প্রস্তাবিত অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালা ২০১২ নিয়ে বিতর্ক কেন ?

নির্বাসিত পথিক
Published : 18 Sept 2012, 08:52 AM
Updated : 18 Sept 2012, 08:52 AM

অনেকে বিষয়টি নিয়ে অনেকে অযথা মন্তব্য ও বিতর্কের সৃষ্টি করছে, কেউ বুঝে আবার কেউ সুযোগে স্বদব্যবহার করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার পায়তারা চালাচ্ছে। এ নিয়ে ব্লগ গুলোতে দেখা যাচ্ছে কিছু ব্লগার না বুঝে বেশ বড় বড় ব্লগ লিখে নিজের নাম রৌশন করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ছে। আমি সেই সব ব্লগার ও পাঠক-পাঠিকাদের অনুরোধ করে বলছি, প্রস্তাবিত নীতিমালা নিয়ে লিখুন বা মন্তব্য করুন, আগে ভাল করে নীতিমালাতে কী রয়েছে সেটা দেখুন তারপর না হয় লিখুন বা মন্তব্য করুন।

প্রস্তাবিত প্রস্তাবিত অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালা ২০১২ তে বাংলা ব্লগ বা সিটিজেন জার্নালিজম ব্যবহার কারীদের বিষয়ে যে বিধি নিষেধ রয়েছে তা চলমান হিসেবে এখনো বিদ্যমান। নতুন করে ব্যবহারকারীদের জন্য তেমন কোনও পরিবর্তন নেই। তাহলে অযথা কেন বিতর্ক ?

আসুন দেখে নেওয়া যাক কী রয়েছে এই প্রস্তাবিত নীতিমালাতে,

প্রস্তাবিত অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালা ২০১২
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তথ্য মন্ত্রণালয়
বিশ্বায়নের এই যুগে অনলাইনভিত্তিক সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতার শক্তিশালী ও কার্যকর প্রচার মাধ্যম। প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়নের ফলে মানুষের বাক ও ভাব প্রকাশের এই মাধ্যম অতি দ্রুততার সাথে বিশ্বব্যাপী প্রসার লাভ করেছে। প্রচলিত সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতারের বিভিন্ন চ্যানেলের পাশাপাশি ওয়েব বা ইন্টারনেটের মাধ্যমেও অনলাইন সংবাদ ও অনুষ্ঠানের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সম্প্রচার, প্রকাশনা, প্রদর্শন ও পরিচালনায় কোন বিধি বিধান বিদ্যমান নাই এবং এ সম্পর্কিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরী।
১। (ক) এই নীতিমালা "অনলাইন গণমাধ্যম পরিচলালনা নীতিমালা ২০১২" নামে অভিহিত হবে।
(খ) জারির তারিখ থেকে এই নীতিমালা কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য হবে।
২। অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনার লক্ষ্যে আবেদন আহ্বান:
(ক) শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক সুরক্ষা, প্রশিক্ষণ, গণসচেতনতা ও বিনোদনের পরিসর বৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশ ও মূল্যবোধ গড়ে তোলার এবং বিশ্বব্যাপী এ সকল বিষয়াদি সম্প্রচারের অনলাইন গণমাধ্যম স্থাপনের জন্য বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট ওয়েব সাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে তথ্য মন্ত্রণঅলয় দরখাস্ত আহ্বান করবে।
(খ) প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী (অফিস অবকাঠামো, মোট জনবল ও নির্ধারিত ব্যাংক ব্যালেন্স, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞতার সনদপত্র)সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
৩। মালিকানা সংক্রান্ত নীতিমালা:
(ক) অনলাইন গণমাধ্যম স্থাপনের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নাগরিক এবং কোম্পানীকে অবশ্যই বাংলাদেশী কোম্পানী হতে হবে।
(খ) অনাইন গণমাধ্যমের মালিকগণ বেসরকারী মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সরকারকে আয়কর পরিশোধ করবেন।
৪। লাইসেন্স আবেদনের নিয়মাবলী:
