মাননীয় ধর্মমন্ত্রীঃ আপনারই ধর্মদ্রোহী ও নাস্তিকের পার্থক্য বুঝিয়ে হুজুর-আলেমদের সাথে আপোস করার সময় এসেছে।

আহমেদ শামীম
Published : 25 Feb 2013, 07:04 PM
Updated : 25 Feb 2013, 07:04 PM

মাননীয় ধর্মমন্ত্রীর কাছে নিবেদন—

১) ধর্ম সম্পর্কে আমার কিঞ্চিৎ জ্ঞানের আলোকে দুটি সংজ্ঞা দিচ্ছি।

নাস্তিকঃ যে কোন ধর্ম মানে না কিন্তু কোন ধর্ম সম্পর্কে কটুক্তিও করে না। তাদের জীবন যাপন যেমনই হোক, তারা তাদের মতন থাকে ও কোন ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত হানে না। নব-ধারার নাস্তিকতাই এটা।

ধর্মদ্রোহীঃ যে ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করে, বিকৃত করে, নিজের স্বার্থে যেমন ইচ্ছা তেমন কাজে লাগায়, কারও ধর্মবিশ্বাসে সম্মান দেখানোর চাইতে নিজের কথাই যেন ধর্ম- এটা বলে চালায়, যে কোন ধর্ম-গোত্রের আশ্রয়ে ধর্মীয় নাম নিয়ে স্ব-গোত্রের ধর্ম বা অন্য-গোত্রের ধর্মে সংশয়বাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে, দেশে দাঙ্গা হাঙ্গামা বাধায়, ধর্মগ্রন্থ পোড়ায় বা অবমাননা করে, ধর্মের নামে হত্যা করে, ধর্ম বিশ্বাসকে পুঁজি করে ব্ল্যাকমেইল করে, ধর্ম ও বিশ্বাসের উপর বিতর্কিত কথা বলে স্বস্তা জনপ্রিয়তার চেষ্টা চালায় এরাই ধর্মদ্রোহী।

ধর্মদ্রোহীরা নাস্তিক নন, নাস্তিকেরা ধর্মদ্রোহী নন। একসময় নাস্তিক মানেই কিন্তু ধর্মদ্রোহী ছিল কিন্তু এখন সাইনটোলজি ধর্ম আছে যাকে নাস্তিকদের ধর্ম বলা যায় যেটা ঈশ্বর মানে না কিন্তু অন্য কোন ধর্মকে কটুক্তি করে না বা অন্য যে কোন ধর্মকে বিকৃত করে না।

তাহলে ভেবে দেখুন – জনগণ কিন্তু ঠিক পথেই হাঁটছে। তারা একবারও বলে নাই যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই না। যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সবাই একমত। জামাত ইসলামের ধর্মদ্রোহীতা মানে না বলেই কিন্তু যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চায়। আরেকটু এগিয়ে বললেও – ধর্ম নিয়ে বিকৃতি করা ও ধর্মকে নিজের ক্ষমতা দখলের টুলবক্স হিসেবে ব্যাবহার করার কারণেই বাংলাদেশের জনগণ জামাত ইসলাম নিষিদ্ধ চায়। ঠিক একইভাবে চিহ্নিত কিছু ব্লগার যারা ইন্টারনেটে ইচ্ছামত ধর্মদ্রোহীতা করে বেড়াতো তাদেরকে মানুষ সহ্য করছে না, আর করবেও না। তারমানে দাঁড়ায় বাংলার মানুষ – দেশের সম্মান যেমন রক্ষা চায়, একইভাবে ধর্মের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিবাদী হয়।

২) কিন্তু ধর্মদ্রোহীরা পাবলিক সেন্টিমেন্টকে এমনভাবে কাজে লাগায় যাতে আন্দোলন বিভ্রান্ত হয়ে ওঠে। রাজীবের গায়ে ধারাল অস্ত্রের আঘাত যেমন মানুষের জোরাল প্রতিবাদ হয়, তেমনি পতাকা দু'টুকরো করাও মানুষের মনে সমান আলোড়ন করে। এই দুটো কথাকে এক করলে এটাই দাঁড়ায় – ধর্মদ্রোহীতাকে বাঙ্গালী জাতি কখনো প্রশ্রয় দেয় না – না জামাতিকে না এন্টি-ইসলামীকে। আমার তো মনে হয় এই জামাতি ও এন্টি-ইসলামী এরা একই কিন্তু একই পয়সার এ-পিঠ ও-পিঠ, উদ্দেশ্য এক – কিন্তু পন্থা আরেক।

