খুনের রাজ্য থেকে আমরা বের হতে চাই

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব
Published : 21 April 2016, 02:14 AM
Updated : 21 April 2016, 02:14 AM

যারা খুন করে তাদের কাছে একটি খুন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু তারা জানে না যে, একটি খুনের সঙ্গে অনেক মানুষের জীবন জড়িত। তার বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান ও বন্ধু-বান্ধব। তাই একজন মানুষ পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া মানে অনেক মানুষের জীবন এলোমেলো হয়ে যাওয়া। কত স্বপ্ন মুহূর্তেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। একই বন্ধনে আবদ্ধ লোকগুলোর সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

অতি তুচ্ছ কারণে মানুষ খুন হচ্ছে। নির্মমভাবে শিশুদেরকে মারা হচ্ছে। পাখি শিকারের মতো অথবা বলা যায় মানুষের সাপ মারার মতোই মানুষ খুন করা হচ্ছে। নারায়নগঞ্জে একই পরিবারের পাঁচ জনকে খুন করা হয়েছে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায়। কী ভয়ংকর আক্রোশ! একে একে পাঁচ জন খুন! তাও ঠান্ডা মাথায়! আহা খুনের কী 'মহাআনন্দ'! এরপর খুন হলো হবি গঞ্জের চার নিষ্পাপ শিশু। মমতাময়ী মায়ের হাতে নিষ্পাপ শিশু খুন হচ্ছে। কী ভয়াবহ!

পুরো বাংলাদেশ যেন খুনের এক উপত্যকা। কেউ গুলি করে মানুষের বুক ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। কেউ কারও বুকে ছোরা বসিয়ে দিচ্ছে। খুন করে লাশের ওপর উম্মত্ত নৃত্যও বাংলাদেশের মানুষের দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতা খুললেই যে খুনের খবর পড়তে হবে তা অনেক নিশ্চিত করেই বলা যায়। কেউ খুন হচ্ছে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে, আর কেউ খুন হচ্ছে জমি দখল নিয়ে। আবার কেউবা রাজনৈতিক কোন্দোলে আর কেউ খুন হচ্ছে প্রভাব-প্রতিপত্তি ধরে রাখতে।

একটি খুন হয় সেটি সংবাদ শিরোনাম হয় আবার কিছুদিন নড়াচড়া করে ধামাচাপা পড়ে যায়। বাংলাদেশের মানুষ জানে না যে, সে খুনটির ব্যাপারে কী হয়েছে? খুনিরা অস্ত্র শক্তি ও পেশিশক্তির বলে বলীয়ান। তাই তারা খুন করে নির্বিঘ্নে ও সদম্ভে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে। খুনের নিষ্ঠুর খেলা কি বন্ধ হবে না? সাধারণ মানুষ এটাই এখন জানতে চায়।

কিছু মানুষের ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে খুনি-সন্ত্রাসীদের সখ্যতা আছে। তা না হয় এত খুন হচ্ছে তারপরও ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে অপরাধীরা। তবে দেশের মন্ত্রী-এমপি ও সচেতন জনগণ যেভাবে মুখে কুলুপ দিয়ে আছে তাতে মনে হচ্ছে খুনকে তারা প্রাত্যহিক রুটিন কাজ বা অনিবার্য কাজ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। আবার অনেককে দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তিও বরং মিডিয়াতে বলতে শুনা যায়। একেক সময় একেক ধরনের অপরাধ বেশি হয় বলে মনে হচ্ছে।

কিছুদিন আগেও বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুপ্ত হত্যা, গুন-অপহরণ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিরোধী সাংবাদিকরেদ ওপর আক্রমণ ইত্যাদি ছিল আলোচনার শীর্ষে। এখন আবার খুন ও শিশুহত্যা আলোচনার শীর্ষে। আমরা এই একটু নিস্তার চাই। কেউ কি আছেন আমাদের একটু প্রবোধ দিবেন।