(ক) এই নীতিমালার অধীনে প্রদেয় লাইসেন্স ব্যতিরেকে কোন প্রতিষ্ঠান অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা কিংবা পরিচালনা করতে পারবে না;
(খ) আগ্রহী প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানীকে অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে;
(গ) সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকার অফেরতযোগ্য ব্যাংক ড্রাফট/পে অর্ডার জমা দিয়ে আবেদন ফরম সংগ্রহ করা যাবে;
(ঘ) আবেদনকারী কোম্পানীকে অবশ্যই কোম্পানী আইন ১৯৯৪ এর আওতায় নিবন্ধিত হতে হবে;
(ঙ) আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে আবেদনের সাথে ফেরতযোগ্য আর্নেস্টমানি বাবদ সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয় বরাবরে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকার ব্যাংক ড্রাফট/পে-অর্ডার প্রদান করতে হবে;
(চ) আবেদনে অনলাইন গণমাধ্যম স্থাপনের উদ্দেশ্য সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে;
(ছ) কোন অনলাইন গণমাধ্যমের মালিক/পরিচালক সরকারের অনুমতিক্রমে একাধিক অনলাইন গণমাধ্যমের মালিক/পরিচালক হতে পারবেন;
(জ) সরকারি/বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ/বিল/কর খেলাপী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এবং ফৌজদারী অপরাধ বা নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দণ্ডিত কোন ব্যক্তি বা কোম্পানি আবেদন করতে পারবে না;
(ঝ) লাইসেন্স প্রদানের পূর্বে সরকার কর্তৃক বিবেচিত আবেদনসমূহ নিরাপত্তা ছাত্রপত্রের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। অনুকূল নিরাপত্তা ছাড়পত্র না পাওয়া গেলে লাইসেন্স প্রদানের জন্য কোন আবেদন যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না;
(ঞ) সরকার কর্তৃক নির্বাচিত আবেদনকারীদের অনুকূলে লাইসেন্স প্রদানের পর বিটিআরসির নিকট থেকে অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে:
৫। লাইসেন্স ফি:
লাইসেন্স গ্রহণকালে আবেদনকারী এককালীন ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কোডে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা প্রদান করে মূল কপি মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবে।
৬। লাইসেন্স নবায়ন:
(ক) প্রতি বছরে সংশ্লিষ্ট খাতে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা ফি প্রদান করে লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। সরকার প্রয়োজনে লাইসেন্স ফি পুন:নির্ধারণ করতে পারবে;
(খ) লাইসেন্স-এর মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ৩০ (ত্রিশ) দিন পূর্বে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে এবং বিশেষ কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নবায়ন করতে ব্যর্থ হলে ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা সারচার্জ জমা দিয়ে সর্বোচ্চ ০২ মাসের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে;
৭। জামানত:
লাইসেন্স গ্রহণকালে অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পূর্বে প্রদত্ত আর্নেস্টমানি বাবদ ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা পরবর্তীতে জামানত হিসেবে গণ্য হবে;
৮। লাইসেন্স হস্তান্তরের বিধি নিষেধ:
সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতীত কোন লাইসেন্স বা এর উপর অর্জিত স্বত্ব বা শেয়ার সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে হস্তান্তর করা যাবে না। তবে উভয় পক্ষের মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি সম্পাদন করে সরকারি কোষাগারে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা ফি প্রদান পূর্বক লাইসেন্স বা অর্জিত স্বত্ব বা শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে।