৩) এবার আরও স্পষ্ট করে বুঝা যায় – জামাতি ও এন্টি-ইসলামী শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মকে আঘাত করছে; কুফরী, শিরক, ও মুনাফেকী করছে। তাহলে তাদের বিচার ইসলামের জবাব অনুসারেই হওয়া উচিত। যদি ইসলামের উপর আঘাত না হত তাহলে ইসলামী নিয়মের কথা আসত না।

আগে বলে নিচ্ছি – যারা এই ব্লগ পড়ছেন – পবিত্র কোরআন পড়ে যদি উত্তেজিত হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে যান তাহলে বুঝবেন আপনাকে শয়তানে কু-বুদ্ধি দিচ্ছে আর ধৈর্য্যহারা করছে – কেননা আপনি উত্তেজিত হয়ে কিছু অপকর্ম করে ফেলেন ইসলামের নামে তাতে কিন্তু আপনারই ক্ষতি আর শয়তানের লাভ। তাই ধৈর্য্য সহকারে পড়ুন আর বুঝার চেষ্টা করুন। রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। মনে প্রাণে বিশ্বাস রাখবেন ইসলাম শান্তির ধর্ম আর ইসলাম মানেই হল আল্লাহর কাছে নিজকে সমর্পণ।

এবার দেখি নাস্তিকের ব্যাপারে ইসলামের কঠোর নিয়ম।

সুরা আল-মায়েদা
৩৩। যারা আল্লাহ্ ও তার রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্যে পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।
৩৪। কিন্তু যারা তোমাদের গ্রেফতারের পূর্বে তওবা করে; জেনে রাখ, আল্লাহ্ ক্ষমাকারী, দয়ালু।

(একটা আয়াত কিন্তু সম্পুর্ণ ইসলাম নয় যখন পড়বেন আগের ১০ আয়াত আর পরের ১০ আয়াত পড়বেন – অন্ততঃ আপনার স্বচ্ছতার জন্য।)

উপরের আয়াতে আমরা বুঝতে পারি ধর্মদ্রোহীদের কি কি শাস্তি হওয়া উচিত। তবে তা গ্রেফতার করার পরে, আগে কিন্তু নয়। ধারাবাহিকভাবে শাস্তিগুলো যা দাঁড়ায়ঃ

ক) হত্যা – আমি বলব যদি ধর্মদ্রোহী দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ হয়, তখন এমন সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। তবে তা আইন ও বিচার বিভাগের দায়িত্ব, নাহলে দেশের সার্বভৌমত্ব ঠিক থাকবে না। যে যার মত হত্যা করলে উল্টো সবাই ধর্মদ্রোহী হয়ে যাবে। সুনির্দিষ্ট কারণে বিচার করে ইতিহাসে বড় বড় ধর্মদ্রোহীদের ফাঁসি দেয়া যায়। তবে বাংলাদেশের এমন অবস্থা আসে নি যে মানুষের আইন নিজের হাতে তুলে নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ কোরান ও বাংলাদেশের সংবিধানের উপর আস্থাশীল।
খ) শূলীতে চড়ানো – মধ্যযুগীয় বিচার। এটাও দেয়া যায় যারা নৃশংস ধর্মদ্রোহী যারা বেঁচে থাকলে ইসলাম ধর্মের সত্যিকারে ক্ষতি করতে পারবে। আমার মনে হয় কোরান পোড়ায় এমন ধর্মদ্রোহীদের এই শাস্তি উপযোগী।
গ) হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া – এটাও কঠোর বিচার – পঙ্গু করে বাঁচিয়ে রাখা। এটা হতে পারে যারা ইসলামের হুমকিস্বরূপ কিন্তু এত শক্তিশালী নয়। আমার মনে হয় এন্টি-ইসলাম ছবি যারা বানায় তাদেরকে এর আওতায় রাখা যায়।
ঘ) দেশ হতে বহিস্কার – এটা যেখানে সংখ্যা গরিষ্ঠ ক্ষমতাবান মুসলিম সমাজ আছে তারাই এ সিদ্ধান্তে যেতে পারে। এর আগেও এদেশে এভাবে ধর্মদ্রোহীদের বহিস্কার করা হয়েছে। জামাতিদের পাকিস্থান চলে যেতে এই বাংলার মানুষ বলে এই কারণে, ঠিক একইভাবে আমিও বলবো যারা এন্টি-ইসলাম করে তারাও চলে যাক তাদেরকে যে দেশ বরণ করে নেবে। এই দেশে থাকার অধিকার এরা উভয়ই হারিয়েছে।
ঙ) গ্রেফতার করার পুর্বে তওবার সুযোগ – সব মিলিয়ে মনে রাখবেন আল্লাহ নিজে ক্ষমাশীল ও দয়ালু – আর তাই আমরাও ক্ষমা ও দয়া দেখাই তা আল্লাহ পাক নিজেই পছন্দ করেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে ক্ষমা ও দয়া দেখাতে গিয়ে আমরা নিজেরাই সীমালংঘন করে ফেলছি কিনা। তাই প্রথমে গ্রেফতার।

