কেমন হবে এবার আমাদের ‘বৈশাখ বরণ’

নিতাই বাবু
Published : 7 April 2016, 02:17 PM
Updated : 7 April 2016, 02:17 PM

আর ক'দিন পরেই আমাদের দরজায় কাড়া নাড়বে পহেলা বৈশাখ৷ নিরানন্দে কারো দিন কাটলেও পহেলা বৈশাখের দিন আর কোন নিরানন্দ নয়, শুধুই আনন্দ উদ্দীপনা৷ শহরে যারা বসবাস করে প্রায় অধিকাংশ পরিবারের ঘরেই ইলিশের ঘ্রাণ৷ পহেলা বৈশাখতো আমাদের জাতিগত ভাবে রক্তের সাথে মেশা৷ ঐ দিন ইলিশ না হলে কি আর চলে? মোটেই চলেনা, ঘরে না হোক ঐ দিন বাইরেও পান্তা ইলিশের অভাব থকেনা৷ তবে এর ব্যতিক্রম ঘটে আবার গ্রামে, যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে ইলিশতো কাল্পনিক৷ গ্রামে শুধু ব্যবসায়ীদের বেলায়'ই পহেলা বৈশাখ৷

মুসলমান ব্যবসায়ীদের হালখাতা, আবার হিন্দু ব্যবসায়ীদের গণেশ পূজাতো হবেই৷ বর্তমানে শহর সংলগ্ন গ্রামে আবার শহরের মত পহেলা বৈশাখের হাওয়া কিছু লেগেছে ঐ শহর নিকটবর্তী গ্রামগুলোতে৷ বর্তমানে শহরের পহেলা বৈশাখ তো ঈদ, পূজাপার্বণকেও হার মানায়৷কারণ বলতে গেলে বলা যায়, ঈদে চাই নতুন জামা, পূজায় চাই নতুন জামা, বর্তমানে এই নতুনের সাথে নতুন করে যোগ হলো পহেলা বৈশাখ৷ ধনী-গরীব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের নতুন পোশাক ছাড়া পহেলা বৈশাখকে বরণ করা একেবারেই দুষ্কর৷

এখানে আর একটা কথা বলা দরকার, সেটা হলো- এই পহেলা বৈশাখ মনে হয় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল৷ তার কারণ এদেশের সম্মানিত মুসলমানদের আগের দিন, আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পরের দিন৷ এই বিভক্ত গতকয়েক বছর ধরে লক্ষণীয়৷ বাংলা সনের যেকোন একটা তারিখের জন্যই আজ আমরা একমায়ের আঁচলতলে থেকেও দুই ভাগে ভাগ করে এই বৈশাখকে বরণ করতে হচ্ছে৷ যাক যেভাবেই হোক বরণতো করছি এই বৈশাখকে৷

এই বৈশাখ ঘিরে আবার আতঙ্কেরও কমতি নেই আমাদের৷ স্মরণে আছে সবার গতবছরের কথা, ঢাবির TSC তে কী ঘটেছিল সেটা আজও মনে পড়লে শরীরে কাটা ধরে৷ সেদিন আমার মায়ের বখাটে সন্তানেরা, আমার অবলা বোনদের উপর কীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল সেই দৃশ্যগুলো এখনো ইউটিউবে দেখলে নিজেকে অপদার্থ মনে হয়৷ কারণ বলতে গেলে বলবো যে আমিওতো কোন এক অভাগী মায়ের সন্তান, সেদিন ওরা কি মানুষ ছিল? আমার মনে হয়না যে ওরা মানুষ, ওরা ছিল মানুষ রূপী এক ভয়ংকর জানোয়ার৷ যাক সেবারের সেসব কথা, পাপ কাউকে ক্ষমা করতে জানেনা, পাপ করলে পাপের সাজা ভোগের আগে মৃত্যুবরণ করলে বাকিসাজা নিজের রক্তের উপর বা বংশের উপর গড়ায়৷

এবার আগে থেকে শুনা যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরীর কাজ সম্পন্ন করে রেখেছে৷ আর আমরা দেশবাসীও তাদের কাছথেকে এমনটাই আশাকরি, যাতে গতবারের ঘটনা এবারে পুনরাবৃত্তি না হয়৷ আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাক সকলের মন, শুভহোক এবারের পহেলা বৈশাখ৷ আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাক আমাদের নতুন প্রজন্ম৷ এসো হে বৈশাখ এসো এসো।