সমাজকর্মীদের মিলনমেলা, সমাজ থেকে সকল মন্দ দূর করার প্রত্যয়

মুহাম্মদ দিদারুল আলম
Published : 11 April 2016, 09:37 AM
Updated : 11 April 2016, 09:37 AM

'এসো মিলি প্রাণের টানে' সেদিনের এই শ্লোগানের টানে পুরো উপজেলা যেন একস্থানে এসে জড়ো হয়। ৪৮টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ২৩৩ জনের বেশী তরুণ-যুবকরা একত্রিত হয়েছিলো প্রকৃতির সৌন্দর্য লীলাভূমি মহামায়া ইকো-পার্কে। এতোগুলো সংগঠনকে একত্রিত করার যে গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন তিনি হলে মিরসরাই উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো: জসীম উদ্দিন। অনেকের জসীম স্যার আবার কারো কারো জসীম ভাই। এই সফল অনুষ্ঠানটি তাঁর আন্তরিকতার বহি:প্রকাশ। তাঁর সাথে হাতে হাতে রেখে কাজ করে গেছেন উপজেলার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা।

অন্ধকারে নিমজ্জিত সমাজে আলো জ্বালাবার কঠিন দায়িত্ব যারা হাতে নিয়েছেন তারা আর কেউ নন সমাজের উদীয়মান তরুণ-যুবকেরা। তারা ঘোষণা করেছেন সামাজিক শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্তির নতুন দ্বার উন্মোচন করবেন।
আর এই তরুণদের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করতে সেদিন ছুটে আসেন মিরসরাই উপজেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সামজিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ যারা মিরসরাইয়ের পরিচিত এবং প্রিয়মুখ। যাদের বক্তব্য তরুণ সমাজ ধৈর্য সহকারে শুনেন এবং ওখান থেকে সমাজকর্মের নতুন পাথেয় খুঁজেন। তরুণরা আশা করেন সকলের সহযোগিতা পেলে সমাজ থেকে সকল মন্দকে দূর করা সম্ভব।

মিরসরাই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো; জসিম উদ্দীন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর এই উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, 'সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধনকৃত সংগঠনের পাশাপাশি বেশ কিছু সংগঠন মিরসরাই অঞ্চলে সমাজ উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে। তারা এলাকার শিক্ষা, উন্নয়ন, সচেতনতা ও নানা সেবামূলক কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছে। আমরা আমাদের অধিদপ্তর থেকে তাদের সব রকম সহযোগিতা দেওয়ার প্রাণন্ত চেষ্টা করি। তারা আজ ব্যতিক্রমী এই পুনর্মিলনীর মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আজ থেকে তাদের শক্তি আরো বৃদ্ধি পেল। প্রত্যাশা করা যায় তারা আরো বেশি উদ্দীপনা নিয়ে সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।'

শুক্রবার (৮ এপ্রিল) পুনর্মিলনীর উদ্যোক্তা মিরসরাই উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার জসীম উদ্দীনের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে মহামায়া ইকো-পার্ক এলাকায় শুরু হওয়া ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানে নিজেদের সংগঠনের কর্মকান্ড, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলেন ধরে বক্তব্য রাখেন নানান সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।

তারা বলেন, 'আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষা, উন্নয়ন, সচেতনতা, সর্বোপরি সুন্দর সমাজ গড়তে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নতুন দিনের প্রত্যাশা নিয়ে হাতে হাত রেখে একযোগে কাজ করতে হবে।'

অনুষ্ঠানের আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শান্তিনীড়'র সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন সোহেল বলেন, 'মিরসরাইয়ের প্রত্যন্ত গ্রামে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের রেজিষ্টার্ড ৮৪টি ছাড়াও শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠেছে। মূলত এসব সংগঠনগুলোর নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তরুণরা। আর আমরা সম্মিলিতভাবে আরো বেশি উদ্যমে কাজ করার জন্যে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার জসীম উদ্দিন স্যারের উদ্যেগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। আমরা শপথ নিয়েছি হাতে হাত রেখে সকলে শুভ কাজের মাধ্যমে সমাজ তথা দেশ গড়ার কাজে নিজেদের নিবেদন করবো।'

সেদিন প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি কিংবা আমন্ত্রিত অতিথি এসবের কিছুই ছিল না অনুষ্ঠানজুড়ে। ছিলোনা ষ্টেজে কোন চেয়ার বা টেবিল। যে যার অবস্থান থেকে হাজির হয়েছিলেন মহামায়ার এই অনুষ্ঠানে।

সাংবাদিক এম মাঈন উদ্দিনের সঞ্চালনায় তরুণ সংগঠকদের মহতি এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মিরসরাই কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডা. জামসেদ আলম, মাদক মুক্তি ফাউন্ডেশনের সভাপতি শেখ আতাউর রহমান, মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস হোসেন আরিফ, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ, মিরসরাই প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শারফুদ্দীন কাশ্মীর, মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খোকা, বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ড. মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন, সাংবাদিক দেবদুলাল ভৌমিক, জোরারগঞ্জ মহিলা কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি রাশেদা আক্তার মুন্নি, কালের কন্ঠের পাঠক সংগঠন শুভ সংঘের মিরসরাই কমিটির আহবায়ক শিক্ষক সুভাষ সরকার, স্থানীয় নাট্যব্যক্তিত্ব মঈন উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী সেলিম, সমমনা সংঘের সর্বোচ্চ পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ আলম, শান্তিনীড় সংস্থার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন সোহেল, মিরসরাই কবিতা পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মুহাম্মদ দিদারুল আলম, উদয়ন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম, উদ্দীপন ক্লাবের সংগঠক শাহাদাৎ হোসেন লিটন, দুর্বার প্রগতি সংগঠনের হাসান সাইফুদ্দীন, বিজলী ক্লাবের সভাপতি শামস্ উদ্দিন, প্রজন্ম মিরসরাই এর নির্বাহী পরিচালক ইউনূস নূরী, অভিধান ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন, যুব উন্নয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, অপকার উন্নয়নকর্মী মোরশেদা আক্তার, কাটাছরা গ্রাম উন্নয়ন এর সভাপতি মাষ্টার রফিউজ্জামান, সনাতন সংঘের সভাপতি প্রদীপ কুমার দে, দুর্গাপুর নগেন্দ্র চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাঈদুল ইসলাম সুমন, তাইফার হারুন অর রশিদ, জাগ্রত প্রতিভার আক্তার হোসেন, নবজাগরণ ক্লাবের সাইদুল ইসলাম, সেতু রিগান বড়ুয়া, জোনাকী সংঘের কাউছার হোসেন, সুশীল সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মাহবুবুর রহমান, সোপানের অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের জোরারগঞ্জ থানার সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, প্রচেষ্টা ছাত্র পরিষদের অনুপ দাশ, হাইতকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদের রাজীব দাশ, ইউসামের মো: ছদর উদ্দিন, নির্বাণ সংঘের সভাপতি তানভীর আহম্মেদ, রিলায়েন্সের সভাপতি তুহিন, পশ্চিম জোয়ার ক্রীড়া সংস্থার মিজানুর রহমান, সোনালী স্বপ্নের জাহেদ মুরাদ এবং কেরাণীবাড়ী পাঠাগারের ইমামুদ্দীন সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

আলোচনা পর্ব শেষে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রা্ফেল ড্র মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।