৪) শুনেছি বাংলাদেশে নাকি ব্লাশফেমীর উপর আইন নাই, তাহলে অনতিবিলম্বে ইসলামের জন্য কোরআনের আলোকে বিষয়টি নিয়ে একটা আইন পাস করতে হবে।

এবার আসুন কিভাবে এক ধর্মদ্রোহীর বিচার করা যেতে পারে।

প্রথমতঃ চিহ্নিত করুন ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিন যে সে আসলেই ধর্মদ্রোহী কিনা। দেশে এ সময় এত প্রমাণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার উদাহরণ টানলেই হবে, যেমনঃ হুজুর (সাঃ) কে মোটাপেট বলে ব্লগ লেখা, ফটোশপের কারসাজিতে নামাজ নিয়ে অপপ্রচার চালানো, মাজারে সিজদায় বাধ্য করানো, গ্রেফতার না করেই নাস্তিক প্রমাণ না করেই হত্যা করা, পবিত্র ক্বাবা শরীফের ছবির পাশে পর্ণস্টারের ছবির সহাবস্থান করানো – ইত্যাদি দ্বারা ধর্মদ্রোহীতা প্রমাণ পায়।

দ্বিতীয়তঃ গ্রেফতার করুন আর বিনয়ী হয়ে কথা বলুন। কারণ আপনি তাকে কুকুর বলে গালি দিয়ে তাকে নিজেই কামড়ান তাহলে আপনার আর কুকুরের পার্থক্য কি থাকল? মনে রাখবেন – আপনি ঈমানদার হলে আপনি সুস্থ, কিন্তু একজন ধর্মদ্রোহী অবশ্যই মানসিকভাবে অসুস্থ, তাই অসুস্থকে সুস্থ হবার সুযোগ দিন। জিজ্ঞেস করুন – কিসের তাড়ণায় সে ধর্মদ্রোহী? সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে কিনা আর তওবা করবে কিনা? মানুষজন সাক্ষী করে তওবা করলে স্টাম্প পাতায় লিখে দেবে যে – সে তার ভুল বুঝেছে আর কখনও নিজের বা অন্য ধর্মের বিরোধীতা করবে না। তার মৃত্যুর পর যেন – সে যে ধর্মের পরিচয় দেয় – সে প্রথা অনুসারে শেষকৃত্য করা হয়। আর আবার যদি ধর্ম বিরোধীতার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাকে (ঘ) দেশ থেকে বহিস্কার করা হবে।
আবার যদি ধর্ম বিরোধীতার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে (গ) হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে।
এরপরও যদি ধর্মদ্রোহীতার প্রমাণ মেলে তাহলে (খ) তাকে শূলে চড়ানো হবে।
এই শূলে চড়ানো মানেই মৃত্যু হবার কথা তবে তারপরও বেঁচে থাকলে (ক) হত্যা করতে হবে।

