নিজেও জ্বালিয়েছি যে ঘর !

সোহেইল মুশফিক
Published : 24 Oct 2011, 03:42 PM
Updated : 24 Oct 2011, 03:42 PM

নিরঙ্কুশ ভোগের মোহে আচ্ছন্ন, আজন্ম অবিশ্বাসী চির অবাধ্য মানুষকে মানবিক মূল্যবোধ দানের নিরন্তর প্রচেষ্টা চলেছে কালে কালে। নানান ধর্মে, নানান বর্ণে, নানান মতবাদের নিগড়ে তাকে পরিশুদ্ধ করে তোলার চেষ্টা হয়েছে বারংবার। সেমিটিয় বিশ্বাস, সনাতনী আশ্বাস, হোমিওপ্যাথি অ্যালোপ্যাথি ইউনানী হার্বাল, যুক্তি তক্কো কল্প গল্প হেন কোনো কলেমা কালাম নেই যা তাকে অফার করা হয়নি সুললিত সুপাঠ্যে।

অবশ্য কাউকেই যে সে ফিরিয়েছে এমন ইতিহাসও নেই। সবই সে নিয়েছে মুখ পেতে। বামহাতে প্রগতি নিয়েছে তো ডানহাতে নিয়েছে প্রতিক্রিয়াশীলতা। নিজের স্ত্রীকে রাজতন্ত্রে সীমিত রেখে পরস্ত্রীতে কায়েম করেছে গণতন্ত্র অবাধ। বস্তুবাদী কল্কের কোঠরে পুরে নিয়েছে ভাববাদী গঞ্জিকার স্বাদ। নিরন্তর বিজ্ঞান চর্চায় ব্যাপৃত থেকেও ভূতের ভয়ে অজ্ঞান হয়েছে রাতের পর রাত।

ফলে একই অঙ্গে অনেক রূপ ধরতে গিয়ে যতখানি সে 'মতবাদী'(মতলবি) হয়ে উঠতে পেরেছে ততখানি ঠিক 'মনোগ্রাহী' হয়ে উঠতে পারেনি। আধুনিক হয়েছে ঠিকই, সভ্য হয়নি। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সবই হয়েছে কেবল মানুষ হওয়া হয়নি। পরস্পরবিরোধী উপাদানের সহবস্থানের জারকে মাত্রাতিরিক্ত জারিত হবার কারনে জ্ঞানী না হয়ে সে হয়ে উঠেছে আদতে সবজান্তা। সব প্রশ্নের জবাব আছে তার কাছে। বৈধ অবৈধ সব ধরনের কার্যকারনের আছে যুক্তিসঙ্গত ব্যখ্যাও। সবার সামনে দিয়ে সটান ল্যাংটা হয়ে হেঁটে গিয়ে বলে কিনা ব্যক্তিস্বাধীনতার চর্চা করলাম ভায়া !

আসলে নিরঙ্কুশ ভোগের মোহে আচ্ছন্ন, আজন্ম অবিশ্বাসী চির অবাধ্য মানুষকে মানবিক মূল্যবোধ দানের যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চলেছে কালে কালে, আমরা তার অর্ন্তগত পোশাকটাই নিয়েছি কেবল, অন্তর্নিহিত প্রণোদনাটা নেইনি।
তাই এইটুকু ভেবে অন্তত সান্তনা নেই আসুন, সমাজ সভ্যতা রাজনীতি অর্থনীতির এই যে নিরন্তর আগুনে জ্বলছি আমরা, তা কেবল অন্যেই জ্বালায় নি,আমি নিজেও যে জ্বালিয়েছি !

"কাউকেই পায় না কেউ

কেউ কাউকে বোঝেও না।

কপোল-কল্পিত ইচ্ছার সমাদরে

অনিচ্ছুক মানুষ নিজেকে বয়ে নিয়ে যায়

একটান সত্যের ভানে মিথ্যা সারাজীবন।

নিদারুন আত্ম-প্রবঞ্চক বলে

কেউ কাউকেই পায় না মানুষ

কেউ কাউকে বোঝেও না।

'কট' খেয়ে থেকে শশব্যস্ত কুকুর কুকুরী

গলিত সীসার রূপালী আগুনে দাম্পত্য পোহায়

ভাদ্রকে দেখিয়ে দেখিয়ে ধর্মের পরাকাষ্ঠা

মাংস খায় চেহারার স্বাদ নিয়ে

হরিণে ক্লান্ত হলে বনকুক্কুটি

কিছুই না পেলে আত্মমৈথুন চলে অনাত্মীয় সরোবরে

অধর্মের জাত যায় না লুকিয়ে লুকিয়ে কলা খেলে।

ফরাসী মদ আর বঙ্গীয় দুধ

ক্ষুধার দাসত্বেই কেবল অভিন্ন থাকে নিষ্কলুষ

রুচির বৈচিত্রে ভিন্ন হয়ে যায় উৎকল ও মগধ

হরিণে অরুচি বাঁধলে জঙ্গল উজাড় করে ফেলে পাপিষ্ঠ বাঘ

টিকটিকিও তখন টেকেনা সত্যের।

পৌণঃপুনিক বিশ্বাস ফাঁদে মানুষ কালে কালে

নিরঙ্কুশ বিশ্বাসে বাঁধেনা ঘর চিরন্তন

পৃথিবীর জঞ্জাল তাই মস্তিস্কে কাটিয়ে

অহর্নিশ পোহাবো বলে পরিশুদ্ধ ঐশ্বরিয়া

অক্ষুন্ন রাখি নিজের জন্য হৃদয়।

(অহর্নিশ পোহাবো বলে পরিশুদ্ধ ঐশ্বরিয়া/সোহেইল মুশফিক)