জামাত-শিবির বেশি ডিজিটালাইজড

মুহাম্মদ আল-ফারুক
Published : 6 Feb 2012, 09:22 AM
Updated : 6 Feb 2012, 09:22 AM

এখানকার মন্তব্যগুলো পড়ছিলাম। পড়তে পড়েত একটা বেদনাদায়ক উপসংহারে পৌচতে হলো। আর তা হ'লো যে, আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মের শিক্ষা, সৃজনশীলতা ও বক্তব্যশৈলীর মান বড় রকমের বিভাজনের সন্মুখীন হয়েছে: একাংশ এসব বিষয়ে যথেষ্ট প্রতুৎপন্নমতিত্বের পরিচয় দিলেও, নতুন প্রজন্মের বৃহদাংশই প্রমান করছে যে, তারা নিন্মমুখী ধারার বাহক। দু'যুগেরও বেশী কাল ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করায় নতুন প্রজন্মের সাথে আমার সরাসরি যোগাযোগ নুন্যতম হওয়া সত্বেও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে এই প্রজন্মের হাল হাকীকত সম্পর্কে ওয়াকেফহাল থাকার চেষ্টা করি। এখানে যেসব মন্তব্যগুলো পোষ্টিং করা হয়েছে সেগুলোকে সেম্পল হিসাবে ধরলেই বিষয়টা সহজভাবে বুঝা যাবে। এ সব মন্তব্য গুলোকে (সংখ্যায় প্রায় শ'খানিক হবে) সার্বিক বিবেচনায় দু'ভাগে ভাগ করা যায়: জামাত-শিবিরের পক্ষে ও জামাত-শিবিরের বিপক্ষে। কিন্তু এ দু'ধারার মন্তব্যের মাঝে গুনগত পার্থক্য অতি সহজেই চোখে পড়ার মত।

জামাত-শিবিরের পক্ষে যারা বক্তব্য রেখেছেন তাদের প্রায় সবার বক্তব্যেই একটা যুক্তি, শৈলী ও প্রতিপক্ষের বিবেকের কাছে আবেদন রয়েছে। এদের ভাষা মার্জিত ও উপস্থাপন শৈলী পাঠককে আকর্ষিত করার মত। এ পক্ষের মন্তব্যকারীরা প্রধানত: যে জিনিষটি তুলে ধরতে চেয়েছেন তা হ'লো যে তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাতে তারা দেখেছেন: জামাত-শিবিরের লোকেরা সততা, ন্যায়পরায়নাতা, নিষ্ঠা ও সৌহার্দের ক্ষেত্রে অনুসরণীয়। এরা সার্বিকভাবে দুর্নীতির উর্ধে থেকে দেশ ও জনগনের কল্যানের কাজ করে। সর্বোপরি, এরা ইসলামকে জেনে ও বুঝে নিজেরা অনুসরণ করে ও অন্যদেরকে তা অনুসরণের আহব্বান জানায়।

পক্ষান্তরে, জামাত-শিবিরের বিপক্ষে যারা মন্তব্য করেছেন, দু:খজনকভাবে, তাদের মন্তব্যে এ ধরনের কোন সারবস্তু নেই। সার্বিক ও শৈলিক বিবেচনায় এ গুলো নিন্মমানের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা যে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরতে চেয়েছেন, তাহলো যে, জামাত-শিবিরের অতীত ইতিহাস খারাপ, তারা স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধী এবং একজন আশ্চার্য জনকভাবে তাদেরকে "ভারতের দালাল" বলেও আখ্যায়িত করেছেন।

কিন্তু সমস্যা হলো যে, একজন অনুসন্ধানী মনের মানুষের কাছে এগুলোর আবেদন কতটুকু। বাস্তবতার নিরীখে এ গুলো কতটুকু গ্রহনযোগ্য। উপরন্ত, নতুন প্রজন্মের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এগুলোর সাথে সামঞ্জস্যশীল কিনা? এ্যাকাডেমিক পরিভাষা ব্যবহার করে বলা যায় যে, এগুলো একটা সুপরিকল্পিত "ন্যারেটিভ" (কোন বিষয়ে এক ধরণের চিত্র গড়ে তোলা)-এর অংশ বিশেষ। সাধারণ ভাবে সামাজিক ক্ষেত্রে, এবং বিশেষ ভাবে উপন্যাস ও ছোটগল্পে চরিত্র চিত্রায়নের ক্ষেত্রে ন্যারেটিভের একটা শক্তিশালী ভূমিকা রয়েছে। আমরা জানি, একজন উপন্যাসিক তার উপন্যাসের এক একটি চরিত্রকে এক একটি বিশেষ রূপে চিত্রায়িত করতে চান। তিনি চান, একটি বিশেষ চরিত্র পাঠকের কাছে এভাবেই পরিচিত হোক। তার জন্য যত কিছু দরকার তা তিনি সে চরিত্রে সংযোজন করেন। সেগুলোর সত্য-মিথ্যা কেউ কখনো যাচাই করে দেখতে যায়না।

কিন্তু বাস্তব জীবন ত আর এরকম নয়। এখানে সত্য-মিথ্যার বিশেষ ভূমিকা আছে এবং মানুষ সতর্কতার সাথে তা দেখার চেষ্টা করে। যারা সত্য-মিথ্যার তোয়াক্কা করেনা, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যারা এ তোয়াক্কা করে, তাদের অনুসন্ধানী মন সত্যকে যাচাই করে দেখতে চাইবেই। আর এরাই মানদন্ডের উর্ধমুখী সূচকের প্রতিনিধিত্ব করে।

― ইলিনয়, ইউ-এস-এ থেকে মুহাম্মদ আল-ফারুক