ডঃ ইউনূস, সময় এসেছে লেভেল প্লে করার

নীলকন্ঠ
Published : 14 July 2012, 05:50 AM
Updated : 14 July 2012, 05:50 AM

সামরিক শাসকরা ক্ষমতায় আসতে বন্দুকের নল ব্যবহার করেন। অনেকে আবার ভিন্ন পন্থা ও অবলম্বন করেন। প্রথমে কোন একজন বেসামরিক ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসান। পেছন থেকে কলকাঠি নাড়েন। কিছুদিন পর বেসামরিক ব্যক্তিটা কোন এক জরুরী অবস্থায় পড়ে কলকাঠির মালিকের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।মঞ্চ প্রস্তুত করার জন্য অবশ্য আগে থেকেই বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন আমলনামা প্রকাশ হতে থাকে জনগনের সাপোর্ট আদায়ের জন্য।

এধরনের হঠাৎ গজানো সামরিক শাসকরা জনগনকে অনেক স্বপ্ন দেখান। সাময়িক ভালো রাখার জন্য, বৈদেশিক অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর জন্য এরা তলে তলে দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থকে বিদেশীদের হাতে তুলে দেন। ব্যপারটা হলো বিরহ ভুলার জন্য আফিম খাওয়ার মত। আফিমের ঘোর কেটে যাওয়ার পর জনগন আবার যখন ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে হুঁশ ফিরে পায় তখন অবশ্য এই ধরনের শাসকদের গদী উল্টে যায়।এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ স্বীয় যোগ্যতায় জনগনের হৃদয়ে আসন তৈরী করে নেন।

ঠিক এরকম একটা মঞ্চ প্রস্তুতের খেলা আমরা দেখেছি কিছুদিন আগে। জনগনের সাপোর্ট আদায়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক লম্বা লম্বা আমলনামা প্রকাশ, মাইনাস টু ফর্মূলা, দৃশ্যপটে ইউনুসের আগমন, মঈন সাহেবের বিদেশ ভ্রমন ইত্যাদি ইত্যাদি।

ইউনুস সাহেব সম্ভবত প্রথমে বুঝতে পারেননি। রাজনৈতিক মঞ্চে তিনি নেমে পড়েন। পরে যখন বুঝতে পারলেন যে তিনি মাত্র কিছুদিনের জন্য ফ্রন্টলাইনে থাকবেন, আর কিছুদিন পরেই অবশ্যম্ভাবী জরুরী অবস্থায় পড়ে তিনি ক্ষমতা মঈন সাহেবের হাতে দিতে বাধ্য থাকবেন তখনই তিনি বেঁকে বসেন।অথবা তিনি চেয়েছিলেন রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে অন্যান্য দলের মত তিনিও একটা দল গড়বেন। গনতন্ত্রের স্বাভাবিক রীতিতে তিনি টিকে থাকার চেষ্টা করবেন।যাই হোক, তিনি যখন বেঁকে বসলেন তখনই মঈন সাহেবের কলিজা কাঁপা শুরু হয়ে গেল।

ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। ১৫ আগষ্টে বঙ্গবন্ধুর নিথর দেহ যখন ধানমন্ডিতে পড়ে রইল মোশতাক তখন বার বার আয়নার সামনে গিয়ে কোট, টাই, কলার ঠিক করছিলেন। ইউনুস সাহেবের রাজনীতিতে নামা দেখে আওয়ামী লীগ একই ভয় পেল। কালো কোটপরা একদল মোশতাক বাহিনী যেকোন মুহুর্তে ইউনুসের হাতে হাত রেখে শপথ নিল বুঝি!

