জামাত-শিবির-রাজাকার, এই মুহুর্তে বাংলা ছাড়!

শংকিত পদযাত্রা...
Published : 24 Oct 2011, 02:16 AM
Updated : 24 Oct 2011, 02:16 AM

ছোট বেলা দেশের বাড়িতে ঈদ কিংবা কোন পার্বনে বেড়াতে গেলে ফুফু, চাচাতো বোনের কিংবা গ্রাম্য আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে গেলে দেখতে পেতাম ঘরের বেড়ায় একটু উচুতে কাপড়ে সেলাই করা কিছু লেখা গ্লাস দিয়ে বাধাই করা হস্ত শিল্প (ওয়াল মেট) সজতনে টানিয়ে রাখা হয়েছে। সেই ওয়ালমেট গুলোতে নানা ধরনের অদ্ভুদ সব কথা লেখা থাকতো যা বেশীর ভাগই বানান ভুল করা কাচা হাতের আঁকা বাঁকা করে হলেও খুব আগ্রহ আর সন্তুষ্ট চিত্তে পড়তে খুবই ভাল লাগতো। যেমন-"ফুল ফুটে ঝড়ে যায় থাকে শুধু লতা,মানুষ মরে যায় থাকে তার কথা" আবার কোনটাতে লেখা থাকতো " পুকুর জলে পাতা ভাসে,যার সাথে দেখা নাই সে কেনো হাসে"। আবার কোথাও লেখা থাকতো নিতী কথা যেমন-জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল,মানব জনম তিন সত্য দিয়ে,জন্ম-মৃত্যু আর বিয়ে এমন অনেক কথা পড়ে ভাবতাম এই লেখা গুলি শুধু মাত্র ঘর সুন্দর করার জন্যই লেখা। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুঝতে শিখে এখন বুঝি এই সব কথা গুলি শুধু মাত্র ঘর সুন্দর নয় জীবনকে সুন্দর করার জন্য একান্তই সত্য কথা গুলি ছন্দের ভাষায় ফুটে আছে জলন্ত হয়ে।

তখন ক্লাস এইটের ছাত্রী আমি। আমার খুব কাছের বান্ধবী ছিল শিউলি এবং তার বাসা আমাদের বাসার কাছাকাছি হওয়ায় প্রায়ই যাওয়া হত এবং সেও আসতো আমাদের বাসায়।একদিন শিউলিদের বাসায় গিয়ে তার টেবিলে একটি বই দেখে হাতে তুলে নিলাম এবং পড়তে লাগলাম। ছোট ছোট ক্ষুদে পাঠকদের জন্য রচিত ছোট গল্প আর কবিতাগুলি পড়তে খুব ভাল লাগছিল এবং বইটির নাম ছিল কিশোর কন্ঠ। যাই হোক বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করলাম বইটি কোথা হতে কিনেছিস সে জানাল তার বড় ভাই একটি ছাত্র সংঘঠন "ছাত্র শিবিরের" সাথে যুক্ত,সেই ছাত্র রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংঘঠনের পাশাপাশি কিশোর কিশোরীদের নিয়েও একটি সংঘঠন আছে আর সেই সংঘঠন থেকে প্রতি মাসে ১০ টাকা চাঁদার বিনিময়ে একটি করে বই সংগ্রহ করতে হয় এবং তার ভাই তাকে প্রতি মাসে একটি করে বই এনে দেয়। স্কুলে যাওয়া-আসার পথি মধ্যে কোন এক সরকারী প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে দেখতে পেতাম লাল রঙ্গের দ্বারা কিছু স্লোগান জাতীয় লেখা লিখে রেখেছে দেয়ল জুরে খুব বড় বড় করে। লেখা গুলির মধ্যে দু একটি মনে আছে আর তার মধ্যে -" জমাত শিবির রাজাকার এই মুহুর্তে বাংলা ছার "/ "একটা একটা শিবির ধর সকাল বিকাল নাস্তা কর "/ "৭১'র হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার "….ইত্যাদি- ইত্যাদি। আজ থেকে অনেকদিন আগে ফেলে আসা সেই কৈশরের কথা তখন থেকেই মনের অজান্তে খুব গভীরে একটি কথা গেথে গিয়েছিল যা তা হল এত বড় একটা দেয়ালে একটি দল সম্বন্ধে এরকম লেখা যেহেতু লেখা হয়েছে এবং জন সম্মুক্ষে সবাই পড়ছে অবশ্যই যাদের বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে তারা অপরাধী বলেই মুছে দিচ্ছে না বা প্রতিবাদ জানাচ্ছে না। অথবা তারা কোননা কোন ভাবে ঐ অভিযোগে অভিযুক্ত আর সে জন্যই তাদের দলের এই বাংলাদেশে জন সমর্থন কম আর তাই তাদের পক্ষে কেউ কথা বলছে না বা সমর্থন দিচ্ছে না। কিছুদিন পর আবারও এক বিকালে সেই বন্ধবীর বাসায় গেলাম আর তখনই বন্ধবীর বড় ভাই সেই ছাত্রশিবির কর্মি আমাকে এবং তার ভোনকে ডেকে নিলেন তার নিজ রুমে। প্রথমে নামাজ রোযা,পর্দা এবং ভাল হয়ে চলার বেশ কিছু উপদেশ সম্বলিত একটি ছোটখাট ভুমিকা বক্তব্য দিলেন এবং তার পর আস্তে ধিরে কেনো ইসলামী সংঘঠনের সাথে তিনি সম্পৃক্ত আছেন এক কথায়-শান্তির ধর্ম হল ইসলাম এবং এই শান্তির ধর্মকে হেফজতে কাজ করছে তাদের দল সেই জিনিসটি স্বল্প পরিসরে ব্যাখ্যা প্রদান করলেন স্বপ্রনোদিত ভাবেই। এক পর্যায়ে ওনাকে প্রশ্ন করলাম দেয়ালে দেখা সেই শ্লোগান গুলি সম্পর্কে,তিনি খুব ঠান্ডা মাথায় আমাকে বুঝালেন এই সব যারা লিখেছে তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না এবং তারা ইসলামের শক্র। তিনি আমাদের প্রাথমিকভাবে বুঝাতে সক্ষম হলেন এই ছাত্র সংঘটনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারনে তিনি এখন পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং সুন্দর একটি জীবন পরিচালনা করছেন আর তাই আমাদেরও তিনি সামনের দিন গুলিতে এই ছাত্র সংঘটনের আদর্শ গ্রহন করে সুন্দর জীবন গড়ার জন্য আহ্বান জানান। এর কয়েকদিন পরেই ঐ জেলার স্বনামধন্য কলেজটিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি ছাত্র সংঘটনের মধ্যে তুমুল লড়াই শুরু হল এবং চলতে থাকলো দু-তিনদিন যাবৎ। ঐ দিন বিকালে আবার সেই বন্ধবীর বসায় গিয়ে দেখি বন্ধবীর বড় ভাইয়ের রুমে তার সংঘটনের আরো কিছু কর্মি নিয়ে বৈঠক করছেন,আমার বন্ধবী মারফত জানতে পারলাম কালকে তার ভাইয়ের দল সুসংঘঠিত হয়ে কলেজে তাদের প্রতি পক্ষের উপর ঝাপিয়ে পড়তে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। আর এর জন্য দেশীয় অস্র-সস্র সহ আগ্নোআস্রও যোগার করেছে বলে সে আমাকে জানায়। শান্তির ইসলামকে পুজি করে অশান্তির রাজনিতি করা এই প্রথম জামাত শিবির সম্পর্কে পেলাম কিছু ভয়ংকর ধারনা। এর কিছুদিন পর আবার বান্ধবীর বসায় গিয়ে দেখি সে তার মুখ ভারি করে বসে আছে,কারন জানতে চাইলে সে চুপি-চুপি জানাল বাসার কাজের মেয়ের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় পাশের বাসার আন্টি তার বড় ভাইকে আবিস্কার করা নিয়ে বাসায় উত্তপ্ত সময় পার করছে পরিবারের সকল সদস্য। আর তখন থেকেই বুঝতে পারলাম দাড়ি টুপি আর ইসলামের লেবাস গ্রহন করে নিতি কথা বললেই শান্তির ধর্ম ইসলামের শান্তির পরশ হৃদয়ে ধারন করা যায় না।

