দুঃসাহসিক ক্যামেরাম্যান রশীদ তালুকদার আর নেই!

মোকতেল হোসেন মুক্তি
Published : 26 Oct 2011, 06:51 AM
Updated : 26 Oct 2011, 06:51 AM

আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার আর নেই। দেশের প্রথম প্রধান মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে কোন মন্ত্রী কোন বড় মাপের নেতা/নেত্রী ছিলো না যিনি রশিদ তালুকদারের ফটোগ্রাফির নৈপুণ্যতাকে ভুয়সি প্রশংসা করেন নি। কখনো রাজপথে, কখনো বঙ্গভবনে, কখনো গণভবনে আবার কখনো বা সচিবালয়ের কোন মন্ত্রীর দরবারে ডাকা সভা কিংবা সেমিনারে। কতো শত রাজ্যের রাজা রানীর আলোকচিত্র তুলেছেন এই রশিদ তালুকদার। মাঠে নামলেই এক দিকে পিকেটার আর এক দিকে পুলিশ এরই মাঝখানে দেখতাম সেই বিশাল দেহের লম্বা ল্যান্সের ক্যামেরা হাতে ক্লিক ক্লিক করে ছবি তুলছে। অনেক সময় অনেক পুলিশ অন্যান্য সাংবাদিকদের বাধা দিতেন, লাঠী নিয়ে তাড়িয়ে আসতেন, কিন্তু কোন পুলিশ রশিদ ভাইকে কখনো কিছু বলেছে এ কথা শুনিনি। আমার মন্ত্রণালয়ে যখনই কোন বিশেষ সভা সেমিনার হতো, রশিদভাইসহ অনেক পি আই ডি'র ফটোগ্রাফার আসতেন। ওই সব দিনগুলিতে সময় তাদের সাথে সঙ্গীতের কারনে আমার একটা সম্পর্ক বজায় থাকতো। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুজিব নগর সরকারী কর্মকর্তা / কর্মচারী সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুসা সাদিক স্যার সে সময়ে সচিবালয়ের অভ্যন্তরে পি আই ডি'র প্রধান হিসেবে কাজ করতেন। মুসা স্যার সব সময় রশিদ ভাইয়ের ছবির ভূয়সি প্রশংসা করতেন। বলতেন আপনার ছবি যেনো কথা বলে এবং নির্ভুল ও নিখুঁত, জ্বলন্ত প্রাণময় নৈপুণ্যের বহিঃপ্রকাশ। এ এক ধরনের শিল্পকলা, যা সবার দ্বারা হয় না। অনেক ফটোগ্রাফারকেই দেখেছি, তেমন সুন্দর এবং আলোকবর্তিতার ক্ষেত্রে দক্ষ্যতার পরিচয় পাওয়া যায়না। সাদা মাঠা গোছের কোন রকম একটি ছবি তুলে দিতে পারলেই দায়িত্ব শেষ বলে চালিয়ে দিতেন অনেক ফটো সাংবাদিক। কিন্তু রশিদ ভাই তুলতে সময় নিতেন না অথচ চট করেই একটি বড় রকমের দৃষ্টিনন্দনীয় আকর্ষণীয় ছবি তুলে ফেলতেন। আমার মন্ত্রণালয় ছিলো দ্বিতীয় ৯ তলা ভবনে । অনেক দিন দেখেছি রশিদ ভাই তোপখানার কিসমত হোটেলের ছাদে ঊঠে গেছেন ছবি তোলার জন্য।

রশিদ তালুকদার। যার হাজারো সৃতি আজো আমার মনে পড়ে। সচিবালয়ে চাকরী করতাম (১৯৭২ থেকে ১৯৯১) আর সময় পেলেই প্রেস ক্লাব, তোপখানা রোডে আড্ডা দিতাম। অনেক মন্ত্রী অনেক নেতার সাথে সাথে কত প্রধানমন্ত্রী, কতো রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে রশিদ ভাইয়ের লম্বা ল্যান্সের ক্যামেরা নিয়ে লম্বা সুডৌল সুপুরুষ কে ছবি তুলতে দেখেছি। সবই সৃতির মিনারে বেদনার পোষ্টার হয়ে ঝুলে আছে । মাঝে মাঝে দখিনা বাতাসে এলো মেলো করে দিয়ে সৃতির জানালায় আঘাত করে যায়। ভুলতে কষ্ট হয় সে সব হারানো দিনের উচ্ছল ছন্দময় মুছে যাওয়া ক্ষণগুলি। দোয়া করি। পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন যেনো তাঁকে বেহেস্ত নসীব করেন । আমীন।