এবং সোহাগী, এরপর…

মুহাম্মদ দিদারুল আলম
Published : 23 March 2016, 00:24 AM
Updated : 23 March 2016, 00:24 AM

পরিবার অস্বচ্ছল, বাবা একটি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। দুই ভাই এক বোনের মাঝে মেয়েটি ২য়। পড়ালেখার অদম্য আকাঙ্খা দমে যায়নি, টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ যোগান দিতো। সংস্কৃতি মনা মেয়েটি একটি নাট্যদলের সদস্য। বাবা-মায়ের ইচ্ছা আর নিজের ভালো কিছু করার স্বপ্ন যদি না থাকতো তাহলে মেয়েটি দমে যেত। তার স্বপ্ন ছিলো ভালো কিছু দিয়ে সমাজ বদলের।

বলছিলাম সোহাগী জাহান তনুর কথা। বাবা ইয়ার হোসেনে, কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাসিন্দা। থাকতো অলিপুর এলাকায় ভাড়া বাসায়। তনু ছিলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের (সম্মান) ছাত্রী।

প্রতিদিনকার মত টিউশনিতে গিয়ে সেদিন (২০ মার্চ রোববার) আর ফিরে এলো না। ফিরে এলো তার ক্ষত-বিক্ষত লাশ। কি বীভৎস! অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়নামতি সেনানিবাসের অভ্যন্তরে পাওয়ার হাউসের পানির ট্যাংক সংলগ্ন স্থানে সোহাগীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। গলাকাটা মৃতদেহ নগ্ন অবস্থায় কালভার্টের পাশে ঝোপঝাড়ের ভেতর পড়েছিলো। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিলো। মোবাইল ফোনটিও পড়েছিল পাশে।

ভাবা যায়- চারপাশে গোলা বারুদ ও বিদেশী অস্র দিয়ে নিরাপত্তায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টেও মানুষ খুন হয়। চলে ধর্ষণ, গলা কেটে হত্যা করে নগ্ন করে রেখে যাওয়া! আর লাশ পাওয়া যায় ক্যান্টনমেন্টের বনে! হায়রে দেশ!! হায়রে সমাজ!! হায়রে আমাদের স্বাধীনতা!!!

মনে কষ্ট লাগলেও আমাদের সমাজে এটা একটা নিত্য-নৈমত্তিক অংশ। এই নিয়তি আমাদের মেনে নিতে হয়। কেননা সমাজ থেকে এভাবে প্রতিদিন শত শত সোহাগী ধর্ষিতা হয়ে নগ্ন অবস্থায় খুন হয়ে ডোবায় কিংবা জঙ্গলে পড়ে থাকে। বিচার করার কেউ নাই। প্রহসনের এই দেশে বিচার নামক শব্দটিই আজ আকাশের চাঁদের মতো অনেক দূরে দুর্লভ বস্তু হয়ে গিয়েছে, যা আমাদের ধরা দেয় না। আর্থিক অবস্থা দুর্বল হলেতো বিচার কল্পনাতীত হয়ে বসে রয়।

মেনে নিতে হয় কিছুদিন মানববন্ধন, ব্যানার-ফেস্টুন টাঙ্গানো, লেখালেখি, ঢাকঢোল পিটিয়ে একটা রব উঠা এরপর সব নিঃতেজ। এভাবে আমাদের দেখতে হয় সোহাগীদের চলে যাওয়া। দেখতে হয় ধর্ষণকারীরা ধরা পড়লেও আইনের মারপ্যাঁচে বীরদর্পে সমাজে চলাফেরা করে।

আমরা এমনই এক দেশের নাগরিক, যে দেশে হাজার হাজার সোহাগীরা প্রতিনিয়ত নিকৃষ্ট কিছু হায়েনার লোভের শিকার হয়। আর কিছু ক্ষমতাশালীর পোষা কুকুর হবার সুবাদে তারা ছাড়া পেয়ে যায়, হয়না তাদের কোনো বিচার। এর ফলস্বরূপ তারা আরো অনেক সোহাগীর সাথে এমনই করে। ধূলায় চাপা পড়ে যায় সোহাগীদের পরিবার থেকে করা মামলার ফাইলগুলো।

বাকী থাকে শুধু সোহাগীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া। ক্ষমা করো সোহাগী- আমরা পুরুষরা এতটা লোভী যে শুধু একটি নারীর শরীরের জন্য আমরা হিংস্র হয়ে উঠি। ভুলে যাই জাত, কূল, ধর্ম। ভুলে যাই আমিও যে কারো ভাই, কারো সন্তান, কারো বাবা। শুধু একটি নারীর শরীরের জন্য।

সোহাগীর হত্যা- কারা এই দুর্বৃত্ত? কি তাদের পরিচয়? কার কাছে বিচার চাইবো? বিচারহীনতার সংস্কৃতির এই দেশে বিচার কি কখনো হবে? নাকি প্রতিনিয়ত গুনতে হবে আরো সোহাগীর লাশ?