এর বেশকিছুদিন পর দেখতে পেলাম,যাদের দেশ বিরোধী,স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করার জন্য রাজাকার,আলবদর ,আলশামস্ হিসাবে গালি দেওয়া হয় তাদের গাড়িতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সম্বলিত আমাদের ক্ষমতা। ছাত্র শিবিরের অপকর্মের গল্প আর নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না,শুধু এ টুকুই বলতে পারি রগ কাটা এবং সাধারন ছাত্রদের মির্মম হত্য করে ম্যনহলে ফেলে রাখার শিক্ষা এক মাত্র এই দলটিই দিয়ে থাকে তা এখন সবার কাছেই পানির মত পরিস্কার।

যাই হোক,আজকে যখন স্বাধীনতার ৪০ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য্য শুরু হল তখন নতুন করে সেই পুরান শ্লোগানটি মনে করে বলতে হচ্ছে আমার ছোট বেলা থেকে যাদের এই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি হিসাবে জেনে এসেছি তা একেবারেই মিথ্যে নয়। আর যদি মিথ্যাই হত তা হলে জমাতের এতো ক্ষমতাধর!বড়-বড় নেতা গুলিকে বিচার ছাড়াই জেলে পুরে রাখলো আর দেশের বিবেকবান মানুষগুলি নিশ্চুপ হয়ে রইল এমনকি বিদেশী কত শক্তীর সাথে তাদের সখ্যতার গল্প শুনি কই তাদের কড়া হুশিয়ারি ! আজকে যখন স্বাধীনতা বিরোধীদের তৎকালিন কর্মকান্ড নিয়ে মানুষের মনে নানা ক্ষোভের বহিঃ প্রকাশ ঘটতে শুরু করেছে তখন বাংলাদেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল,যে দলটি দাবী করে তাদের নেতা স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন এমনকি মুক্তি যুদ্ধের একটি সেক্টরের সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই দলটি যখন এই স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষ নিয়ে সাফাই গাইতে শুরু করে তখন মনোকষ্টের সাথে বলতেই হয় আমাদের চেতনা আর অন্ধ দেশ প্রেমের মুলা ঝুলিয়ে আমাদের সাথে প্রতারনা করে দেশের শাসন ভার হাতিয়ে নিয়ে আজকে তারা সরূপে আভির্বুত হওয়া সত্যিই দুখঃজনক। হয়ত আমরা আবারও আমাদের চেতনাকে কিছুদিনের জন্য সযতনে খুব আহ্লাদ করে অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে তাদের মুখরোচক ফুলঝুড়ির মোহের কাছে বাংলার সাধারন জনগন হবে বিভ্রান্ত। আর সেই বিভ্রান্ত হওয়ার আগেই এই সাধারন মানুষগুলিকে দেখাতে হবে সঠিক দিকনির্দেশনা,পৌছে দিতে হবে প্রতিটি কানে-এ দেশ তোমার আমার,আর এর হেফজত ও করতে হবে আমাদেরই,যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আলবদরদের এ দেশে ঠাই নাই…এবং তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতাদের সাধারন জনগনের নিকট চিহ্নিত করার এখনই উপযুক্ত সময়।