অতএব, মুহূর্তেই ইউনুস হয়ে গেল সুদখোর, রক্তচোষা ইত্যাদি। যদি রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে সুদ খাওয়া এত অনৈতিক মনে হয় তবে এনজিও গুলোর সুদের হার রাষ্ট্র কর্তৃক নির্দিষ্ট করে দিলেই পারে।তা না করে ইউনুস হটাও শুরু হয়ে গেল। সম্ভবত আওয়ামী লীগ ইউনুসকে এখনো ভয় পায়, ইউনুস যদি রাজনৈতিক মঞ্চে আসেন তবে আওয়ামী লীগ যদি আবার ভাঙ্গে।আমরা দেখলাম, ভাঙ্গার তালিকায় যারা ছিল তারা এবার কেউ মন্ত্রিত্ব পায়নি। বিনিময়ে ইউনুস পেলো আলকাতরা বাহিনী। তারা ইউনুসের গায়ে আলকাতরা লাগিয়েই যাচ্ছে।

পদ্মা সেতুতে পজিটিভ কোন কিছু না হলে আওয়ামী লীগের ভোটে প্রভাব পড়বে। বিশ্বব্যাংক চুক্তি বাতিল করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করবেন। অর্থমন্ত্রী এখনো হাল ছাড়েননি। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত শংকার। এটা তৃতীয় পক্ষকে লেভেল প্লে করার সুযোগ তৈরী করে দিচ্ছে। তৃতীয় পক্ষ (আমার সন্দেহ) সরকারকে মধ্যস্থতাকারীর প্রস্তাব দিতে পারে।

বিশ্বব্যাংকে রাজী করাবে তবে-

ক) বঙ্গোপসাগরে রণতরীর আগমনে সরকার বাধা দিতে পারবেনা।
খ) আগে যেমন গ্যাস রপ্তানির জন্য চাপাচাপি করতো সেই কাজ আবারো
গ) আরো অধিক সংখ্যক কুইক রেন্টাল
ঘ) আমাদের সমুদ্র সীমায় কোন নির্দিষ্ট কোম্পানিকে গ্যাসক্ষেত্রের ইজারা
ঙ) কয়লাখনি গুলোর ইজারা
চ) বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ভ্যাট ট্যাক্স কমিয়ে দেয়া
ছ) ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি
ফলাফল: আমরা হয়তো লোন পাব তবে আরো কিছু দাসত্বের খত দিয়ে। এই লোন তো আবার আমাদেরকেই পরিশোধ করতে হবে।

আর নীচের আজ সকাল ৯ঃ০০ ঘটিকার ডেইলি ষ্টারের স্ক্রিনশটটা দেখুন। এ সংবাদের বিস্তারিত পাওয়া যাচ্ছেনা। জানিনা ভেতরে কী চলতেছে।

ডঃ ইউনূস,
বিশ্বব্যাংক যদি আমাদেরকে লোন আগের শর্তে না দেয় তবে আমরা নিজেদের অর্থায়নে সেতু করব। দেরি হলে হোক। আমরা যেমন আছি দুর্নীতির বিরুদ্ধে তেমনি আছি প্রধানমন্ত্রীর নিজ অর্থায়নে সেতু করার পক্ষে।এবার আপনি আপনার লেভেল প্লে করুন। দেশের স্বার্থে অতিরিক্ত শর্ত যেন আমাদের উপর কেউ চাপিয়ে না দেয় সেদিকটা যদি পারেন চেষ্টা করেন।বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিনিযোগ খাত টেক্সটাইল সেক্টরের উপর ইতিমধ্যেই হুমকী দিয়েছে এক রাষ্ট্রদুত।এটা আর কিছুনা। এক অলিখিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। আপনার যদি কিছু করার থাকে তবে দেশের স্বার্থে মাঠে নামুন। আলকাতরা বাহিনীর কারনে অভিমান করা আপনার মানায় না।

দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই। বিশ্বব্যাংক যদি আগের শর্তে লোন দেয় ভাল, না হয় আমরা সেতু করব নিজের টাকায়। আমরা চাইনা ইন্ডিয়ার সাময়িক সহযোগিতায় বাংলাদেশ বর্হিবিশ্বে বন্ধুহীন হোক (উপরের স্ক্রিনশট)। এ সহযোগীতা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিকে পরাধীন করে দিবে।

এ মিছিলে আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছি। আরো আমন্ত্রন জানাচ্ছি মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। সময় এসেছে দেশের স্বার্থে একমঞ্চে আসার।