যে তওবা করবে না তাকেও স্টাম্প সাইন করে সাক্ষীদের সামনে অঙ্গীকার করতে হবে, যে তাকে (ঘ) বহিস্কার করা হল ধর্মদ্রোহীতার জন্য। দেশ বহিস্কারের পরে তার মনে তওবার ইচ্ছা হলে তা সে করতে পারবে কিন্তু নিজ গোত্রে যেতে পারবে না – এটার কারণ হল সুরা মায়েদার মতে পার্থ্বিব লাঞ্ছণা; তাকে তওবার পর গোত্রে ফেরালে আর লাঞ্ছণার গুরুত্ব থাকে না। তাকে এটা লিখে যেতে হবে যে তার মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্যের ভার ইসলাম ছাড়া আর কোন ধর্ম নেবে কিনা। ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম শেষকৃত্যের দায় নিলে তবে সেই ধর্মের ধর্মযাজকের সাক্ষ্য লাগবে, আর দায় না নিলে অন্য কোন উপায় থাকলে জানিয়ে দেবে। দেশ থেকে বহিস্কারের পর আবার যদি ধর্ম বিরোধীতার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে (গ) হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে।
এরপরও যদি ধর্মদ্রোহীতার প্রমাণ মেলে তাহলে (খ) তাকে শূলে চড়ানো হবে।
এই শূলে চড়ানো মানেই মৃত্যু হবার কথা তবে তারপরও বেঁচে থাকলে (ক) হত্যা করতে হবে।

তাহলে এই আয়াতে প্রমাণ হল ইসলাম কতবার সুযোগ দিল একটা ধর্মদ্রোহীকে তার তওবা করার জন্য। মনে রাখবেন এটা কিন্তু ধর্মদ্রোহীদের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী, খ্রীস্টান, জৈন, শিখ, আরও অন্যান্য ধর্ম, এমনকি নাস্তিক ও সাইন্টোলজিস্টদের জন্য এটা কোনভাবেই প্রযোজ্য না। এটা এদেশে এই মুহুর্তে দুটি গোত্রের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে – জামাতি ও এন্টি-ইসলামী।

৫) আমাদের দেশের হুজুরেরা সবাই জামাতি নন। হুজুররা মাননীয় ধর্ম মন্ত্রীর কথা শুনবেন। যদ্দুর জানি হুজুরেরা যুদ্ধাপরাধীর বিচার চান, কিন্তু ধর্মদ্রোহীতা সহ্য করার নয়। হুজুরেরা বাংলাদেশের জাতীয়তা বিরোধীও নন। তাই সম্মানিত হুজুরদের এক করে একটা মহা সম্মেলন করতে হবে। হুজুরেরা ব্লগারদের চেনেন না, অনেক হুজুরেরা জানেন না বেশীর ভাগ ব্লগাররা কি নিয়ে লেখেন। বোখারী শরীফের বাংলা ভার্সন যা ইন্টারনেটে ছিল না – তা যারা কষ্ট করে করেছেন, তারাও ব্লগার। কোরআনের বিভিন্ন আয়াত নিয়ে আলোচণা – দেশের ভাল খারাপ অবস্থা নিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলা শুরু করেছে ব্লগাররা। একটা ই-পত্রিকা চালাতে ব্লগারদের বিকল্প কেউ নেই। দেশের প্রযুক্তি উন্নয়নে ব্লগারদের অবতারণা – এটা কখনই ধর্মদ্রোহীতার ক্ষেত্র নয় তা হুজুরদের খোলামেলাভাবে বোঝানো উচিত। আর এই গুরু দায়িত্ব দেশের এই পরিস্থিতিতে একমাত্র ধর্মমন্ত্রীকেই নিতে হবে।
• হুজুরদের সাথে আহ্বান করে লম্বা সময় নিয়ে ব্লগার ও হুজুরদের সম্মেলন করানো যায়।
• হুজুরেরা কি চান- কি চান না তা জেনে নেয়া যায়।
• সব ব্লগার ধর্মদ্রোহী না – নাস্তিক না এটা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে হুজুরদের সাথে ব্লগারদের দুরত্ব কমিয়ে আনতে হবে।
• হুজুরেরা যুদ্ধাপরাধী বিচারে এক – এবং ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও এক; একইভাবে ব্লগাররা যুদ্ধাপরাধী বিচারে এক এবং ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এক – এই পয়েন্টে সমন্বয় করতে হবে।
• সব মিলিয়ে দেশে সুশাসন বহাল আছে তা এই এক সম্মেলনে নিশ্চিত হয়ে যাবে।