৯। লাইসেন্স স্থগিতকরণ ও বাতিলকরণ:
সরকার নিম্নোক্ত এক বা একাধিক কারণে লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে:
(ক) লাইসেন্স/চুক্তি সংক্রান্ত সরকারের কোন পাওনা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে;
(খ) বিটিআরসি প্রদত্ত কোন শর্ত ভঙ্গ করলে;
(গ) এই নীতিমালার কোন শর্ত/শর্তাবলি ভঙ্গ করলে; এবং
(ঘ) সরকারের অন্য কোন নির্দেশ প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে।
১০। অনলাইন সংস্করণ পরিচালনা:
সরকার কর্তৃক অনুমোদনকৃত বর্তমানে বিদ্যমান টেলিভিশন ও বেতার চ্যানেলসমূহ লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে অবহিত রেখে অনলাইন সংস্কারণ পরিচালনা করতে পারবে। বিদ্যমান সংবাদপত্রসমূহ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত রেখে অনলাইন সংস্করণ পরিচালনা করতে পারবে।
১১। পেশাগত ও কারিগরি মান:
(ক) আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে পেশাগত ও কারিগরি মানসম্মত অনুষ্ঠান পরিচালনায় সক্ষম হতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে যাতে অনুষ্ঠানের মান সমুন্নত থাকে সেজন্য একাধিক প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি মালিকানায় অনলাইন গণমাধ্যম স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেয়া যেতে পারে;
(খ) শর্ত থাকে যে অনলাইন গণমাধ্যম সম্প্রচারের জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে International Telecommunication Union (ITU) ও বিটিআরসি আরোপিত সকল টেকনিক্যাল স্টান্ডার্ড, শর্ত ও নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালা মেনে চলতে হবে;
(গ) ব্রডকাস্টিং নীতিমালা, শর্তসমূহ, ফ্রিকোয়েন্সি, আন্তর্জাতিক রীতিনীতিসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বা সরকার কর্তৃক দায়িত্ব প্রাপ্ত সংস্থা বা বোর্ড-এর প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে বা সম্মতিক্রমে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন/বিটিআরসি কর্তৃক গৃহীত বা স্বীকৃত সিদ্ধান্ত অবশ্যই নে চলতে হবে;
(ঘ) অনলাইন পত্রিকার ক্ষেত্রে পত্রিকার প্রতিটি কপিতে প্রকাশক ও সম্পাদকের নাম ঠিকানা অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে;
(ঙ) অনলাইন পত্রিকার ক্ষেত্রে পরিচালনাকারীর ন্যূনতম ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স থাকতে হবে;
(চ) অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনাকারীর (পত্রিকার ক্ষেত্রে সম্পাদকের) শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক/সমমানের থঅকতে হবে এবং সাংবাদিকতায় প্রথম শ্রেণীর পত্রিকায় (সার্কুলেশন ভিত্তিক) ০২ (দুই) বছর কাজের অভিজ্ঞতা ও যথাযথ প্রশিক্ষণ থাকতে হবে;
(ছ) উক্ত রীতিনীতি, নিয়ম-পদ্ধতি এবং শর্তসমূ এর প্রয়োগ বা প্রতিপালনের বিষয় সরকারের আদেশ-নির্দেশ অবশ্যই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে;
(জ) যে কোন অনলাইন গণমাধ্যম টেক্সট, অডিও ও ভিডিও content অথবা একাধিক প্রকার content সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট হোস্টিং করে তা পরিচালনা করতে হবে।
(ঝ) সকল অনলাইন গণমাধ্যম বাংলাদেশে স্থাপিত সার্ভারে হোস্টিং করতে হবে। ডিএন এস আই (ডোমেইন নেইম সার্ভার ইন্টারনেট প্রটোকল) সম্পর্কে তথ্য মন্ত্রণালয় অবহিত থাকতে হবে।
(ঞ) অনলাইন গণমাধ্যমের অন্য কোন দেশি বা বিদেশী গণমাধ্যম লিংক করা যাবে না।
১২। সম্প্রচার সংক্রান্ত শর্তাবলি:
(ক) সম্প্রচারিত বিষয়সমূহের রেকর্ড (কনটেন্ট) ৯০ (নব্বই) দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে;
