হৃদিসখার টান, বন্ধু তোমার আমার প্রাণ

মুহাম্মদ দিদারুল আলম
Published : 9 July 2017, 04:03 PM
Updated : 9 July 2017, 04:03 PM

১৯৯২ সালে আমরা যাত্রারম্ভ করেছিলাম মহাজন হাট ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে। বসন্তের শুরুতে কৃষ্ণচূড়া রাঙ্গা ক্যাম্পাসে শৈশবের শেষভাগে বিদ্যাশিক্ষায় নিয়োজিত করেছিলাম আমরা শত শিক্ষার্র্থী। পাঁচ বছরের ব্যবধানে পরিণত কৈশোর নিয়ে আমরা ছুটছিলাম উচ্চতর লক্ষ্যের দিকে। জীবনের নিয়মে আমরা সবাই আজ কর্মজীবন আর সংসার জীবনের আর্বতে ব্যস্ত। তবুও এই ব্যস্ততাকে পিছনে ফেলে মহাজন হাট ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৯৭ ব্যাচ শিক্ষার্থীরা এক হয়েছি 'হৃদিসখা' ব্যানারে।

"অনিন্দ্য সুন্দরের প্রত্যয়, আনন্দদিনের প্রত্যাশা" এই স্লোগানটি নিয়ে আমাদের হৃদিসখা। 'হৃদিসখা' একটি বন্ধু সংগঠন। মহাজন হাট ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় বর্তমানে মহাজন হাট ফজলুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজের ১৯৯৭ সালের শিক্ষার্থীদের ঐক্যপ্রয়াস। ১৯৯৭ সালের এই বিদ্যালয় থেকে বিদায় নেয়ার পর আমরা আবার ঐক্য হওয়ার তাগিদ অনুভব করলাম। আমরা মনে করলাম আমাদের মাধ্যমিকের বন্ধুদের যদি একই সূত্রে বেঁধে রাখতে চাই তাহলে একটা মঞ্চের প্রয়োজন, প্রয়োজন একটা পরিচয়ের। আর সেই পরিচয় তৈরী হলো হৃদিসখার মাধ্যমে।
২০০৫ সালেই আমাদের হৃদিসখার পথচলা শুরু। হৃদিসখা হাঁটা শুরু করতে না করতে আমাদের মনে হলো এবার সব বন্ধুরা মিলে একবার মিলিত হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন কিছু করার।
তখনো আমরা কেউ কেউ ছাত্র, কেউ বা ছাত্র জীবন শেষ করে কর্মজীবনের শুরু বা শুরুর অপেক্ষায়। ঠিক তখনই নিজের স্বল্প সামর্থ্যে সাহস করে নিলাম ১ম মিলনমেলা ও গুরুজন সম্মাননার।

সে বার আমরা নিজেদের মিলনমেলার পাশাপাশি আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু স্বর্গীয় মুকুল কর চৌধুরীকে সম্মাননা জানিয়েছি। চেষ্টা করেছি নিজেদেরকে প্রথমবারের মত তুলে ধরার। কতটা স্বার্থক হয়েছিলাম তা না হয় ২০০৯ সালের বিদ্যালয়ের ৫০বছর পুর্তির আয়োজকরা ভালো বলতে পারবেন। সেদিন স্মরণিকাতে আয়োজক আমাদের বয়োজৈষ্ঠ্যরা আমাদের তথা হৃদিসখার নাম নিয়ে ছিলেন।

আমরা মনেকরি, আমাদের ১ম মিলনমেলায় আমরা কিছুই করতে পারিনি। সেদিন স্বাদ থাকলেও ছিলো না সাধ্য। তবে বুকে আশা বলে ২য় মিলনমেলার আয়োজন করেছে হৃদিবন্ধুরা।
আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ফেসবুক যাই বা বলি- সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বন্ধু খোঁজার সহজ একটি মাধ্যম। আমরা তারই দ্বারস্থ হলাম। আমাদের লক্ষ্য আরো বিশাল কিছু করার। তাই এই দ্বারস্থ হওয়া। ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলে যখন বন্ধুদের খুঁজতে শুরু করি তখন দেশে প্রবাসে অনেক হৃদিবন্ধুর খোঁজ মিলে, দারুন সাঁড়া ১৯৯৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের।
এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে আমরা হৃদি বন্ধুরা আবার ঐক্যবদ্ধ। এক যুগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্ধুদের এক মঞ্চে আবার এনে দাঁড় করালো আজকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

২০০৫ সালে বা ১৯৯৭ সালের পর যেসব বন্ধুরা হৃদিসখার বাহিরে ছিলো এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে আমরা আবার হৃদিসখায়। ২০১৭ সাল আমাদের দুই দশক পূর্ণ হলো এসএসসি দেয়া বা স্কুল আঙিনা ছাড়ার। বন্ধু পলাশ চন্দ্র নাথের আইডিয়ায় শুরু হলো কিছু করার। লক্ষ্য ঈদুল ফিতর এর তৃতীয় দিন। এ লক্ষ্য নিয়ে যখন যে অবস্থায় যে বন্ধুকে ডেকেছে হৃদিসখা। প্রাণের টানে, হৃদিসখার টানে আমরা গিয়েছি। কখনো শহরের বন্ধু গ্রামে আবার গ্রামের বন্ধুরা শহরে।