৬) মনে রাখতে হবে –
• আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না – তাই ধর্মের নামে হত্যা করা যাবে না। আইনের বাইরে ধর্মের নামে হত্যা করাটাও ধর্মদ্রোহীতাই ধরা হবে।
পবিত্র কোরআনের আলোকে বলি –
সুরা আল মায়েদা
২৭। আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনান। যখন তারা উভয়েই কিছু উৎসর্গ নিবেদন করেছিল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনের গৃহীত হয়নি। সে (কাবিল) বলল: আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। সে (হাবিল) বলল: আল্লাহ্ ধর্মভীরুদের পক্ষ থেকেই তো গ্রহন করেন।
২৮। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবে আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার দিকে হস্ত প্রসারিত করব না। কেননা, আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।
২৯। আমি চাই যে, আমার পাপ ও তোমার পাপ তুমি নিজের মাথায় চাপিয়ে নাও। অতঃপর তুমি দোজখীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এটাই অত্যাচারীদের শাস্তি।
৩০। অতঃপর তার অন্তর তাকে ভ্রাতৃহত্যায় উদ্বুদ্ধ করল। অনন্তর সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।

বুঝে নিন নির্বিচারে হত্যা মানেই হল মৃত ব্যাক্তির গুনাহ নিজের মাথায় নেয়া আর মৃতকে আল্লাহর কাছে নির্দোষ করে দেয়া। যদি হাবিল নাস্তিক বা ধর্মদ্রোহী হত (যদিও তিনি তা নন), তাহলে কাবিলের এই নির্বিচারে হত্যার কারণে হাবিলের ধর্মদ্রোহীতা ও নাস্তিকতার গুনাহ কাবিলের মাথায় পড়ে। ঠিক একইভাবে ক'দিন আগে খুন হওয়া ব্লগারকেও এইভাবে নিষ্পাপ করে দেবার সুযোগ করে দিল হত্যাকারীরা ধর্মের নামে ধর্মকে কলংকিত করে। তবে যেহেতু এই এই এন্টি-ইসলামী যেদিন খুন হয় সেদিন জামাতিদের প্রবল আগ্রহে তাকে ধর্মদ্রোহী প্রমাণ করার যে প্রতিযোগীতা দেখেছি তা থেকে বোঝা যায় এই জামাতিরাই তার হত্যার দায় এর সাথে সাথে তার নাস্তিকতা ও ধর্মদ্রোহীতার সমস্ত গুনাহ মাথায় নিয়ে নিল।
হত্যার পূর্বে গ্রেফতার করাটা আবশ্যক ছিল। দেশে আইন শৃংখলাকে সম্মান জানানো উচিত ছিল। সে ধর্মদ্রোহী মানলাম, কিন্তু ৯০% মুসলিম দেশে সে কোন এটম বোমা ছিল না যে তাকে গ্রেফতার করে তওবা করার সুযোগ দেয়া যাবে না। অতএব এ হত্যাকান্ড নির্বিচারে ধর্মের নামে ধর্মদ্রোহীতাই করা হল আর এর পক্ষে পবিত্র কোরআন জেনে শুনে যতজন কথা বলবে তাদের সকলকে ধর্মদ্রোহীতার দায় মাথায় নিতেই হবে। কেননা নির্বিচারে হত্যাই হল কবিরাহ গুনাহ ও কুফরী।
• ধর্মকে রাস্ট্রের দাবির সাথে এক করা যাবে না। যুদ্ধাপরাধীর বিচার যে ইস্যু – ধর্মদ্রোহীতা সে বিষয় নয়। ধর্মদ্রোহীতার বিষয় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যুদ্ধাপরাধের আন্দোলনকে নস্যাৎ করলে নিজের অস্তিত্বের আধিকার হারাতে হবে। আবার যুদ্ধাপরাধের বিচারের পাশাপাশি ধর্মদ্রোহীতার বিষয়টা অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত আনা হবে। জনগণকে পরিস্কারভাবে বুঝতে হবে এখানে দুটো আলাদা আলাদা অধিকারের কথা এসেছে
১) যুদ্ধাপরাধের বিচার ও ২) ধর্মদ্রোহীদের নিষিদ্ধকরণ
প্রথমটি মূল ইস্যু ও সময় সাপেক্ষ।
দ্বিতীয়টি সময়ের দাবি ও দ্রুত সমাধানযোগ্য। এতে করে যেমন এন্টি-ইসলাম নিষিদ্ধ হয় একই ভাবে জামাত-শিবিরকেও ব্যান করা যায়। আর আমার মনে হয় জনতা ঠিক পথেই আছে।
• আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হতে হবে, নৃশংসতা ভাংচুর আন্দোলন নয়, এর মানে আন্দোলনে হেরে যাওয়া। আগেই বলেছি রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। তাই যে কোন ক্ষতি করাটা আন্দোলন নয় – ওটা জুলুম। আর জালিমদের শাস্তি কতটা ভয়ংকর তা আপনারা বুঝে নেবেন। আপনি মুসলমান হলে জুলুম করা আপনার জন্য যায়েজ নয়, বরং আপনার পুরস্কার আল্লাহ তা'আলা আপনি যাকে জুলুম করেছেন তাকে দিয়ে দেবেন। আমার তো মনে হয় ক'দিন আগের খুন হওয়া ব্লগারকে বিচারের আওতায় না আনার জন্য আল্লাহ গজব স্বরূপ তার জানাজা পড়ায় দিলেন। কিন্তু আপনারা বিতর্কিত কথা তোলার চাইতে আল্লাহর কাছে মাফ চান যাতে আপনার পবিত্র জানাজার অধিকার যেন আপনার রাগ-জুলুম-ভাংচুর-খুন এর কারণে এমন কারও উপর পুরস্কার হয়ে না যায় যার যোগ্যতা সে রাখে না অথচ যা আপনার প্রাপ্য ছিল ও আপনি যোগ্য ছিলেন। আপনার বিশ্বাস ইসলাম নয়, কোরআন হাদীসের আলোকে যে পথ অনুসরণ করবেন তাই ইসলামের বিশ্বাস। তাই যা আল্লাহর গজব দেখেছেন তা নিয়ে বিতর্ক না করে প্রতি সেকেন্ডে মাফ চান যাতে আল্লাহ তা'আলা আবার নারাজ না হয়ে আরেকটা গজব পতিত করেন। আমি বলছি, যে আল্লাহর গজবের বিষয়ে বিতর্কিত কথা তুলবে তাকে আল্লাহ গজবের আওতায় ফেলবেন, তার চেয়ে এবিষয়ে কথা না তুলে আল্লাহর কাছে মাফ চাই।

