প্রাণের শহর বগুড়া

নাভিদ ইবনে সাজিদ নির্জননাভিদ ইবনে সাজিদ নির্জন
Published : 9 March 2018, 03:56 AM
Updated : 9 March 2018, 03:56 AM

পৌরাণিক এবং প্রাচীনকালের ইতিহাসে বগুড়া দখল করে আছে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে প্রবেশদ্বার এই ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জনপদ বগুড়া। প্রাচীন পুন্ড্র রাজ্যের রাজধানী পুন্ড্রবর্ধন হচ্ছে বগুড়া। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন প্রভৃতি রাজাদের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল প্রাচীন জনপদ বগুড়া । ৮৮.৫০ ডিগ্রী পূর্ব থেকে ৮৮.৯৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এবং ২৪.৩২ ডিগ্রী উত্তর থেকে ২৫.০৭ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশে বগুড়া সদর উপজেলা অবস্থিত।

সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগড়াগণ ১২৭৯ থেকে ১২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তার নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে বগড়া বা বগুড়া। ইতিহাস থেকে জানা যায় বাংলার প্রাচীনতম একটি শহর বগুড়া। ভারতের রাজা 'আশকা' বাংলা জয় করার পর এর নাম রাখেন পুণ্ড্রবর্ধন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বগুড়া ৭নং সেক্টরের অধীনে ছিল।

ফাল্গুনের বিকেলে বগুড়া সদরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা হতে নিকটস্থ এলাকার কিছু ছবি।

আলোকচিত্রী: নাভিদ ইবনে সাজিদ নির্জন

প্যানোরোমায় দেখি আমার প্রাণের শহর বগুড়া।

নবাব বাড়ি সড়ক

.

করতোয়ার পূর্ব পাড়

.

শহীদ খোকন শিশু পার্ক। দেখা যাচ্ছে নির্মাণাধীন পুলিশ প্লাজাও।

.

সার্কিট হাউজ। দেখা যাচ্ছে বগুড়া জিলা স্কুল। উঁকি দিচ্ছে সতমাথার বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার।

রোমেনা আফাজ সড়ক। চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বর।

জজকোর্টের পেছনে দেখা যাচ্ছে ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেসা খেলার মাঠ

চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের পাশেই অবস্থিত ১৫০ বছর পুরনো বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

এতক্ষণ প্রাণের শহর বগুড়ার যে ছবিগুলো দেখলাম এই এলাকাতেই আমি সারাদিন ঘুরে বেড়াই। দেখি পৌর শিশু পার্কে একটা শিশু কমলা লেবু খাচ্ছে, ডাকঘরের পাশের কৃষ্ণচূড়ার গাছে একটা লক্ষী প্যাঁচা কিংবা সাতমাথায় যানজটে একটা রিক্সায় বসে আছে তরুণী, ভিড়ের ভিতর দৌড়াচ্ছে কেউ, যেন ট্রেন ধরবার তাড়া। কলেজ লেকের পাশে বসে দেখি বেলা শেষে সব পাখি ঘরে ফিরছে। পৌরসভা অফিসের রাস্তায় কমলা রঙের রোড লাইট আছে, সেই পথে রাত-বিরেতে হেঁটে হেঁটে আমি চাঁদ দেখেছি।

এই বগুড়া শহরেই একবার হৈ পড়েছিলো 'চাঁদের ভিতর সাঈদী!' আমিও বেশ মজা পেয়েছিলাম। আরো কতো মজার ঘটনা! আমি যখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি একবার অ-মনোযোগে হাঁটতে হাঁটতে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পশের শুকনো ড্রেনের ভিতর পড়ে গেছিলাম। ভাগ্যিস ড্রেনটা শুকনো ছিলো!

প্রাণের এই বগুড়া ঘিরে অসংখ্য স্মৃতি আছে আমার। হায়, এই শহর থেকে চলে যেতে হবে হাজার মাইল দূরের দেশে। জানিনা কোনোদিন ফিরতে পারবো কি-না, বেঁচে থাকলে একদিন সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এই বগুড়াতে ফিরবোই। বগুড়ায় আমার অনেক স্বপ্ন আছে, আছে অনেক মানুষের ভালোবাসা। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। বগুড়াকে আমাকে অনেক দিয়েছে, মানুষের মতো মানুষ হয়ে বগুড়াকে কিছু দিতে চাই।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, রোমেনা আফাজ, আজিজুল জলিল (পাশা),  মুশফিকুর রহিম- আরো অসংখ্য আলোকিত মানুষে ঘেরা এই বগুড়া থাকুক হৃদয়ের আলোকিত ঘরে। শুভকামনা রইলো, প্রিয় শহরটা ভালো থাকুক, শহরটা হায়েনা মুক্ত হোক, ভালো থাকুক সহজ-সরল মানুষগুলো, ভালো থাকুক এ শহরের প্রিয় যাকিছু।