মোবাইল কোর্ট সংক্রান্ত জরিপ আমাদের কী ধারণা দেয়?

নাজমুল ইসলাম
Published : 3 August 2015, 07:33 PM
Updated : 3 August 2015, 07:33 PM

গত ২৯ জুলাই ২০১৫ বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান পত্রিকা মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্পর্কে একটি অনলাইন জরিপ চালিয়েছে। অনলাইনে তাদের প্রশ্ন ছিলঃ  জেলা প্রশাসকদের ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর দাবি সমর্থন করেন কি? সর্বমোট ভোট দিয়েছেন ৩,২২৬ জন। এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন ১,৯১২ জন। আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ১২৬০ জন। শতকরা হিসেবে এই হার পক্ষে ৫৯.২৭ শতাংশ আর বিপক্ষে ৩৯.০৬ শতাংশ। ১.৬৭ শতাংশ কোন মন্তব্য করেননি।

মূলত এই বছরের জেলা প্রশাসক সম্মেলন চলাকালীন পত্রিকাটিতে এই ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছিল বলে ধরে নেওয়া যায়। যদিও জেলা প্রশাসকগণ এ বছর বিচার সংক্রান্ত কোন দাবিদাওয়া জানিয়েছেন বলে কোন সংবাদ পত্রিকায় আসেনি। তার চেয়ে বরং প্রতি বছরের মত এবারেও জেলা প্রশাসকগন জেলার উন্নয়ন নিয়ে নানা কথা বলেছেন। তাদের দাবিদাওয়াগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ দাবিই ছিল শিক্ষা সংক্রান্ত। যেমনটি তারা প্রতি বছর করে থাকেন। যার প্রেক্ষিতে ২১টি বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ডিসিদের শুধু সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নয়, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবেও কাজ করতে বলেন।

মোবাইল কোর্ট সংক্রান্ত নানা ইস্যু নিয়ে গণমাধ্যমের জরিপ নতুন নয়। নানা সময়েই নানা ইস্যুতে জরিপ চালানো হয়েছে। গত জুন মাসে যখন মোবাইল কোর্ট আইন সংশোধন প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে তখন দেশের একাধিক পত্রিকা এই সংক্রান্ত জরিপ চালিয়েছিল। বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম বাংলা এবং ইংলিশ উভয় মাধ্যমেই এ সংক্রান্ত জরিপ চালিয়েছিল। ২২ জুন পরিচালিত জরিপে বিডিনিউজের প্রশ্নটি ছিলঃ মোবাইল কোর্ট আইন সংশোধন করে স্বীকারোক্তি না মিললেও সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনা করে শাস্তি দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আপনি কি তা সমর্থন করেন?। এর পক্ষে ভোট পড়েছিল ৭১ শতাংশ আর বিপক্ষে ভোট পড়েছিল ২৯ শতাংশ। ইংরেজি ভার্সনে পক্ষে সমর্থনের হার ছিল আশি শতাংশের উপর।

অপর একটি দৈনিকের জরিপের প্রশ্ন ছিলঃ অপরাধি দোষ স্বীকার না করলেও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচিনা করে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা ভ্রাম্যমাণ আদালতকে দেওয়া উচিত হয়েছে বলে মনে করেন কি? সর্বমোট ৫,১২২ জন তাদের ভোট প্রদান করেন। এর মধে ৬৩.৫৫ শতাংশ প্রস্তাবটির পক্ষে তাদের সমর্থন জানান। বিপক্ষে ভোট দেন ৩৪.৮৭ শতাংশ।

প্রশ্ন হচ্ছে মোবাইল কোর্টের পক্ষে সাধারণ মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থান এবং সমর্থন কেন? এর উত্তর খোঁজা খুব কঠিন কাজ নয়। গত কয়েক বছর যাবত নানা সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় মোবাইল কোর্টের অব্যাহত সাফল্য, মোবাইল কোর্টের প্রতি সাধারণ মানুষের এই সমর্থনের মূল কারণ। ইভ টিজিং বন্ধে, মাদকের বিস্তার রোধে, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে, ভোক্তা অধিকার রক্ষা্‌, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় মোবাইল কোর্ট তার সফলতা দেখিয়েছে।

ভেজালবিরোধি অভিযানের কারণেই গত বছরের তুলনায় এবার আমে ফরমালিন মেশানোর পরিমান প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। চলতি বছর এ ফলটির চেহারা বেশ বদলে গিয়েছিল। সাধারণত আমে কার্বাইড ব্যবহার করা হলে ফলের চেহারা দেখতে লাল টুকটুকে হয়। কিন্তু এ বছর বাজারে রাজশাহীর যে আম বিক্রি হয়েছে বা হচ্ছে সেগুলো দেখতে হালকা হলুদ বা হালকা লাল রঙের। যা মোবাইল কোর্টের তৎপরতার কারনেই সম্ভব হয়েছিলো। এই প্রথমবারের মতো রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। এই সময়ে মোবাইল কোর্টের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো; বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো শহরগুলোতে। বিডিনিউজ শিরোনাম করেছিল 'কাঁচা মরিচের ঝাল কমল অভিযানে'।

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার মানুষকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে 'আলোকিত মানুষ চাই' এই স্লোগান নিয়ে চালু করেন ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। যা আজ বাংলাদেশের অনন্য দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। যা মানুষের দ্বারে দ্বারে বিতরণ করে চলেছেন জ্ঞানের আলো। তেমনি ন্যায় বিচারের ঝাণ্ডা হাতে করে এদেশে সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে কাজ করে চলেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গণ মানুষ সংশ্লিষ্টতা এদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মূল শক্তি সে কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। জরিপে সেই অনুভুতি প্রতিফলিত হওয়া আশ্চর্য বিষয় নয়।