রক্তে লেখা সেই বাঙলা… আজো হায় বড় একা…!!

নিঝুম
Published : 11 August 2012, 11:55 AM
Updated : 11 August 2012, 11:55 AM

"বড় কষ্ট হয়… বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারিনা। বড় কষ্ট হয় বাবা।" এটা এক বৃদ্ধ লোকের আর্তনাদ। জীবন তাকে ধোঁকা দেয়নি, সুখেই ছিলেন পরিবার পরিজন নিয়ে। হঠাৎ হানা দিল অশুভ ছায়া। ঘুষ খাওয়ার অপরাধে নয়, ঘুষ না খাওয়ার অপরাধে চাকরি হারালেন মোতালেব আলী। জীবন এখানে স্থবির আর নিষ্ঠুর।

রিকশাওয়ালা শহিদুল চাচা আফসোস করে বলেন, "বাবারে চার টাকা ভাড়া দিয়ে তো এক কাপ চা ও খাওয়া যায়না ?? তাকে কিছুই বলতে পারিনা। কখনো দেখি ছোট বার বছরের বাচ্চা ছেলে রিকশার উপর যাত্রীর অপেক্ষায়। তার রিকশাতে উঠতে মন চায়না। পরে ভাবি ক্ষতি কি পেটের দায়ে ভিক্ষা তো করছে না ? যে হাতে খাতা কলম থাকার কথা সেই হাতে তো দশ টাকার নোট গুঁজে দিতে পারব । এর চাইতে বেশি কী ইবা করার ক্ষমতা আছে আমার??

"শিক্ষক মোদের কত শ্রদ্ধেয়, কে বুঝিবে তাহার মান…?? " ছোটবেলার সেই কবিতার সত্যতা চোখে পড়ল এই দেশের পুলিশদের লাঠির আঘাতে জর্জরিত তাদের কান্নাভেজা চোখ দেখে। আমি জানি আমি অপরাধী। আমি চেয়ে থাকি, শুধুই চেয়ে থাকি!!

বুকে ব্যথা বেড়ে যায় যখন দেখি তুচ্ছ কারনে রাস্তায় হত্যা করা হয় আমার ভাইকে। মাথা নিচু হয়ে যায় যখন আশাহত কণ্ঠে শুনি… "ভাই আমার সব চাইতে বড় অপরাধ আমি এই দেশে জন্মেছি !! " আর সইতে পারিনা যখন দেখি এই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানের একজন মৌলভীবাজার এর বড় লেখা উপজেলার সদরুদ্দিন মিয়া একটি সাময়িক মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে বনানীর ফুটপাথে সাহায্যের হাত বাড়ান !! আমি তার হাতে কী দিব ভেবে পাইনা। শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম চাচা ভাল আছেন?

যে মানুষ তার এক পা হারিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে, যে তার জীবনকে বিপন্ন করেছিলো এই দেশের তরে, যে স্বপ্ন দেখেছিলো স্বাধীনতার নতুন কোন সূর্যোদয়ের, কোথায় তাঁর স্বাধীনতা? যে এই দেশকে দিয়েছিল স্বাধীনতা সে পরাধীনই রইল জীবনের কাছে।

হায়রে দেশ !! কবে হবে নতুন সূর্যোদয়? যখন এই দেশে কোন লোক চাকরি হারাবে না অন্যায়ের কাছে ?যেখানে শ্রমিক পাবে ন্যায্যমূল্য? কিশোর পাবে শিক্ষা ? কবে আসবে এমন দিন? কেন অশ্রু ঝরে নির্যাতিত বোনের চোখে? কখন সদরুদ্দিন মিয়া পাবেন তাঁর ন্যায্য সম্মানটুকু? কখন শিক্ষকরা পাবেন তাঁদের মর্যাদা?

আমার দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে, আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারিনা আমি ভালো আছি। কেন এমন হয়? জীবন আমাদের নিয়ে খেলছে নাকি দেশ?
আমি এখন জেগে থাকি নতুন ভোরের আশায়, ঘন অন্ধকার দূর হবে যেথায়। নতুন বাঙলার অপেক্ষায়। যেন আমি বলতে পারি আমি বাঙালি, আমি গর্বিত। আমি গর্বিত আমি বাঙালি………..