সনদে নাম সংশোধনে রাজশাহী বোর্ডে একটি ‘ঘুষহীন’ অভিজ্ঞতা

নাভিদ ইবনে সাজিদ নির্জননাভিদ ইবনে সাজিদ নির্জন
Published : 17 March 2019, 02:27 PM
Updated : 17 March 2019, 02:27 PM

মালয়েশিয়ায় একটা কোর্সের জন্য কিছু কাগজপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে মনে পড়ল এসএসসির সার্টিফিকেটে আমার বাবার নামে ভুল আছে; পাসপোর্টের সাথে মিলছে না। যদিও ভুলটা বেশ ছোট।   'Shazedur' এর জায়গায়  'Sazedur' হবে অর্থ্যাৎ শুধু  'h' বাদ যাবে।

ভিসা কনসালটেন্টের সাথে কথা বললে তিনি বললেন বিষয়টা যেহেতু সার্টিফিকেট, তাই সংশোধন করাই সবচেয়ে ভালো।

আমিও ভাবলাম, ছোট্ট একটা ভুলের জন্য কখন কোন বেকায়দায় পড়ে যাই, ভুল কেন রাখবো? তাই সংশোধন করার সিদ্ধান্তই নিলাম।

সার্টিফিকেট সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র সাথে নিয়ে বগুড়া সাতমাথা থেকে সকাল ৭টায় রাজশাহীর গাড়িতে উঠলাম। রাজশাহী পৌঁছুতে ১১টা বেজে গেল।

শিক্ষা বোর্ডে যেয়ে নাম সংশোধনের শাখায় যোগাযোগ করলে তারা অনলাইনে নাম সংশোধনের আবেদন করতে বললেন। শিক্ষা বোর্ডের পাশে একটা দোকান থেকে অনলাইনে নাম সংশোধনের আবেদন করলাম।

এরপর ৯৫৮ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে, টাকা জমার রিসিপ্ট, জন্ম নিবন্ধনপত্র, নম্বরপত্র, সার্টিফিকেট, পিতা-মাতার ভোটার আইডি আর সকল কাগজের ফটোকপিসহ আবেদনপত্র শিক্ষা বোর্ডে নাম সংশোধন সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিলাম।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের নামে অনেক অভিযোগ শুনেছি। এখানে প্রতিটি ইট-পাথরও নাকি ঘুষ খাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। বোর্ডে এসে কর্মকর্তা-কর্মচারির সেবামূলক আচরণে আমি অবাক হয়ে গেলাম। কেউ একটা পয়সাও ঘুষ দাবি করলো না বরং তারা যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে আমার কাজটি দ্রুত সময়ের মধ্যে করে দেওয়ার কথা জানালেন।

নাম সংশোধনের আবেদন জমা দিয়ে বগুড়া চলে এলাম। কয়েকদিন পর পর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের  ওয়েবসাইটের সোনালী সেবা অংশে আমার সংশোধনীর বিষয়ে আপডেট দেখতাম।

পনের-বিশ দিন পর  অ্যাকশন স্ট্যাটাসে  'ফিনিশড' লেখা দেখলাম। তখন শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করলে তারা  নাম সংশোধন নথির গেজেট এ আমার অংশটুকু সংগ্রহ করে প্রিন্ট করতে বললেন।

তারপর মূল নম্বরপত্র, নিবন্ধনপত্র, প্রবেশপত্র শিক্ষা বোর্ডের রেকর্ড শাখায় জমা দিলে সপ্তাহ দুয়েক পর আসতে বলা হল আমাকে।

সপ্তাহ দুয়েক পর আবারো বোর্ডের রেকর্ড শাখায় গেলে তারা একটি সংশোধনী ডাটা দেন। এরপর সনদ বাবদ ৫০০ টাকা এবং  নম্বরপত্র বাবদ ৫০০ টাকা অর্থ্যাৎ মোট ১০০০ টাকার মতো দিয়েছিলাম ব্যাংকে।

জমা দিয়ে আবেদন করার তিন-চার দিন পর নতুন সনদ ও নম্বরপত্র পেয়ে যাই। সার্টিফিকেটে নাম সংশোধন প্রক্রিয়ায় সব মিলিয়ে মাস দুয়েক সময় লেগেছিল।

এই সার্টিফিকেটে নামের ভুল ছিলো

নাম সংশোধিত নতুন সার্টিফিকেট

শুরুতে ভেবেছিলাম বিষয়টা অনেক কঠিন ও জটিল হবে। কিন্তু কাজ শেষে উপলব্ধি হলো, আমাদের দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন যথেষ্ট আন্তরিক হয়ে উঠেছেন।  ঘুষ খাওয়ার মাত্রাও কমেছে। পুরোপুরি হয়তো না, তবে সার্বিকভাবে যে অনেকখানি পরিবর্তন ঘটেছে তা বেশ স্পষ্ট।