পুকুর ধারে

নীল মনি
Published : 25 August 2015, 09:04 AM
Updated : 25 August 2015, 09:04 AM

পুকুরধারের চারপাশ টা গাছে ঢাকা ছিল।কি রকম সে গাছ গুলো না বললেই নয়।প্রতিটি গাছ এক সাথে বেড়ে উঠেছে,যেন একই মায়ের পেটে জন্ম নিয়েছে,যার শাখা-পল্লব অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো। বছরের অন্য সময় গাছগুলো অতো চোখে পড়ে না। কিংবা বলা যায়, আলাদাভাবে দৃশ্যমান হয় না।গাছ গুলো একই রকম দেখতে কিন্ত পার্থক্য আছে অন্যকোথাও।এই গাছ গুলো সবুজের একটা একটা পাতাকে আড়াল করে স্বর্গীয় অনুভুতির পরশ মেখে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছে অগ্নিঝরা লাল,কমলা আর হলুদ ফুলের নেশা লাগানো,মন ভোলানো রূপের হাতছানিতে। এক পলকের দেখায় যে মনে জাগায় অনাবিল শান্তি আর নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতিতে কবি জীবনানন্দ বলেছিলেন-
'তারপর সাদা মাটির কঙ্কালের ভিতর নিজের হূদয়কে নিয়ে মৌমাছির মতো নিমগ্ন হয়ে আছে দেখি, কিন্তু তবুও তারপর কৃষ্ণচূড়ার গায়ে নখ আঁচড়াচ্ছে, সারাদিন সূর্যের পিছনে চলেছে সে। একবার তাকে দেখা যায়, একবার হারিয়ে যায় কোথায়'।

এই পুকুরঘাটের অস্তিত্ব দূর থেকে অনুমান ককরা যায়না।ছায়াঘেরা পুকুরের দিকে তাকাতে হলে প্রথমে চোখে পড়ে লাল তারপর হলুদ আর তারপর কমলা ফুল।কেউ হয়তো শখের বশে একই ফুল এক ভিন্ন রঙের করে লাগিয়েছে।এই গাছের ফুল গুলো দূর থেকে যতটা নেশা ধরিয়ে দেয় কাছ থেকে ততটা নয়।তাই দূর থেকে ই দেখি বসে বসে শান বাঁধানো পুকুরঘাটে।
এই ফুল আমার কাছে আসে গ্রীষ্মেকালের রূপের রাজকন্যা হয়ে,বছরের অন্য সময়ের চেয়ে এই সময় তার রূপের আগুন থেকে ঝলসে ঠিকরে ঝরে ঝরে পড়ে,পুকুরের স্নিগ্ধ জলে।গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল পুষ্প মুঞ্জরীতে,ফুল থেকে খসে পড়া পাপড়িঁগুলো বিছিয়ে দেয় কোমল পরশে পুরো পুকুরের জলে,এ ধার থেকে ওধারে ফুলের শয্যা।এ ফুল সবাই চিনে,কিন্তু সময় করে কজন মানুষ আমার মত বসে বসে তার রূপের সুধায় নিজেকে প্লাবিত করে।এ সেই ফুল যার তলায় প্রিয়ের মুগ্ধতার স্বীকার করা হয়। এ ফুলের নাম গুলমোহর যার অন্য একটা পরিচিত নাম আছে।এই ফুল নিয়েই তাই আপন মনে বেজে ওঠে কবিগুরুর গান, 'গন্ধে উদাস হাওয়ার মত উড়ে তোমার উত্তরী, কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জুরী'।

শান বাঁধানো পুকুর ঘাট।যে ঘাটে এখনো আমি আসি।শুনেছি সেও আসে।মৃত শরীরের আত্মা কি কভু ফিরে আসে?এই জলের মাঝে ফুলের পাপড়িঁগুলো একা একাই ভেসে চলে নাকি ফুলের রক্তিম আভায় কারো আত্মা জীবিত হয়ে ওঠে।?সে আত্মা হয়তো অক্লান্ত পথের পথিক,ভালোবেসে যার রঙ দুহাতে মেখে কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জুরী হয়ে আবার ফিরে আসে বাংলার নীল আকাশে।আমি চেয়ে থাকি একমনে পুকুরঘাটে একলা বসে পথচেয়ে, সে আসবে লাল কৃষ্ণচূড়ার ফুলে নিজেকে ঢেকে,সে আসবেই।