এই যাত্রায় সুচি বেঁচে গেলেন

নীলকন্ঠ
Published : 7 Oct 2012, 07:19 AM
Updated : 7 Oct 2012, 07:19 AM

সাধারণত সাম্প্রদায়িক ইস্যুগুলোতে বিএনপি বা জামাত সব সময় দোষী হয় আর আওয়ামী লীগ লাভবান হয় এই জন্য যে তারা বলে থাকে তারা অসাম্প্রদায়িক মনোভাব এর ধারক ও বাহক (অন্তত মিছিলে, মিটিংয়ে, বক্তৃতা বিবৃতিতে)। আর যে কোন সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে আওয়ামী লীগ প্রথমেই বিএনপি বা জামাতকেই দোষী সাব্যস্ত করে।

কিন্তু ইস্যুগুলো সবসময় শুধু মাত্র দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারনেই তৈরী হয়না; সেখানে আরও বিভিন্ন স্বার্থ বা সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় অনুভুতি কাজ করতে পারে এবং শুধুমাত্র স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারনেই গডফাদারেরাও এধরনের পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চায় । অতএব দলীয় পরিচয় না খুঁজে দলীয় পরিচয়ে মুল্যায়ন না করে অপরাধীদের অপরাধের কারনেই আইনের আওতায় আনা উচিত।

রাজনৈতিক ফায়দার জন্য কোন সরকারই এই সংকীর্ণতার উদ্র্ধে এ পর্যন্ত উঠেনি এবং একদল কলমবাজ আছেন যারা সবকিছুতেই কাটমোল্লা আর ইসলামের গন্ধ খুঁজে জ্ঞান জাহির করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিমধ্যেই বিরোধীদলের পরিকল্পনা খুঁজে পেয়ে গেছেন এবং সেটাই প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চেষ্টা করছেন। বিভ্রান্তিতে আছি, কোনটা বিশ্বাস করবো।

একক কোন রাজনৈতিক দল কি জড়িত?
আমার মনে হয় একক কোন রাজনৈতিক দল জড়িত নয়। ঘটনার স্বতঃস্ফূর্ততায় সব দলের লোকই অংশগ্রহন করেছে। অতএব কাদা ছোড়া বাদ দিয়ে অপরাধীদের পাকড়াও করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। একই ভাবে উচিত, অন্য ধর্মের প্রতি যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে অবমাননামূলক প্রচারণা চালায় তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা।

উপরের উদ্ধৃতিটির প্রতি সরকারের মনোযোগ দেয়া উচিত। উত্তমকে দিয়ে কারা একাজটি ঘটিয়েছে?

০১। মিয়ানমারের সুচি গণতন্ত্রের কথা বলে নোবেল বাগিয়ে নিলেন; তাকে নিয়ে পশ্চিমাদের লাফালাফির কমতি নেই। দেশের মধ্যেও তার জনসমর্থন অনেক। তাই তিনি যখন ইউরোপ ভ্রমনে বের হলেন তখনই মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গা শুরু। এটা ছিলো সুচির লিটমাস টেষ্ট, গনতন্ত্র আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে সুচি কতটুকু বিশ্বাসী এবং তার এ বিশ্বাস ভোট বাক্সকে কতটুকু পরোয়া করতে পারে তার পরীক্ষা, যেখানে মুসলমানদের পক্ষে সরাসরি টু শব্দটি করলে সুচির জনসমর্থন শেষ হয়ে সুচি রাষ্ট্রীয় নেতার পরিবর্তে আঞ্চলিক এবং সাম্প্রদায়িক নেতায় পরিনত হতেন এবং সেদেশের মানুষ হয়তো আবার সুচির গৃহবন্দিত্বকেই পছন্দ করতো। অনেকেই আশা করেছিলেন ইউরোপ ভ্রমনে থাকা সুচি এই দাঙ্গা নিয়ে কোন বিবৃতি বা মন্তব্য দিবেন। আমি যতদুর জানি, তিনি মাঝামাঝি চলেছেন, সরাসরি কোন মন্তব্য করেননি। সেখানকার কলকাঠির মালিকের ইচ্ছাও পূরন হয়নি।

মিয়ানমারের কলকাঠির মালিক সম্ভবত সুচির মুখ থেকে সরাসরি কিছু শুনতে চাচ্ছেন যা সেদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের বিপক্ষে যায় এবং ফলশ্রুতিতে জনগনের দাবী হিসেবে উপস্থাপন করে সুচিকে আবারো গৃহবন্দি করা যায়। আর তাই সেখানে প্রয়োজন আরেকটি দাঙ্গা এবং সেটার সূত্রপাত যদি মিয়ানমারের বাইরে থেকে হয় তবে সোনায় সোহাগা। কারন বাংলাদেশে বৌদ্ধরা নির্যাতিত হলে মায়ানমারে মুসলমানরা টার্গেট হবে।

তবে বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতার কারনে মনে হচ্ছে, সুচি বেঁচে গেলেন। এখন প্রয়োজন তরুন বড়ুয়ার কথা মতো কারা উত্তমকে দিয়ে ফেসবুকে ছবি যুক্ত করেছে তা খুঁজে বের করা এবং আইনের আশ্রয় না নিয়ে যারা সংখ্যালঘুদের জানমালের উপর আঘাত করে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর কালিমা লেপনে ব্যস্ত তাদের বিচার করা।

০২। সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে ব্লগে কেউ কেউ ইতিমধ্যেই ইসলাম ধর্মের আসন্ন মৃত্যুর পূর্বাভাস দিয়ে দিয়েছেন কিংবা কী হবে এই ধর্ম পালন করে -জাতীয় হা হুতাশ শুরু করেছেন এবং এ ধর্ম না পালনের পক্ষে অবস্থান ও নিয়েছেন। ধর্ম পালনের জন্য তো কেউ কাউকে বাধ্য করছেনা। বুঝেছি ইসলাম নিয়ে এদের চুলকানি আছে। চুলকানি উপশমের জন্য এরাও এধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। রামুর ঘটনায় এদেরকেও সন্দেহের বাইরে রাখা উচিত হবে না।