে দর্শক আবার ছবি দেখুক। তাঁর স্বপ্নের পূর্ণতা পাক।