বিশ্বজিতের মৃত্যুর সংবাদ প্রথমআলো ছয়টি স্লাইড সহকারে প্রকাশ করলো। দৈব কারনে আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই ছয়টি স্লাইডের জায়গায় একটি ফ্রেম রেখে বাকিগুলো সরিয়ে নিলো, হেডলাইনে ও পরিবর্তন আনল "ছাত্রলীগের রোষের বলি" থেকে হলো "আওয়ামীলীগ বিএনপি কেউ কথা রাখেনি"। আবার এখান থেকে হলো "সন্দেহে ছাত্রলীগ"।
বেকার মস্তিস্ক শয়তানের আড্ডাখানা। ব্লগ হাউজে বেকার ব্লগারে ভরে গেছে। কোন কাজ নাই; পান থেকে চুন খসলেই হৈ হৈ করে উঠে। অতএব প্রথম আলোর ইচ্ছাকৃত বা বাধ্যতামূলক হেডলাইন বিবর্তনে এরা হৈ হৈ করে উঠলো। অতি বেকার যারা তারা সময় কাটানোর জন্য কোন্ সুযোগে বিবর্তনের স্ক্রিনশট ও সংরক্ষণ করে চললো এবং সাথে সাথে আবার পুরোদমে আপলোড কাজ চালিয়ে দিল। ফলাফল প্রথম আলোর ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। বাধ্য হয়ে তারা আবার হেডলাইন পরিবর্তন করলো "ছাত্রলীগের রোষের বলি"।
এই বেকারের (?) দলে সরকারী দল সমর্থন করে এমন লোকও ছিল। এরা এদের কলম বিক্রি করে নাই। এরা সরকারী দল সমর্থন করে, ভরসা হারায় না; মেঘ কাটলেই সুর্য আসবে। সুন্দর দিনের জন্য সরকার পরিবর্তনই একমাত্র পথ – এই কথায় এরা বিতর্ক করবে। তবে কখনো কলম বিক্রি করবেনা।
সকল দলের এই বেকার ব্লগারদের হৈ হৈ চিৎকারে মিডিয়া যেমন সঠিক খরব প্রকাশে বাধ্য হয়েছে বা সাহস পেয়েছে তা শুধু নয়, দন্ডমুন্ডের কর্তারাও "এক বিশ্বজিতের জন্য কি কেঁদে কেটে বৈরাগী হতে হবে?" এই মনোভাব নিয়ে চলতে পারছেনা। এই হচ্ছে বিবেকের শপথ, এই হচ্ছে চেতনার ফসল। এভাবেই আসে নতুন সুর্য।
ছাত্ররাজনীতির এক গর্বিত ইতিহাসের মালিক আমরা। প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে দৃপ্ত শপথে যারা অন্ধকারে আলোর মশাল বহনের দায়িত্ব নিয়েছিল, তারা আমাদের ছাত্রসমাজ। এদের সম্মিলিত শপথের ভয়ে অন্ধকার টিকে থাকতে পারেনি।
অতএব, অন্ধকারের বাসিন্দারা এই শপথে ফাটল ধরানোর উপায় নির্ধারণে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বেকারত্ব আর হতাশার বিপরীতে অর্থ, ভোগ, ক্ষমতা আর শর্টকার্ট প্রতিষ্ঠা পাওয়া ইত্যাদির বড়শি ফেলে এরা কলুষিত করে দিয়েছে আমাদের অহংকারের শপথকে, বিভক্তির দেয়াল তুলে দিয়েছে ছাত্রসমাজের মধ্যে । তাই পরীক্ষা কক্ষে পরিদর্শকরা পিস্তলের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের কাজ হয়ে গেছে রোবোটিক লেকচার; ছাত্রদেরকে শিক্ষিত করে তোলার কোন অধিকার নাই। আন্দোলনের আগে এদের কাছ থেকে শিক্ষকদেরকে অনুমতি নিতে হয়; অন্যথায় নিশ্চিত গলাধাক্কা।
এই ধারাবাহিকতার চরম ধাপ হলো "বিশ্বজিতের খুনিদের 'ধরবে' ছাত্রলীগ"।
প্রশ্নজাগে –
০১। পুলিশ কেন খুনিদের ধরতে ব্যর্থ হলো?
০২। পুলিশ কি তাহলে সারেন্ডার করেছে? ছাত্রলীগের ভয়ে কি দেশে অপরাধ প্রবণতা কমবে?
০৩। আমরা কি ভাবছি যে খুনিদের ধরার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট নয়?
০৪। কোন খুনিকে ধরার জন্য ছাত্রলীগ কি অথরাইজড? এরা কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিস্থাপক?
০৫। এটা কি ক্ষমতার অনিয়ন্ত্রিত চর্চা না অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতার চর্চা?
০৬। কারা সেই অন্ধকারের বাসিন্দা যারা ছাত্রসমাজকে অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতার চর্চা করার সুযোগ দিয়ে বিভক্তির সর্বশেষ দেয়াল সম্পন্ন করছে এবং বেপরোয়া করে তুলছে?
০৭। বিরোধীদল ক্ষমতায় গিয়ে তাদের ছাত্র সংগঠনকেও যদি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিকল্প হিসেবে দাঁড় করায়, যদি অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতার চর্চা করার সুযোগ দেয় তখন আমরা বেকার ব্লগাররা না হয় প্রতিবাদ করবো। বিশ্বজিতরা কি নিরাপদ বোধ করবে?
০৮। এই রক্তাক্ত পথের শেষ কোথায়? আমরা কি এই পথের শেষ খুঁজছি নাকি এই পথকে আরো দীর্ঘায়িত করছি?
স্বাধীনতা তো শুধু ভৌগলিক সীমারেখাতেই সীমাবদ্ধ নয়; অনেকগুলো প্যারামিটারের মধ্যে ভৌগলিক সীমারেখা একটি মাত্র উপাদান। প্রিয় মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, সন্তান সবাইকে ফেলে রেখে ৭১ এ রাইফেল কাঁধে যে কৃষক বের হয়ে পড়েছিল সে কি শুধু একটা সীমারেখা চেয়েছিল? তার চাষের জমির কি সীমারেখা ছিল না? আমরা কি একটা সীমারেখা চেয়েছিলাম? স্বতন্ত্র সীমারেখার বিপরীত শব্দই কি পরাধীনতা?
আভ্যন্তরীণ হোক আর বাইরের হোক, যে কোন প্রকার পরাধীনতার বিরুদ্ধে আমাদের মুল প্রতিরক্ষা ছিলো ছাত্রসমাজ ও তাদের চেতনা, তাদের একতাবদ্ধ দৃপ্ত শপথই আমাদের সকল অর্জনের সুতিকাগার; আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী তো এসেছে পরে। এজন্যই আমরা এখনো খালি পায়ে প্রভাতফেরিতে বের হই, স্মৃতিসৌধে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি। আমাদের এ মুল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে আমরা কি আসলেই সত্যিকারের স্বাধীনতার পথে হাঁটছি?
পদে পদে বিভক্তির দেয়াল, আফিমের ঘোর। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বাইরে বিবেক কাজ করেনা; চেতনা শক্তি পায়না। মুখে তোতা পাখির মতো শেখানো বুলি। সার্কাসের আত্মপরিচয়হীন রংমাখা নাচুনে ভালুক। এরা কি আর কোনদিন আলোর মিছিলে এক হতে পারবে? এরা কি বইতে পারবে আলোক মশালের ভার?
তবে কে বইবে আলোর মশাল?