টিপাইমুখ বাঁধ নির্মান ঠেকাবে আমাদের রকাররা!

মুকতাদির মির
Published : 26 Nov 2011, 01:04 PM
Updated : 26 Nov 2011, 01:04 PM

– দেশ নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি?
যে কোন তরুণ সেলেব্রিটি কে প্রশ্নটি করলে উত্তরটা প্রায় এইধরনের বা তার কাছাকাছি হয়।
-আমি স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ ক্ষুধা,দুর্নীতি,দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে।
তবে আসল ব্যাপারটা হল দুধে পানির পরিমাণ যন্ত্র থাকলেও কিংবা শাকসবজি-ফলমূলে -মাছে ফরমালিন নির্ণয়ের রাসায়নিক পদ্ধতি থাকলেও দেশপ্রেম কতখানি তা মাপার প্রকৃতপক্ষে কোন পদ্ধতি বা যন্ত্র নেই।তবে হ্যাঁ,আচার আচরণ কিংবা কাজে কর্মে কিছুটা প্রকাশ পেলেও পেতে পারে।দেশপ্রেমের ফাঁকা বুলি কেবল মাত্র ব্লগ- ফেসবুক ,পত্রপত্রিকাতে বিদ্যমান।বাস্তবে তার অর্ধেক বাস্তবায়ন হলেও দেশ বহুদূর এগিয়ে যেত বলেই আমার মনে হয়।

৯০ এর দশকের শুরু হতে ব্যান্ডসংগীতের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এদেশের সঙ্গীতজগতের ধ্যান ধারণা অনেকটাই বদলে দিয়েছে।সেইসময়ে ব্যান্ডের প্রতিরোধ করতে যতই চেষ্টা করা হয়েছিলো ,তার উল্টো হিসেবে তরুণদের কারনে একসময় রকধারার গান পাঁচতারা হোটেল হতে খোলা বাতাসে (ওপেন এয়ার কন্সার্ট) বেরিয়ে আসে।সেই গানে ছিল সমাজের অবিচারের বিরুদ্ধে ,বৈষম্যের বিরুদ্ধে আঘাত হানার আহবান।এক্ষেত্রে ওয়ারফেইজ,রেনেসাঁ,মাকসুদের ফিডব্যাক পরবর্তীতে ঢাকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।এখনও ওয়ারফেইজ স্টেজে উঠলে অসামাজিক,মহারাজ,স্বাধিকারের জন্য মুহুর্মুহু আবেদন আসতে থাকে।কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল,গত এক দশক যাবত এই ধরনের কোন গান পুরনো বা নতুন কোন ব্যান্ড হতে আমরা শুনিনি।তবে কি ব্যান্ডগুলো কি আপসকামিতার পথ বেছে নিয়েছে নাকি সমাজ এতটায় বদলে গেছে যে এই ধারার গানের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে।

যে ধান ভানতে গিয়ে এতো শিবের গান গাইতে হল তার কারণ টিপাইমুখ বাঁধ।জাতীয় কোন স্বার্থে এইদেশের কোন শিল্পী বা কোন অভিনেতার মাথাব্যাথা আছে বলে কখনও মনে হয়নি। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তারকা ব্যক্তিত্বদের যেকোনো ন্যায্য আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার ঘটনা ভুড়ি ভুড়ি থাকলেও আমাদের দেশে এমন উদাহরণ কই?টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুতে বেশ জোরালো কোন আওয়াজ তুলতে ওয়ারফেইজ বা আর্টসেলের সমস্যা কোথায় ছিল?নাকি বহুজাতিক কোম্পানির কাছে স্পন্সরশীপের সাথে তাদের বিবেক ও বন্দি? শঠতা পঙ্কিলতায় ভর্তি রাজনীতিবিদদের চাইতে এইসব রকস্টারদের ডাক তরুণদের কানে অনেক বেশি পৌঁছাবে বলেই মনে হচ্ছে।আর্টসেল যদি তাদের অনুজপ্রতিম কোন ব্যান্ড সদস্যকে পুলিশ আটক করার প্রতিবাদে মানব্বন্ধনের ডাক দিতে পারে টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুতে নয় কেন? বাংলাদেশের প্রথমসারির প্রায় সব ব্যান্ডের ফেসবুক ফ্যানের সংখ্যা ১ লাখেরও বেশি।তাদের ডাকে যদি ৫০০০০ তরুণ ও রাস্তায় নামে,তবে দিল্লির মসনদ ও কেঁপে উঠবে।নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কিংবা সুন্দরবনকে ভোট করতে কন্সার্টে যদি উপচে পড়া ভিড় হয় তবে দেশের বিশাল একটা অংশকে মরুভুমিকরন হতে রক্ষা করার ডাকে তরুণরা এক হতে বাধ্য।বামবার সদস্য ব্যান্ড গুলোকে বলছি,এটা কোন রাজনৈতিক ইস্যু নয় যে আপনাদের গায়ে রাজনীতির নোংরা কাদা লাগবে।এটা আপামর জনতার ইসু,দেশের বিশাল একটা অংশের জীবন-জীবিকা-প্রানবৈচিত্র্য এর সাথে জড়িত।সুতরাং আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন দেশ বাচাতে রাস্তায় নামবেন ,না নিরাপদ দূরত্তে থেকে গা বাঁচিয়ে চলবেন?যদি দ্বিতীয় পথ বেছে নেন তবে মনে রাখবেন লোকালয়ে আগুন লাগলে তা থেকে দেবালয় ও এড়ায় না।ব্যান্ড সঙ্গীত মানে সমাজ বিচ্ছিন্ন একদল তরুণের চেঁচামেচি -শান্তিনিকেতনি মুরব্বিদের এই ধারণা ভেঙ্গে দেয়ার এটাই মোক্ষম সময়।ব্যান্ডসংগীতের বজ্রনিনাদ আওয়াজ আর তারুণে্যর উচ্ছলতায় ভেঙ্গে যাবে টিপাইমুখ বাঁধ আর তার বাস্তবায়নকারীদের মনোবল-সেই অপেক্ষায় রইলাম।