আমাদের স্বার্থকতা সেখানে যদি একজনকেও বলতে শুনি ৯৭ সালের শিক্ষার্থীরা অন্যদের থেকে আলাদা। আমরা স্বার্থক হবো তখন ৯৭ সালের সকল বন্ধুদের এই হৃদিসখার মঞ্চে এনে দাঁড় করিয়ে হাত তুলে বলতে পারবো আমরা সবাই হৃদিবন্ধু। আমরা এবার অনুষ্ঠানকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নিয়েছি। প্রথমত শিক্ষাগুরু সম্মাননা, দ্বিতীয়ত কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, তৃতীয়ত আমাদের মিলনমেলা, মধ্যাহ্নভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।


শিক্ষাগুরু সম্মাননা : ২০০৬ সালে যখন আমরা প্রথম মিলনমেলা করি সেদিন সাধ্যের অভাবে আমরা আমাদের সকল শিক্ষাগুরুকে সম্মাননা জানাতে পারিনি। সেদিন ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য ছিলো না। আজকে আমরা সেই ইচ্ছার পরিপূর্ণতা লাভ করাতে আমাদের ২য় শিক্ষাগুরু সম্মাননায় যাচ্ছি। যদিও আমরা জানি শিক্ষকদের ঋণ আজীবন শোধ করতে পারবো না। তারপরও কিছু করতে ইচ্ছা জাগলো আমাদের।


কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা: আমরা আমাদের এবারের ২য় মিলনমেলা ও শিক্ষাগুরু সম্মাননায় যোগ করেছি কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা। এটাকে আমরা নাম দিয়েছি হৃদিসখা উন্মেষ স্মারক। এখানে আমরা বেচে নিয়েছি অত্র বিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষার্থীকে। যাদের অবস্থান তার শ্রেণীতে ১ম থেকে ৩য়। এখানে আমাদের উদ্দেশ্য হলো। এই শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধকে জাগ্রত করা, অনুপ্রেরণা দেয়া। যাতে তারাও একদিন এই বিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ার পরও বিদ্যালয়ের বা শিক্ষাগুরুদের অবদানকে স্বীকার করে। অন্যকোন বন্ধু সংগঠন গঠন করতে পারে।


আমাদের মিলনমেলা : দুই দশকে হৃদিসখা। একে অপরের ভাব বিনিময় করা। ২০ বছর স্মৃতিতে জমে থাকা কথাগুলো বলা। না দেখা, না বলা কষ্টগুলো আজ এক নিমিষে শেষ হয়ে যাবে। ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকবো। বন্ধুর হাতে হাত রাখবো।

এবার আসি বন্ধুদের কথায় :  দ্বিতীয় মিলনমেলা অনুষ্ঠানটি সফল এবং স্বার্থক করার জন্য হৃদিসখার সকল বন্ধুরা সমানভাবে আর্থিক এবং আত্মিক সহযোগিতা করে গেছে।
মো. মাঈন উদ্দিন, মো. বোরহান উদ্দিন, মো. শাহাদাত হোসেন, মো. দেলোয়ার হোসেন শাহীন, কাঞ্চন কুমার দে, মো. তারেক হোসেন, রুবেল কান্তি সিংহ, মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, মো. আবুল ফয়েজ, কনক কুমার ভৌমিক, মো. মজিবুল হক, মরণজিত আচার্য্য, সুমন রায়, মো. ফারুক উল ইসলাম, মো. বেলাল হোসেন, মো. আশরাফুজ্জামান, মো. নুরুল আলম, মো. ছলিম উল্ল্যাহ হারুন, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. গিয়াস উদ্দিন, মো. মোসলেহ উদ্দিন, পলাশ চন্দ্র নাথ, সুজন কুমার নাথ, দিপক কুমার সূত্রধর, ইকবাল হোসেন, অহিদুন নবী, শেখ রাসেল টিটু।


আরো আছে বন্ধু শারমিন সুলতানা, নাসরিন আক্তার লাকী, জাহেদা আক্তার সোনিয়া, নাজমা আক্তার, তাহমিনা আক্তার, রোজিনা আক্তার, জিকরের জাহান, জোসনা আরা বেগম, শামীমা আক্তার।


যে বন্ধুদের আজ বেশি মনে পড়ছে,তারা হলো আমাদের প্রবাসী বন্ধুরা। এ তালিকাটাও দীর্ঘ- আছে, তাজুল ইসলাম, মো. জহির উদ্দিন, শেখ মুজিবুর রহমান, পুলক চন্দ্র দে, মো. আলা উদ্দিন, মো. সাইদুল আলম রিপন, মো. মিজানুর রহমান, মো. শহিদুল ইসলাম সোহেল, মো. হামিদুল হক দিদার, মো. জসিম উদ্দিন, মো. জয়নাল আবেদীন মিলন, মো. নুর উদ্দিন, মো. জাফর উল্যাহ।

এই বিশ বছরে হারিয়েছি চার গুণী শিক্ষক হারুন অর রশিদ, মুকুল কর চৌধুরী, মাখন লাল দে, নুরুল আবছার এবং প্রয়াত দুই সহপাঠী রেহানা পারভীন, রাধা রাণী গোস্বামী এবং প্রয়াত কর্মচারী রুহুল আমিন। এই আয়োজনে হৃদিসখা সদস্য বন্ধুরা কায়িক, মানসিক ও আর্থিক অংশগ্রহণে নিজেদের ঋদ্ধ করেছেন। সমৃদ্ধতার অলংকরণে ভূষিত করেছেন ২য় মিলনমেলা ও শিক্ষাগুরু সম্মাননা ২০১৭ অনুষ্ঠানকে। সহপাঠীদের পাশাপাশি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষত: মহাজন হাট ফজলুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন মহোদয় এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক শ্রদ্ধেয় স্বপন কুমার দাস তাঁদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমাদের আবদ্ধ কৃতজ্ঞতাপাশে।