(খ) তথ্য মন্ত্রণালয় বা সরকারের কোন এজেন্সি কর্তৃক চাহিত বা অধিযাচিত তথ্যাবলি লাইসেন্স গ্রহীতাকে নিয়ে খরচে প্রচারিত অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) অবশ্যই সরবরা করতে হবে এবং মনিটর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
(গ) সরকার কর্তৃক জারিকৃত বিজ্ঞাপন নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে;
(ঘ) বেসরকারি মালিকানাধীন সংস্থা নিজস্ব ব্যবস্থাধীন প্রচার সময় (time slot) বিক্রয় করে বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। তবে অনুমতিপ্রাপ্ত সংস্থা অন্য কোন সংস্থার নিকট প্রচার সময় বিক্রয় করলে অনুমতিপ্রাপ্ত সংস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সমগ্র নীতিমালা অন্য সংস্থার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। তবে কোন বিদেশী সম্প্রচার সংস্থার নিকট সরাসরি বা তাদের দেশী/বিদেশী এজেন্সীর মাধ্যমে প্রচার সময় (time slot) বিক্রয় করা যাবে না।
(ঙ) বিজ্ঞাপন প্রচার সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানসহ প্রতিদিনের মোট প্রচার সময়ের ২০% এর বেশী হবে না।
১৩। সংবাদ/অনুষ্ঠানাদি সম্প্রচারের শর্তাবলি:
(ক) অনলাইন গণমাধ্যম দেশী-বিদেশী ধারণকৃত অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারবে। তবে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সেন্সর নীতিমালা সম্পূর্ণভাবে অনুসৃত হবে। কোন অবস্থাতেই বিদেশী অনলাইন গণমাধ্যম সংবাদ, সংবাদ পর্যালোচনা, টক-শো; আলোচনা, সম্পাদকীয় এবং সমসাময়িক ঘটনাবলি নিয়ে অনুষ্ঠান ও মন্তব্য সরাসরি সম্প্রচার বা ধারণকৃত বা যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না।
(খ) সংবাদ প্রচারের জন্য অনলাইন গণমাধ্যম নিজস্ব প্রক্রিয়ায় স্ক্রিপ্ট প্রণয়ন করতে পারবে। স্থানীয় সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালার প্রতিফলন থাকবে।
(গ) মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণ, একযোগে বিনামূল্যে সম্প্রচার করতে হবে। সরকার ঘোষিত বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ দিবসের সংবাদ/অনুষ্ঠানাদি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে প্রচার করতে হবে। দেশের জরুরি জাতীয় প্রয়োজনে বা জনস্বার্থে প্রচারের জন্য সরকার যখন যে রকম নির্দেশ প্রদান করবে, তা যথাযথভাবে পালনপূর্বক প্রচার করতে হবে।
(ঘ) সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা প্রতিফলনসহ বিনামূল্যে সরকারি প্রেস নোট, বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
১৪। নিম্নলিখিত সংবাদ/অনুষ্ঠানাদি সম্প্রচার করা যাবে না:
(ক) দেশের অখ-তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা, ভাষা-সংস্কৃতি, জনস্বাস্থ্য হানিকর এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের পরিপন্থী কোন সংবাদ/অনুষ্ঠান;
(খ) রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং রাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থী কোন সংবাদ/অনুষ্ঠান;
(গ) হিংসাত্মক, সন্ত্রাস, বিদ্বেষ ও অপরাধ সম্বলিত কোন সংবাদ/অনুষ্ঠান;
(ঘ) দেশের কোন সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে এমন কোন অনুষ্ঠান, যা কোন ধর্ম, জাতি গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় সম্পর্কে মানহানিকর মন্তব্য প্রচার করে এবং যা সাম্প্রদায়িকতাকে উৎসাহিত করে, নারী-পুরুষ বৈষম্যকরণ ও শারীরিক অক্ষমতার ভিত্তিতে ঘৃণা বা মানহানি ঘটাতে পারে এমন সংবাদ বা অনুষ্ঠান;