৭) মুসলমানদের আন্দোলন যা হওয়া উচিত ছিলঃ
• মুসলমান মাত্রই নির্ভীক – সাহসী, আর সাহসী মানেই শহীদ মিনার ভাংচুর নয়। এতে কোন দাবি আদায় হল না, উল্টো নিজের ভাষা ও দেশকে অপমান করা হল, তার মানে নিজের মা কে অপমান করা হল আর এটা খারাপ লাগলেও বলতে হয়- সেদিন ধর্মদ্রোহীতাই হল – কারণ ইসলামে নিজের মাকে অপমান সমর্থন করে না। তাই বলছিলাম মুসলমানদের মাথা গরম করা মানেই নৈতিকতায় হেরে যাওয়া। আর নৈতিকতায় হেরে গেলে মুসলমানদের আর কিছুই থাকে না, কারণ পুরো ইসলাম ধর্মটাই আল-কোরআন ও আল-হাদিসের নৈতিকতা ও আদর্শে গড়া।
• সেদিন মুসলমানেরা ও হুজুরেরা মিলে আহ্ববান করতে পারতেন – ধর্মদ্রোহীতা যেহেতু আমরা মানি না তাই আমরা আলোচণায় জানাতে চাই। আলোচণা সরাসরি সম্প্রচার চাই, যাতে দেশের সকল মানুষ জানুক হুজুরদের কি দাবি আর ব্লগারদের কি দাবি আর জনতার কি দাবি। অথচ তার উল্টো চিত্র কিন্তু কখনই ইসলাম সমর্থিত নয়। ধৈর্য্য যদি না থাকে তাহলে কখনও সমাধান আসবে না – আর ধৈর্য্য ধারণ না করলে সে কোনদিন মুসলমান হবে না।
• মহানবী (সঃ) এর আদর্শকে সামনে রাখলে কখনও প্রথমে আঘাত করা যাবে না। পারলে আঘাতপ্রাপ্ত হতে হবে। এরপর বারবার আঘাত এলে আঘাত প্রতিহত করার কথা আসে। কিন্তু শাহবাগের আন্দোলনে কোন আঘাত আসেই নি অথচ যারা আঘাত করল তাদের আচরণ কি তখনকার হিংসুক কাফেরদের মত হয়ে গেল না। এটা কি শয়তানের উস্কানি ছিল না। যে কোন মুসলমানের উচিত বিনয়ী হওয়া, কেননা আল্লাহ অহংকারকারীদের পছন্দ করেন না। তাই আপনার শক্তি আছে তাই আপনি গুড়িয়ে দেবার হুমকি দেখানে আপনার শক্তি কিন্তু মহান আল্লাহ তা'আলা একটা পিঁপড়াত চেয়ে কম করে দিতে পারেন। যদি আমার একথা বিশ্বাস করেন তবে নিজের পেশী শক্তির চেয়ে ঈমানি শক্তিতে বেশী বিশ্বাস রাখুন। মনে রাখবেন হিংসা হিংসাই বয়ে আনে, কিন্তু ভালবাসা হিংসাকে লজ্জা দেয়। তাই শাহবাগের আন্দোলনের বিপক্ষে যারা হিংসার বশবর্তী হয়ে নৃশংসতা চালালেন তারা নিশ্চয়ই লজ্জিত হয়েছেন, তা নাহলে টিভি ক্যামেরার সামনে শাহবাগের আন্দোলনকারীরা যেভাবে তাদের নির্মল উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, সেখানে কিন্তু আপনি টিভি ক্যামেরা দেখলে মুখ লুকাবেন – কিভাবে বলবেন "আমি শহীদ মিনার ভেঙ্গেছি বেশ করেছি, ইসলামের নামে দেশের পতাকা পুড়িয়েছি ভাল করেছি। "
• মহানবী (সঃ) এর হিজরত মনে আছে? তিনি মক্কা ছাড়ার সময় মাতৃভূমিকে কি বলেছিল মনে আছে? যদি মনে থাকে তবে বুঝে নিন ইসলামের নামে দোহাই দিয়ে দেশদ্রোহীতা মানেই ধর্মদ্রোহীতা। এই দেশে আপনাকে ইসলাম ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেয়া হয়, আপনার এই স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ১৯৭১ সালে ৩০লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিল, আপনার স্বাধীনতা যারা নিশ্চিত করে চলে গেছেন তাদের জন্য আপনি কি করেছেন? তাদের বিরোধিতা? আপনি কি মনে করেন যে বাংলাদেশ না থাকলে আপনি স্বাধীন থাকবেন? আপনার অস্বিত্ব স্বাধীন থাকবে, আপনার পকেটে যে কটা টাকার জোর আপনি দেখান তার কোন মুল্য থাকবে?

