ঢাকার আকাশ যেন বিলবোর্ডে ঢেকে গেছে। এর বিরুদ্ধে চলছে, আলোচনা, সমালোচনা, নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি। ঢাকার সম্মানিত মে্যরদ্বয় দারুন ভাবে চাচ্ছেন বিলবোর্ডগুলো নামিয়ে ফেলতে। মন্ত্রী জনাব ওবায়েদুল কাদেরও সোচ্চার। টিভিতে খবরে দেখলাম সাধারন জনগন কেউ এটা পছন্দ করছেনা বরং এর ক্ষতিকারক দিকগুলো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করছেন। কিন্তু বিলবোর্ডের সংখ্যা কি কমছে? ইদানিং একটি বিলবোর্ড দেখলাম যাতে লেখা আছে; এগুলো সরালে নাকি লাখো মানুষ বেকার হয়ে যাবে। তারা প্রধান মন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন করছেন এই শিল্প কে রক্ষা করার।
ধরে নিলাম যে শিল্প শব্দটি দুটো অর্থেই বোঝানো হয়েছে। তাহলে শিল্পের মাধুর্য্য কি বিলবোর্ড গুলোতে আছে? টিভি বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে আমাদের হাতে রিমোট থাকে, চাইলেই চ্যানেল বদলাতে পারি। কিন্তু বিলবোর্ডগুলোর প্রকান্ড আকার পেরিয়ে দৃষ্টি বাইরে ফেলার উপায় থাকেনা। মনে হয় যেন বলছে,"না দেখে যাবি কই"?
যদি বলি বহু লোক এই শিল্পে কাজ করে তাই তারা বেকার হয়ে যাবে। কথাটা কি যুক্তিসঙ্গত? অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। এই বিষয়ে সরকারের নীতিমালা তৈরী হছে বলে শুনলাম। আশা করি তারা এটা খতিয়ে দেখবেন।
সাধারন জনগন কে অনেকেই ভাবেন অসচেতন। কিন্তু এই সাধারন জনগনই ঢাকার বিলবোর্ড পছন্দ করছে না। তারা চায় এগুলো সরিয়ে ফেলা হোক। কিন্তু যাদের পন্যের বা সেবার প্রচারে এই বিলবোর্ড তারা কতটুকু সচেতন? তারা নাকি সমাজের উচ্চ শ্রেনীর লোক, কম্পানিগুলোর কর্নধারেরা উচ্চ শিক্ষিত, রুচিশীল? তারা কি বুঝতে পারছেনা তাদেরি ব্যবসার জন্য ঢাকাকে অসুন্দর আর বিপদজনক করে তোলা হচ্ছে? আমার বিশ্বাস তারা এটা বোঝেন আর জেনেই তা করছেন, কারন ঢাকা রসাতলে গেলে তাদের কিছু আসে যায়না। তাদের আসল নিবাস ঢাকায় নয় অন্য কোনো শহরে।
ইদানিং দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের বিলবোর্ডে রাস্তার দুই পাশ সয়লাব। মনে হয় রাস্তার মালিক যেন তারাই। অবাক লাগে যখন দেখি কর্তৃপক্ষ উদাসিন। নেতাদের কেউ কেউ এর বিরুদ্ধে বলছেন, কিন্তু বেশিরভাগই নীরব। এটার নীতিমালা কে করবেন?
আবার দেখি বিদেশীরা ঢাকার রাস্তা সাফ করছে। কেউ বলছেন লজ্জা, আবার কেউ বলছেন এটা তেমন সিরিয়াস কিছুনা। ময়লা আর আবর্যনার উপর তো আমরা হাতির ঝিল বানিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি, আমরাও পারি। যাহোক, আমাদের দুই কানই তো কাটা, কিসের আবার লজ্জা?
মাথায় যখন পচন ধরে তখন করার আর কিছু থাকেনা। পচন ধরা মাথাগুলো শুধু জনগনের অসচেতনতার দোষ দেয় কিন্তু তাদের গায়ে যে পচা গন্ধ সেটা তারা বোধহয় বুঝতে পারেনা।
হাজার হাজার টাকার প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। ঢাকার দুই নগর পিতা অপরিছন্নতা আর বিলবোর্ডের এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। সঙ্গত কারনেই আমরা তাদের সাথে আছি। এর জন্য নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। ভাল কথা। আমরা চাই সত্বর এ ব্যপারে একটি সমাধান হোক।
আমার মতে প্রচার এবং পরিচ্ছন্নতা, দুটাই পাশাপাশি করা যেতে পারে। যেমনঃ
মূল কথা রুচিবোধ এবং ব্যবস্থাপনা। পরিকল্পনা, লোকবল, টাকাপয়সা কোনোটাই সমস্যা নয়। তবে সবাইকে কথা বলতে হবে। শুধু মেয়ররাই নয় কিংবা একজন মন্ত্রীই নয়, আরো মন্ত্রীকে, আমলাকে, সাংবাদিককে কথা বলতে হবে। কথা বলতে হবে শিল্পী সমাজকে। নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং কৌশলের দিকে নজর দিতে হবে। তাহলে দুই বছরেই ঢাকার চেহারা পালটে ফেলা সম্ভব হবে।