(ঙ) অশালীন বা আক্রমাণাত্মক কোন রসিকতা/গান/বিজ্ঞাপন/সংবাদ বা সাবটাইটেল সম্বলিত কোন অনুষ্ঠান, যা জনগণের নৈতিকতাকে কলুষিত, দুর্নীতিগ্রস্ত বা আহত করতে পারে এমন কো অনুষ্ঠান;
(চ) মানহানিকর উপাদান বা জ্ঞাতসারে মিথ্যা বিষয়াদি রয়েছে এমন সংবাদ/অনুষ্ঠান;
(ছ) আদালত অবমাননার কোনো বিষয় রয়েছে এমন কোনো সংবাদ/অনুষ্ঠান;
(জ) বিচার বিভাগ/বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী/বেসামরিক প্রশাসনের বিরুদ্ধে কুৎসামূলক উপাদান রয়েছে এমন কোনো সংবাদ/অনুষ্ঠান;
(ঝ) মৌলিক সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও সদাচরণ পরিপন্থী উপাদান রয়েছে এমন কোনো সংবাদ/অনুষ্ঠান;
(ঞ) বাংলাদেশ দ-বিধির অধীনে আমলযোগ্য কোনো অপরাধে উৎসাহ প্রদান, সাহায্য বা সহায়তা করে এমন কোনো সংবাদ/অনুষ্ঠান;
(ট) বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে ক্ষতিকর কিছু রয়েছে এমন কোনো সংবাদ/অনুষ্ঠান;
(ঠ) উচ্ছৃঙ্খলতা, ধ্বংসযজ্ঞ, শিশু-কিশোর অপরাধ বা অপসংস্কৃতিকে আকর্ষনীয় ও উৎসাহিত করতে পারে বা শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন কোনো অনুষ্ঠান যাতে শিশুদের জন্য তৈরী অনুষ্ঠানগুলিতে আপত্তিকর ভাষা বা তাদের পিতা-মাতা বা মুরব্বীদের প্রতি অশ্রদ্ধাজনক কিছু রয়েছে এমন সংবাদ/অনুষ্ঠান;
(ড) তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা ক্ষুণ্ন করে এমন কোনো সংবাদ/অনুষ্ঠান;
(ঢ) অন্য কোন আইন দ্বারা বারিত বা অসেন্সরকৃত কোন অশ্লীল অনুষ্ঠান এবং
(ণ) পরবার ও বৈবাহিক সম্প্রীতির পবিত্রতার বিরুদ্ধে কোনো কিছু রয়েছে এমন কোনো সংবাদ/অনুষ্ঠান।
(ত) অনলাইন গণমাধ্যমে বাংলাভাষার, বিকৃতি ও শিক্ষা সংস্কৃতির পরিপন্থী অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না।
১৫। সম্প্রচার কার্যক্রম শুরুর সময়সীমা:
লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্সপ্রাপ্তির ১ (এক) বছরের মধ্যে সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে। অন্যথায় লাইসেন্স বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, সরকার যুক্তিসঙ্গত মনে করলে এ সময়সীমা বৃদ্ধি করতে পারবে।
১৬। বার্ষিক ফি:
লাইসেন্স প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনলাইন প্রচারিত বিজ্ঞাপন বাবদ প্রাপ্ত মোট অর্থের শতকরা ২ ভাগ সরকারি কোষাগারে সংশ্লিষ্ট খাতে চালানের মাধ্যমে প্রতি অর্থ বছর শেষ হওয়ার ৪ (চার) মাসের মধ্যে জমা প্রদান করতে হবে।
১৭। জাতীয় রেগুলেটরি কমিটি:
(ক) জাতীয় রেগুলটরি কমিটি (National Regulatory Committee) গঠন:
অনলাইন গণমাধ্যম স্থাপন ও পরিচালনায় নিম্নলিখিত কর্মকর্তাগণের সমন্বয়ে একটি 'জাতীয় রেগুলেটরি কমিটি থাকবে। এ কমিটির গঠন প্রকৃতি নিম্নরুপ হবে:
(১) সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা। -সভাপতি
(২) যুগ্ম-সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।-সদস্য
(৩) মহাপরিচালক, বাংলাদেশ বেতার, শাহবাগ, ঢাকা। – সদস্য
(৪) মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশন, রামপুরা ঢাকা।- সদস্য
(৫) সরকার মনোনীত বেসরকারি বেতারের একজন প্রতিনিধি। – সদস্য
(৬) সরকার মনোনীত ০২ (২) জন বিশিষ্ট নাগরিক। – সদস্য
(৭) সরকার মনোনীত বেসরকারি বেতারের একজন প্রতিনিধি – সদস্য
(৮) সরকার মনোনীত বেসরকারি টেলিভিশনের একজন প্রতিনিধি। – সদস্য
(৯) সরকার মনোনীত বাসসের একজন প্রতিনিধি। – সদস্য
(১০) তথ্য অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি। -সদস্য
(১১) চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি। – সদস্য
(১২) বিটিআরসি'র একজন প্রতিনিধি (পরিচালক বা তদূর্ধ্ব পর্যায়ের) – সদস্য
(১৩) যুগ্ম-সচিব (সম্প্রচার), তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকা। – সদস্য-সচিব
