মর্ষকামী ও ধর্ষকামী

আবু সালেহ
Published : 13 Feb 2015, 11:20 AM
Updated : 13 Feb 2015, 11:20 AM

কয়েকদিন পূর্বে নিষ্ঠুরতা বিষয়ক একটি লেখা পড়ছিলাম। এ'র সারমর্ম অনেকটা এরকম –

মনোবিজ্ঞানে নিষ্ঠুরতা দুই প্রকারঃ মর্ষকামী ও ধর্ষকামী। প্রথমোক্ত জনেরা নিজেরাই নিজেদেরকে কষ্ট দেয়, যণ্ত্রণা দেয় – এতে সে আনন্দ পায়। এমনও হয়, নিজেকে কষ্ট দিতে দিতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে – তখন কষ্ট দেবার জন্য কারো সাহায্য প্রার্থনা করে। যারা আত্মহত্যা করে বা করার আকাঙ্খা পোষন করে – তারা এ'দল ভূক্ত। আর ধর্ষকামী যারা, তারা আনন্দ পায় অপর কাউকে কষ্ট দিয়ে। মানুষের এ' দু'টো বৈশিষ্ঠ্যই মনোরোগের আওতায় পড়ে।উক্ত দু'শ্রেণির মানুষই পৃথিবীতে প্রচুর রয়েছে। স্বজন-বন্ধুদের অগোচরেই এ'দের দ্বারা মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে যায়। দূর্ঘটনা ঘটার পূর্বে এ'রোগ গুলোকে চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব। আপাত দৃষ্টিতে দেখে কেউই এদের মাঝে কোন অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাবে না। আর দশটি মানুষের মতোই ওদের চলাফেরা-খাওয়া দাওয়া-সামাজিকতা।

এবার আমাদের অতি প্র্রিয় দেশটির দিকে একটু তাকাই। মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে দেশটিতে। এ'অচলাবস্থা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, চারিত্রিক ইত্যাদি ইত্যাদির। আমার কেনো জানি মনে হয়, আমরা সবাই এ' রোগ দু'টোতে আক্রান্ত – কেউ মর্ষকামী আর বাকী সকলে ধর্ষকামী। ধর্ষকামী যারা, তারা হেসে হেসে বাসে, গাড়ীতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে মানুষ পুড়ছে। একজন আরেকজনকে পিটিয়ে হত্যা করছে। যে শিশুটি পৃথিবীর আলো দেখার অপেক্ষায় ছিলো, তাকেও ওরা ছাড়েনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপরাধ মানুষ ধরে পিটিয়ে পিটিয়ে অর্থ দাবী করে, পর্যাপ্ত অর্থ না পেলে গুলি করে মেরে ফেলে। রাজনৈতিক গোয়ার্তুমির কারনে অবাধে বিরোধী পক্ষকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। দেশের কারাগারগুলো উপচে পড়ছে – তিল ধারনের ঠাঁই নাই। তাই বলে ধরপাকর থেমে থাকেনি। স্থানীয় থানা-ফাঁরির গারদগুলোও ভরে গেছে। অর্থাৎ সরকারী দল ও তাদের অনুসারীরা এবং বি এন পি-জামাত ও তাদের অনুসারীরা, সকলেই ধর্ষকামী শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। আর বাকী যারা, আমরা সাধারণ জনগণ, খেটে খাওয়া মানুষ, শ্রমিক, মজুর সবাই মর্ষকামী। অর্থাৎ নিজেরাই নিজেদের অত্যাচার করতে ভালোবাসি – নিজেদের কষ্ট পাবার পথ সুগম করে দেই। আমরাই ধর্ষকমীদের ক্ষমতা দেই – নিজেরা নির্যাতনের সুখানন্দ লাভের উদ্দেশ্যে। আমরা সকলেই রোগে আক্রান্ত। আমাদের সুচিৎসার প্রয়োজন।

এ'রোগ কর্কট রোগের চেয়েও মারাত্মক। এ'রোগের আশু উপশম প্রয়োজন। যেখানে সকলেই রোগী – সেবক হবে কে ?

এবার একটি কৌতুক দিয়ে লেখা শেষ করছি ——

একবার এক মর্ষকামী এক ধর্ষকামীকে গিয়ে বললো, 'আমাকে মারো, আঘাত করো, যণ্ত্রণা দাও'। ধর্ষকামী কষ্ট দেয়ার এ' সুযোগ ছাড়বে কেনো ? সে ঠিক করলো, মর্ষকামীকে না মারাই হবে তাকে কষ্ট দেয়ার সেরা উপায়। তাই দাঁত কিড়মিড় করে চিবিয়ে চিবিয়ে সে বললো, 'দাড়াও, এখনো সময় হয়নি'।