তবুও তোমায় স্বাগতম নববর্ষ

বিমূর্ত কবির
Published : 15 April 2015, 05:56 AM
Updated : 15 April 2015, 05:56 AM

আজ আরও একটি নতুন বছরের শুরু হয়েছে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে। নতুন গণনার শুরুতে জীবন হারালো আরও একটি বছর তার নির্দিষ্ট করে দেয়া সময়সীমা থেকে। প্রকৃতির নিয়মেই বর্ষ পরিক্রমার সাথে সাথে জীবন এগিয়ে চলেছে শেষ প্রান্তের দিকে একটু একটু করে। শৈশব থেকে কৈশোর , কৈশোর থেকে যৌবন, আর এখন যৌবন চলেছে বার্ধক্যের সাথে মিশে যাবার জন্য। আজ কাল প্রায়শই ফিরে তাকাই শৈশব আর কৈশোরের সেই দিন গুলোতে যখন প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম একটি নতুন বছরকে স্বাগত জানাবার জন্য। তখন মনে হতো একটি নতুন বছর মানে পূর্ণতা প্রাপ্তির প্রতি আরও একধাপ আগানো, নতুন অভিজ্ঞতা ও সম্ভাবনার সাথে মিলন, আরও সুন্দর আরও রোমাঞ্চকর আগামির সাথে সহবাস। আরও প্রেম আরও স্বাধীনতা আরও আত্মনির্ভরশীলতার সম্মেলনে যোগদান। আর এখন! এখন আমার বসবাস আজকের বর্তমানে যেখানে আমি বিগত যৌবন প্রায় । এখন একটি বছর শেষ হলে আরেকটি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ঠিক ইচ্ছে হয়না । মনে হয়, সদ্য গত হয়ে যাওয়া বছরটার সাথে সাথে জীবনের একটা অংশ অতীত হয়ে গেল । আমার উচ্ছল আমিত্বের কিছুটা অংশ বছরের শেষ সূর্যাস্তের সাথে অতীতে হারালো । অনাগত দিন এখন কোন রোমাঞ্চ জাগায় না দেহ-মনে তেমন করে । মনে হয় সামনের দিন গুলো আর এখন সোনালী নয় আমার জন্য। কেবলই ধূসর আর পাণ্ডুর সব দিন অপেক্ষমান ওখানে। সেখানে উদ্দাম জোয়ারের আবাহন নাই, মুখরিত জীবনের কোলাহল ক্ষীনস্বর ওখানে। ওখানে গেলে আমি আশ্রয় হবোনা কারও বরং আশ্রিত হতে হবে আমাকে ।

স্বার্থপরের মত কেবলই মনে হয়, কী এমন ক্ষতি হয় প্রকৃতির যদি এই সময়কে থামিয়ে দেয় এখানে কিছুদিনের জন্য! কী এমন ক্ষতি হয় এই পৃথিবীর যদিবা আমি আমার যৌবনের এই সোনালী দিনগুলোকে স্থায়িত্ব পেতে দেখি আরও কিছু দিনের জন্য ! কিন্তু সেটা তো হবার নয় । আমি হাজার চাইলেও পৃথিবীর আহ্নিক গতি কিংবা বার্ষিক গতি মন্থর হবেনা । যে সোনালী প্রহর গুলো অতিক্রম করে চলেছি আমি, সেই রকম কিছু সোনালী সুখের প্রতীক্ষায় রয়েছে আরও কতজন পরম আগ্রহে । তাদেরকে তো সেই অনাগতের দিকে নিয়ে যেতে হবে এই প্রকৃতি আর এই পৃথিবীর। সেই নতুনের জন্যই ছেড়ে দিতে হবে আমার আজকের স্থান।

মৃত্যু অনিবার্য । মরণে কোন আপত্তিও নেই , কিন্তু বার্ধক্যকে কোনভাবেই জৌলুসপূর্ণ বা আবেদনময়ী মনে হয়না আমার । একটি বছরান্তে আরেকটি বছরের যাত্রা শুরুর সাথে সাথে আমি , আমরা এগিয়ে চলেছি সেই পাণ্ডুর বার্ধক্যের দিকে । বার্ধক্য মানেই দেহ-মনে শিথিলতা , ক্ষয়িষ্ণু দৃষ্টি , বুদ্ধিমত্তায় অসাড়তা , ভাবনা চিন্তায় বৈকল্য , দৈহিক ভালবাসায় অপারগতা । বার্ধক্য মানেই তার সাথে অবশ্যম্ভাবিভাবে আগমন ঘটবে সামান্য হলেও পরনির্ভরশীলতা । প্রাপ্ত ভালবাসায় হবে ক্রমাগত ঘাটতি । প্রেমহীন, অধিকারহীন  একটু একটু করে করুণার সাথে বসবাস। অপেক্ষার ফলাফল হয় উপেক্ষা । আহ্‌ ! কী করুণ পরিণতি এই উচ্ছল, উৎচ্ছাসপূর্ণ যৌবনের! কী প্রচণ্ড বৈভব , জৌলসপূর্ণ আর শক্তিময়তায় পূর্ণ এই যৌবনের কী অনাকাঙ্ক্ষিত রূপ সেই বার্ধক্যে । এরপরও কি সম্ভব আরও একটি নতুন বছরকে স্বাগত জানানো! যেখানে নতুন বছর মানেই আমি নিজে আরও পুরাতন, আরও বয়স্ক হয়ে যাওয়া ।  তবুও তোমাকে স্বাগতম হে নব-বর্ষ ।