প্রথম উড়ানেই বহুদূর… হ্যাঙ্গার পর্যন্ত কম কিসে?

নাঈম ফারায়েজ
Published : 7 April 2015, 07:52 AM
Updated : 7 April 2015, 07:52 AM

এইতো রোববার বিকেলে ব্যস্ত রাজধানীর এক সড়কদ্বীপে ঠ্যাং ঝুলায়ে সিগনাল ছাড়ার অপেক্ষায় আছি। ঘাড় উঁকিঝুকি দিয়ে দেখছি সামনের সিএনজিটার সামনে কিছুটা জায়গা আছে কিনা, তাহলে তো আরেকটু আগানো যায়।

তখনই পাশের রিকশায় প্রেমিক ছেলেটার মিষ্টি কথায় সে চিন্তা বাদ দিলাম। "এই চলনা কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি" – বান্ধবীকে বলছিলো ছেলেটা। "কি! তোমার কি মাথা খারাপ নাকি?? বাসায় না বলে ঘুরতে বের হয়েছি দেখে ভাবছো কক্সবাজারও চলে যাবো?? আমার কি বাপ মা নাই নাকি?" প্রেমিকার উত্তরে আমিও কিছুটা উৎসাহী। মধুর ঘ্রাণ পেলে যা হয় আর কি। তবে এরপর ছেলেটার উত্তর বেশ ভালোই লাগলো শুনে। " আরেহ, যাবোতো প্লেনে! তুমি চাইলে সকালের ফ্লাইটে যেয়েই বিকেলে ফিরবো। বিমানের ফ্লাইটে নতুন ভাড়া মাত্র ২৭০০ টাকাতো!!"

হ্যাঁ, এরপর কখনো বিমানে না চড়া প্রেমিকার রাজী হয়েছিলো কিনা জানিনা। তবে, এই যুগলের মতো অনেকের সকালে চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজার যেয়ে বিকেলে ফেরার পরিকল্পনা সফল হবে কিনা সে নিশ্চয়তা বিমান কখনোই কি দিতে পারে কিনা জানা নেই।

রোববার বিকেলে ঘটা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটের উদ্বোধন করলেন। এ রুটে বিমানের ভাড়ায় আনা দুটো ড্যাশ এইট কিউ- ৪০০ চলবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বললেনও এই বিমানগুলো নিয়ে তাঁর আশার কথা। তিনি বেশ আদর করেই এগুলোর নাম দিয়েছেন,  একটি মেঘদূত আরেকটি ময়ুরপঙ্খী। বিমানের আগের ক্র্যাফটগুলোর নামও তিনিই দিয়েছিলেন। এমনকি বিমান কর্তাদের অনেকটা অনুরোধের সুরেই বলেছিলেন জাহাজগুলোর ভেতরে যেন এ নামগুলো লেখা থাকে, তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চিনবেন তিনি কোনটাতে চড়লেন।

প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরদিন ৬ এপ্রিল, সোমবার বিমান দুটোর বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট শুরু করার কথা ছিলো। কিন্তু বিমান বলে কথা! সময় মতো যেতে পারলোনা একটিও। যাত্রী তোলার পরেই নাকি সে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়লো। এমনকি একটি ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন দেশের বিমানমন্ত্রীও। বিভিন্ন বিমানবন্দরে নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন ফ্লাইট রিসিভ করতে। কিন্তু ঘটনা হলো, ফ্লাইটের আগের দিনই ট্যাক্সিওয়েতে এই ত্রুটি ধরা পড়েছিলো। তবে সেদিন কেন এগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হলোনা?

হ্যাঁ, নেয়া হলোনা কেননা তাহলে অনেকের স্বার্থ হানি হত। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা যেন অভ্যন্তরীন ফ্লাইট চালু না করে সেজন্য রাশেদ খান মেনন পর্যন্তও গিয়েছিলেন বেসরকারী এভিয়েশন মালিকরা। বন্ধ যখন করা গেলোইনা, সেই পুরোনো কাসুন্দিই তখন ব্যবহার করতে চাইলো সে মালিকেরা। বিমানের পঁচে যাওয়া ইমেজটাকে আবারো সামনে এনে ধরলো, এবং সেটা প্রথম ফ্লাইটেই, যখন সবার চোখ বিশেষ করে মিডীয়ার চোখ ওই বিমানের পাখাগুলোয়। এতো গেলো সহজ হিসেব। আপনার যদি পয়সা থাকে আপনি কেন সস্তার দিকে নজর দেবেন? আর বেসরকারী ওলাদের সব কাস্টমার দরকার নেই। কিন্তু যাদের দরকার সেই বিমান আমলাদের তারা ঠিকই হাত কোরে নিয়েছেন যাতে এ স্যাবোটাজগুলো ঘটানো যায়।

আবারো ফিরে আসি ওই প্রেমিক যুগলের কাছে। তাদের মত যাদের উড়ু উড়ু মনটা চায় প্রথমবারের মত বিমানের পাখায় ভর করে আকাশ ছোঁয়ার, রাতে স্ত্রীর উষ্ণ ছোঁয়া নিয়ে ভোরের ফ্লাইটে সৈয়দপুর যেয়ে অফিস করার, তাদের বোধ হয় সে স্বপ্ন এখনই পূরণের নয়।।

"জয়তু প্রাইভেট"