প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশাল এখন আক্রান্ত যাত্রা, জুয়া আর বিশেষ নৃত্যের বিষে

মোঃ তানভীর সাজেদিন নির্ঝর
Published : 28 March 2015, 08:05 AM
Updated : 28 March 2015, 08:05 AM

শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক, কবি জীবনানন্দ দাশ, কবি সুফিয়া কামাল, চারণ কবি মুকুন্দদাস, অশ্বিনীকুমার দত্ত, কামিনী রায় দের দক্ষিণের জনপদ কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচ্যের ভেনিস নামে খ্যাত "বরিশাল" নগরী এখন পরিণত হয়েছে জুয়া-বান্ধব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রমোদ নগরী লাস ভেগাসের ন্যায়…!!!

একদিকে কয়েকটি এলাকায় বিগত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন মেলার নামে ও সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ছুতোয় নগরীর প্রতিটি অলিগলি,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,বিনোদন কেন্দ্র,জনসমাগম পূর্ণ স্থানে মাইকিং করে কিশোরীদের অর্ধনগ্ন নৃত্য, হাউজি আর জুয়ার এসব আসরে যোগ দেয়ার নিমন্ত্রণ দেয়া হচ্ছে।

এর সাথে যুক্ত হয়েছে ভ্রাম্যমাণ লটারি টিকিট বিক্রির আরেক প্রতারণামূলক যন্ত্রণাদায়ক অধ্যায়।  এ দুই আসরের জুয়াড়িদের কমিশনপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা রোজ ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক ও রিকশায় করে ১০ টাকা মূল্যমানের হাজার হাজার টিকিট পুরষ্কারের লোভ দেখিয়ে দেদারছে বিক্রয় করে যাচ্ছে।  আর লুটে নিচ্ছে সর্বস্তরের জনগণের লক্ষ লক্ষ টাকা।  সম্পূরক হিসেবে কাঁচা অর্থের বিনিময়ে এসব লটারির ড্র(ফলাফল) প্রক্রিয়া আবার স্থানীয় ক্যাবল টিভি'র দুটি অবৈধ ভিডিও চ্যানেলে রাত ৯ ঘটিকা থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরাসরি সম্প্রচারও করছে।

সব মিলিয়ে বরিশাল নগরী এখন নাম না জানা প্রভাবশালী শীর্ষ জুয়াড়ি, অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী ও প্রতারক চক্রের বিষাক্ত থাবায় আক্রান্ত হয়ে দেশে সামাজিক মহামারীর এক নম্বরে অবস্থান করছে ।

সচেতন অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন সন্তান নিয়ে, ঘরের বধূ আতংকিত ঘরের কর্তাকে ঘিরে, স্বল্প আয়ের মানুষও না বুঝে এসবে জড়িয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে।  কেউ কেউ আবার উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে প্রতিদিনই ভ্রমরের ন্যায় এ জাদুর মধু'র পেছনে দিন-রাত ছুটেই চলেছে।  আবার কেউ কেউ এসবে অংশ নেয়ার জন্যে অর্থের প্রয়োজনে জড়িয়ে পরছে বিভিন্ন মাত্রার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।

এখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগবে, তাহলে এদের অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসন কি ব্যবস্থা নিয়েছে বা নিচ্ছে? এসব বন্ধে প্রশাসন কিন্তু ব্যবস্থা নিয়েওছিলো একবার।  কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই এই প্রভাবশালী চক্র উচ্চ আদালত থেকে কি এক অনুমতি নিয়ে নিলো তা আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারছি না।  তবে এ অনুমতিটির ধরন এমন যে, স্থানীয় প্রশাসন পুনরায় চাইলেও আদালত প্রদত্ত এ অনুমতিকে উপেক্ষা করে তাঁদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারবে না।

এরপর তাহলে বাকী থাকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হস্তক্ষেপ। কিন্তু এ দুটি কার্যালয়ে গিয়ে এই সমস্যার আদ্যোপান্ত তুলে ধরে, এর থেকে পরিত্রাণের জন্যে যাঁদের এগিয়ে আসা উচিৎ তাঁরা আবার গুরুত্বপূর্ণ এ দুই কার্যালয়ে আসার মতো উপযুক্ত নন ! মানে তাঁরা হলেন সাধারণ ভুক্তভোগী জনগণ। এমতাবস্থায় মহান প্রতাপশালী সৃষ্টিকর্তার নিকট এর থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা করা ব্যতীত অন্য কোন উপায় আছে বলে জানা নেই।

তবে নগরীর শান্তিকামী অধম এক সন্তান হিসেবে আমার শুধু খারাপ লাগা এখানেই, যে বরিশাল নগরী প্রাচ্যের ভেনিস উপাধিতে ভূষিত ছিলো তা হয়তো স্বল্প সময়েই পরিবর্তিত হয়ে খেতাব পাবে বাংলার নয়া জুয়া-বান্ধব নগরীতে।