পাঁচ জেলার নামের বানান পরিবর্তন এবং অনেক টাকার হিসেব

জোবায়ের চৌধুরী
Published : 30 March 2018, 10:48 PM
Updated : 30 March 2018, 10:48 PM

গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, পাঁচ জেলার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় আগামি সোমবার এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে তাঁর নিজ কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এ খবর আসার পর থেকে নানা মত পাওয়া যাচ্ছে। কেউ বলছেন ঐতিহ্যের কথা। আবার কেউ বা বলছেন আবেগের কথা। এ নিয়ে নানা মত বিরোধ রয়েছে। তবে এই পরিবর্তনের বিপক্ষের পাল্লাই ভারি বলে আপাতত মনে হচ্ছে। এর বিপক্ষে আন্দোলনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু ইভেন্টও খোলা হয়েছে।

তবে বৃহস্পতিবার মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, পাঁচটি জেলার নামের ইংরেজি বানানে কিছুটা অসঙ্গতি আছে। এটা দূর করতে নিকার সভায় একটি প্রস্তাব উঠছে।

মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের বরাতে গণমাধ্যম জানাচ্ছে, Chittagong এর পরিবর্তে বানান Chattagram, Comilla এর পরিবর্তে Kumilla, Barisal এর পরিবর্তে Barishal, Jessore এর পরিবর্তে Jashore এবং Bogra এর পরিবর্তে Bogura করার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য নিকার সভায় উঠছে।

এবার আসি যৌক্তিকতায়। অনেক সময় ধরে এসব জেলার বানানে অভ্যস্ত মানুষ। এর সাথে জড়িয়ে আছে অনেক কিছু। মানুষ শুধু আবেগ ও ঐতিহ্যের দিকেই নজর দিয়েছে। কিন্তু এই পরিবর্তনের সাথে যে কত হাজার কোটি টাকার হিসেব, কত জটিলতা আছে- তা নিয়ে কাউকে হা-হুতাশ করতে দেখছি না।

চট্টগ্রামের উদাহরণ দিলে বাকিগুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে। ধরেন চট্টগ্রামের নাম পরিবর্তন করা হলো। প্রথমত এ নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। নতুন একটি নাম স্থায়ী হওয়া অনেক সময়ের ব্যাপার। এ নিয়ে অনেক জটিলতা রয়েছে। হয়তো সরকার একটি সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শেষ করবে। কিন্তু এরপর যে কত ধরনের পরিবর্তন-জটিলতা পোহাতে হবে- তা চিন্তা করলেই মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যাচ্ছে।

একটি জেলার নাম পরিবর্তন মানে প্রশাসনিক সকল কাগজপত্র বাতিল করে একেবারে নতুনভাবে শুরু। অর্থ্যাৎ সবকিছু আবার নতুন করে শুরু!

যত দলিল পত্র রয়েছে সবকিছু থেকে পুরনো নাম বাদ দিয়ে নতুনটি যুক্ত করতে হবে। সকল প্রকার সাইনবোর্ড পরিবর্তন করতে হবে। এক কথায় অনেক বড় টাকার অঙ্কের বিষয়।

আমার সকল সনদ, ভোটার আইডি কার্ড, সদ্য পাওয়া স্মার্ট কার্ড, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক সনদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিপত্র হতে শুরু করে সবকিছুই কি আবার পরিবর্তন করতে হবে? স্মার্ট কার্ড পেতে যে দুভোর্গ পোহাতে হয়েছে- তা কি ফের পোহাতে হবে? এসব কিছু যদি পরিবর্তন করতে তাহলে অনেক সময় ব্যাপার। ততদিনে তো আমাকে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে।

এটা মাত্র আমি একজনের হিসেব। আমার মত হাজার হাজার মানুষের হিসেব করলে জটিলের চেয়ে জটিল হয়ে যাবে বিষয়টি। যাক ওইদিকে আর না যাই।

শুরু সরকারি নয়, বেসরকারী হাজার হাজার প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা কে দেবে? যদি না দেয়, তবে কি ভুল নামেই চলবে সব? আর যদি ভুল নামেই চলে তবে পরিবর্তনের দরকার কী?

সাইনবোর্ড, কার্ড, নথিপত্রসহ সবকিছু পরিবর্তন করতে হবে। এটা অনেক বড় ধরনের কাজ। এই জটিলতা অত সহজ বলে আমার মনে হচ্ছে না। আর পাঁচ জেলার মানুষের কত টাকা নষ্ট হবে! এত এত মানুষের দুর্ভোগের দায়ভার কে নেবে?

পরিত্রাণ চাই এসব থেকে। চট্টগ্রামসহ পাঁচ জেলার নাম আগের মতই থাক। যুগ থেকে যুগ প্রজন্ম বেড়ে উঠুক এ নাম নিয়েই।