পুরো ভিডিওটা দেখার সাহস আমার হয়নি। একটা নিউজ চ্যানেলের খবরের অংশ হিসাবে যেটুকু দেখেছি তাতে আমার পক্ষে কান্না ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। লুকিয়ে কেঁদেছি পাছে আমার ছোট ছেলেটি আমাকে প্রশ্ন করে বসে যে আমি কেন কাঁদছি। কী উত্তর দিতে পারতাম তাকে! কেমন করে ওকে বলতে পারতাম মানুষ এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে সেই কথা ! ওই ভিডিও কোনভাবেই ওকে দেখানো সম্ভব ছিলনা। চোর নয় , চোর সন্দেহে এতটুকু একটা বাচ্চা ছেলেকে এইরকম পৈশাচিক নৃশংসতায় এবং উল্লাসে পিটিয়ে হত্যা করা কোন ধরনের মানুষের পক্ষে সম্ভব! যখন দেখেছি, যতবারই ভাবছি, যতবারই শিশু রাজনের ছবি চখে ভেসে উঠছে সেখানে আমার নির্ঝরের ছবিটা ভেসে উঠছে আমার চোখে । আমার ছেলেটার বয়সও তের হলো । আমি শান্ত থাকতে পারছিনা । আমার বুকটা হাহাকার করে উঠছে, দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। খবরের কাগজের ওয়েব সাইটে , ফেসবুকে ঢোকাটাও কষ্টকর হয়ে উঠছে কারন সর্বত্রই শিশু রাজনের নির্যাতনের ছবি, কান্নার ছবি।
বাংলাদেশে চোর পিটানো বা গনপিটুনি নতুন কিছু নয় কিন্তু শিশু রাজনের ঘটনাকে তার সাথে মেলানো যাচ্ছেনা । এখানে ক্ষোভের চাইতে উল্লাসটা বেশি ছিল । পেছন থেকে হাসির শব্দ আসছিল রাজনের চিৎকারের সাথে সাথে। ছেলেটার পা মাটির সাথে পারা দিয়ে ধরে রেখে রড দিয়ে পায়ে পেটানো হচ্ছিল । ঘারে , হাতে রডের আঘাত । সবচেয়ে বড় কথা রাজন একটা বাচ্চা ছেলে । কোন পড়ানে কোন মানুষ পারে এমন নৃশংস হতে একটা শিশুর সাথে। এই পাষণ্ডদের এমন শাস্তি দেয়া উচিৎ যাতে শিশু নির্যাতনকারিরা আর কোনদিন এমন করার সাহস পাবেনা । দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আছে ঘুষ , দুর্নীতি , উন্নাসিকতা । আর সেকারণেই মানুষ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে দিনদিন । শান্তির জন্য যেমন কখনো কখনো শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন তেমনি এই ধরনের বর্বর মানুষদেরকে মানবিকতা শিক্ষা দেয়ার জন্য দরকার কঠিন থেকে কঠিনতর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।