(খ)। কমিটির কর্ম-পরিধি :
এই কমিটির কর্ম-পরিধি নিম্নরূপ হবে:
(ক) সম্প্রচার সংক্রান্ত আইন-কানুন ও বিধি-বিধান পর্যালোচনা করা এবং অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনায় সময়োপযোগী সংশোধনী সম্পর্কে পরার্শ প্রদান করা;
(খ) "মনিটরিং কমিটিক"র রিপোর্ট পর্যালোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা করা;
(গ) অনলাইন গণমাধ্যম স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১৮। মনিটরিং কমিটি:
(ক) অনলাইন গণমাধ্যম মনিটরিং-এর লক্ষ্যে "মনিটরিং কমিটি" গঠন।
অনলাইন গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত সংবাদ/অনুষ্ঠান মনিটরিং-এর জন্য একটি "মনিটরিং কমিটি" থাকবে। এ কমিটির গঠন প্রকৃতি নিম্নরূপ হবে:
মনিটরিং কমিটি:
(১) যুগ্ম-সচিব (সম্প্রচার), ঢাকা -সভাপতি
(২) উপ-সচিব, (টিভি), তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা – সদস্য
(৩) উপ-সচিব (বেতার), তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা – সদস্য
(৪) উপ-সচিব (প্রেস), তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা – সদস্য
(৫) বিটিআরসি এর প্রতিনিধি – সদস্য
(৬) বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন প্রতিনিধি – সদস্য
(৭) বাংলাদেশ বেতারের একজন প্রতিনিধ – সদস্য
(৮) বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার একজন প্রতিনিধি – সদস্য
(৯) সিনিয়র সহকারী সচিব (প্রেস/টিভি) – সদস্য সচিব
(১০) পিআইডি (সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা) ২ জন
(১১) অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ৪ জন
(খ) কমিটির কার্যপরিধি:
(ক) অনলাইন গণমাধ্যমের সম্প্রচার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে সরকারের নিকট প্রতিবেদন প্রদান;
(খ) অনলাইন গণমাধ্যম স্থাপন সংক্রান্ত নীতিমালা এবং চুক্তিপত্রে বর্ণিত শর্তাদি যথাযথ প্রতিপালন হচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন প্রদান;
(গ) সম্প্রচার কার্যক্রমে কোন অনিয়ম কিংবা কোন ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে এ ব্যাপারে সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;
(ঘ) কমিটি কর্তৃক প্রতি মাসে একবার সভা আহ্বান করা এবং কর্যবিবরণী সরকারের নিকট যথাসময়ে প্রেরণ করা;
(ঙ) বিদ্যমান নীতিমালার প্রয়োজনীয় সংশোধনী বিষয়ে সুপারিশ করা।
১৯। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ :
(ক) অনলাইন গণমাধ্যম বাতিল করার পূর্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হবে;
(খ) উপ-ধারা (ক) এর অধীন লাইসেন্সধারীর কোন বক্তব্য থাকলে তা বিবেচনা করে সরকার জরিমানা/জামানত বাজেয়াপ্তকরণ অথবা যথাযথ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যান্ত লাইসেন্স স্থগিত রাখার নির্দেশ দিতে পারবে এবং
(গ) কোন লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করার পর্যায়ে সরকার আশু ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন বিবেচনা করলে সংশ্লিষ্ট সম্প্রচারকেন্দ্রের প্রচার বন্ধ বা স্থগিত করার উদ্দেশ্যে উক্ত কেন্দ্রের যে কোন বা সকল যন্ত্রপাতি জব্দ করার আদেশ দিতে পারবে।
২০। হেফাজতকরণ:
বর্তমানে বিদ্যমান অনলাইন গণমাধ্যমের কোন টেলিভিশন, বেতার এবং সংবাদ পত্রকে এই নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর অনধিক ১২০ (একশত বিশ) দিনের মধ্যে এই নীতিমালার আওতায় লাইসেন্স করতে হবে।

সম্পূর্ণ নীতিমালা দেখে এইখানে খুজে বের করুন আসলে এটা দেশ বিরোধী হয় কী করে ? আর এইখানে ব্লগ বা ব্লগারদের কোথায় বেধে রাখা হচ্ছে ?