ক্ষমা চাইলেই ক্ষমা আর ভুলে যেতে বললেই কি সব কিছু ভোলা যায়!

শংকিত পদযাত্রা...
Published : 9 Nov 2012, 03:59 PM
Updated : 9 Nov 2012, 03:59 PM

একটি গান শুনেছিলাম,সম্ভবত ছবির গান (আমার আবার গানের শিল্পী বা কার গান এই সব মনে থাকে না) " সব কিছু ভুলে যেতে বললেই সহজে ভুলা যায় না….। কিন্তু এক পক্ষের আহ্বান থাকে সব ভুলে যাবার অর্থাৎ যে অন্যায় করে সেই পক্ষের।কিন্তু যেই পক্ষের উপর নির্যাতন হল তার পক্ষে সব ভুলে স্বপ্রনোদিত হয়ে ক্ষমা করে দেয়া কতটা কঠিন তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে।

আজ শুক্রবার কয়েক ঘন্টার সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি।সফরের প্রথমেই সাক্ষাৎ করেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনির সাথে।আমাদের যোগ্য মন্ত্রী দিপু মনি যথার্থই পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিনা রাব্বানিকে ৭১ এ পাকিস্তানিদের বর্বর আচরনের জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইতে বলেছেন এবং এর উত্তরে আগত অতিথি সব ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। দিপু মনির শুধু মাত্র ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান কতটা যৌক্তিক এ নিয়ে আছে আমার যথেষ্ট দ্বিমত। শুধু মাত্র ক্ষমা চাওয়ার মধ্যেই ৭১'এ ঘটে যাওয়া বিক্ষিপ্ত থাবায় হারিয়ে যাওয়া সম্পদ,ইজ্জত আর কৃতিমান মানব সম্পদের ক্ষতিপুরন হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে ক্ষমা চাওয়ার আগে আমাদের সরকারের পক্ষ হতে ক্ষতিপূরণ এবং সাথে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানটাই যথাযথ হত।

সুজনের পিতা আব্দুল কাহ্হার,সদ্য বিবাহিত নতুন বৌ ঘরে এবং এই নতুন বৌ আবার স্বল্প সময়ের মাঝেই গর্ভবতি বলে প্রমানিত হয়েছে। বংশের প্রথম সন্তান কাহ্হার আবার নতুন বৌয়ের গর্ভবতি শুনার সাথে সাথে পুরো বাড়িতে নেমে এসেছে আনন্দের দোলা। কিন্তু সময়টা খারাপ,চারিদিকে পাকিস্তানিদের হিংস্র থাবায় রক্তাক্ত হয়ে ওঠছে বাংলার সবুজ মাঠ/ঘাট। এই সময়ে দুরন্ত যুবক কাহ্হার দেশ মাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করতে মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহনটাকে কর্তব্য হিসাবে নিয়ে ঘর ছারলেন। আর এই খবর স্থানীয় রাজাকারের সংবাদ মাধ্যমে পৌছে যায় পাকিস্তানি শিবিরে। হামলা হল কাহ্হারের বাড়িতে,কাহ্হারকে না পাওয়া গেলেও তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হল। কাহ্হারের পোয়াতি বৌয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল পাকিস্তানি হায়নারা। ছিন্ন-ভিন্ন হল একটি সাজানো সংসার।অন্য দিকে যুদ্ধে গ্রেনেডের ভয়ংকর থাবার জ্বলন্ত স্বাক্ষী পা হারানো পঙ্গুত্ব নিয়ে ঘরে ফিরলেন কাহ্হার সাহেব। আজ সুজনের পিতা বেচে নাই তবে তার মা এখনও বেচে আছেন সেই নির্মমতার দগদগে ঘা বুকে ধারন করে। এখন আপনিই বলুন "জনাবা দিপু মনি ও হিনা রাব্বানি….সুজনের মায়ের পক্ষে কি সম্ভব সব ভুলে যাওয়া!!

বাঙালির সব সময়ই উচ্চ মনের ক্ষমাশীল। এই কথাটি আমরা সবাই মনে প্রাণে ধারন করি বলেই আজকেও পাকিস্তানের সাথে সু-সম্পর্কে কোন বাঙালির মনে সংশয় বা বাধা আছে বলে মনে করি না। তবে তা হতে হবে সুজনের মায়ের মত স্বামী হারানো-ইজ্জত হারানো হাজারো মায়ের বুকের চাপা অভিমানকে মসৃন হাতে মলম দিয়ে ঘা শুকানোর মধ্য দিয়ে। কোন কারনেই কোন দল বা গোষ্ঠি যদি শুধু মাত্র রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য পাকিস্তানের সাথে ৭১'র চেতনাকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা করে তা হবে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। কারন আপনাদের মনে রাখতে হবে সুজনের মায়ের সেই দগদগে ঘায়ের গল্প শুনতে শুনতে কাহ্হারের রক্তকনায় জন্ম নেওয়া লাখ সুজনরা আজ তৈরি হয়ে আছে……….শুধু সময়ের অপেক্ষা – আর সাথে আপনাদের পর্যবেক্ষন করছে মাত্র।।