তাই বলছি মুসলমান ভাইয়েরা, যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই প্রশ্নে আপোষ নয় আর ধর্মদ্রোহিতা জামাতি ও এন্টি-ইসলাম নিষিদ্ধ প্রশ্নেও আপোষ নয়। তাই বলে একটার সাথে আরেকটা গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়, একটার জন্য আরেকটাকে বানচাল করা ঠিক নয়। এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় মুসলমান হিসেবে হরতাল ভাংচুর নৃশংসতা যাওয়া ঠিক নয়। গ্রেফতারের পূর্বে আইন হাতে তোলা কাম্য নয়। আল্লাহকে নারাজ করে আর কোন গজব আনানো উচিত নয়, তাই মাফ চাই আল্লাহর কাছে প্রতি মুহূর্তে – কোনভাবেই অধৈর্য্য আর অহংকার নয়। আলোচনা ও শান্তিপূর্ণ পথ ব্যাতীত অন্য কোন পথ নয়।

ধর্ম যার যার রাস্ট্র সবার, জামাত – শিবির – চিহ্নিত ধর্মদ্রোহী – রাজাকার – এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়। জয় বাংলা!!

আর মাননীয় ধর্মমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি সুবিবেচনায় নিবেদন করলাম।
ধন্যবাদ।