নারায়ণগঞ্জ টু গোপালগঞ্জ, ভায়া টেকেরহাট

নিতাই বাবু
Published : 26 April 2016, 01:58 AM
Updated : 26 April 2016, 01:58 AM

গত ২২/০৪/২০১৬ ইং ভোর ছয়টার সময় রওনা দেই জেলা শহর গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে। গোপালগঞ্জ বৌলতলী কড়পাড়া আমার মেয়ের বাড়ি। ২১ তারিখ রাতেই আমার পরিচিত এক অটোরিক্সা চালককে বলে রেখেছি আমাকে যেন ভোর ৫:৩০ মিনিটে আমার বাসা থেকে চিটাগাং রোড নেওয়ার জন্য চলে আসে। অটোরিক্সা চালক রাজি হয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল, আমি বুঝতে পারলাম ও ঠিক সময়মত চলে আসবে।

২২তারিখ সকালবেলা তাই হলো, বাসার সামনে রিক্সা খানা রেখে আমাকে ঢাকতে লাগলো। আমি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ঘরের দরজা খুলে অটোরিক্সা চালককে বললাম ঘরে এসে বসেন। ও বসলো আমি হাত মুখ কোন রকম ধুয়ে তাড়াতাড়ি করে জামাকাপড় পরিধান করে বাসা থেকে বাহির হই। আমার ভাড়াবাসা নারায়নগঞ্জ আরামবাগ, আরামবাগ থেকে ২নং ঢাকেশ্বরী বাজার যখন আসলাম আমি বললাম ভাই সামনে চা দোকানে রাখবেন, চা বিস্কুট খাব দু'জন তারপর যাব গন্তব্যে। অটোরিক্সা চালক বললো চা না হয় খেলাম তবে একটা কথা বলবো? বললাম বলেন কী বলবেন।

তখন দু'কাপ চায়ের অর্ডার দিতে দিতে বললো এত তাড়াতাড়ি মেয়ের বাড়ি যাচ্ছেন কেন? বললাম আমার মেয়ের ছেলে হয়েছে, আমার স্ত্রী সেখানে, স্ত্রীকে আনতে যাচ্ছি বুঝলেন! এসব কথা বলতে বলতে চা বিস্কুট খাওয়া শেষ। আবার ছুটলো অটোরিক্সা চিটাগাং রোডের উদ্দেশে। চিটাগাং রোড এসে অটোরিক্সা চালককে ভাড়া দিলাম ৬০/=টাকা।  অটোরিক্সা চালক আমার কাছথেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন নারায়নগঞ্জের উদ্দেশ্যে, আমি গেলাম কোমল মিনিবাসের সামনে। যাবো যাত্রাবাড়ি, বাস ভাড়া ২০/=টাকা, নামবো যাত্রাবাড়ি। যাত্রাবাড়ি থেকে মাওয়া ফেরি ঘাঁট। বাসভাড়া মাত্র ৭০/=টাকা।  মাওয়া যেতে সময় লাগলো দেড়ঘন্টা।

মাওয়া ফেরি ঘাঁটের তিন কিলোমিটার আগে থেকে পদ্মা সেতুর কাজ আরম্ভ, অনেক প্রস্থ রাস্তা যা ব্রিজে উঠার প্রথম ধাপ। অামাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু। সেতু (Bridge) যে কোন প্রকারের প্রতিবন্ধক অতিক্রম করার জন্য প্রাকৃতিক কৃত্রিম ভাবে গঠিত সংযোগ, একটি সেতুর নকশা ও নির্মাণশৌলী নির্ভর করে তার প্রয়োজনীয়তা, নির্মাণস্থলের প্রাকৃতিক অবস্থান, ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী এবং বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণের উপর গড়ে উঠে একটি সেতু। আর সেই সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর দিয়ে যে বহুমূখী সেতু। এই সেতু দিয়ে যুগপৎভাবে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল করবে।

এর মাধ্যমে লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ এর সাথে শরিয়তপুর, মাদারীপুর যুক্ত হবে।  ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। পদ্মাসেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১৫কিলোমিটার। দ্বিতলবিশিষ্ট এই সেতু নির্মিত হবে কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে। এর উপর দিয়ে যানবাহন নিচে দিয়ে ট্রেন চলবে। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে ১২ই ডিসেম্বর ২০১৫ইং তারিখে। শেষ হওয়ার কথা ২০১৮ইং সালে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকারী ঠিকাদার, চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিঃ সেতুটির প্রস্থ হবে ১৮.১০মি (৫৯.৪ফু), যদি ২০১৮ সালের শেষ দিকে জনগণের জন্য উম্মুক্ত হয়, তবে আমি নারায়নগঞ্জ হইতে ভোরবেলা রওনা দিয়ে আমার মেয়ের বাড়ি গিয়ে সকালবেলার নাস্তা খেতে পারবো আশা করি।

যাক সেব কথা, দেরি হলে আবার লঞ্চ ফেল। তাড়াতাড়ি করে লঞ্চে গিয়ে বসলাম, লঞ্চ ভাড়া মাত্র ৩৩/=টাকা। মাওয়া থেকে কাওড়াকান্দি যেতে সময় লাগলো দেরঘন্টা। কাওড়াকান্দি পৌঁছলাম তখন সকাল ১০টা। লঞ্চ থেকে নেমে সোজাসুজি চলে এলাম টেকেরহাটগামী মাইকো'র সামনে। আবার চায়ের পিপাসা পেল, আবার চা বিস্কুট খেলাম। চা বিস্কুট খেতে খেতে নজর গেলো হোন্ডা আরোহণকারীদের উপর। চা দোকানে বেগটা রেখে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে গেলাম হোন্ডা আরোহণকারীদের সামনে। আমাকে দেখা মাত্র বললো কোথায় যাবেন? আমি বললাম টেকটরহাট যাবো, বললো আসেন আপনারে নামিয়ে দিয়ে আসি৷আমি বললাম তো ভাড়া কত দিতে হবে? আবার বললো আপনি কি একা? বললাম হ্যাঁ। একজন বললো আসেন ৭০০/=টাকা দিবেন জটপট দিয়ে আসি। আমি বললাম না ভাই আমি এত টাকা দিতে পারবো না। বললো কত দিবেন শুনি? আমি বললাম ৪০০/=টাকা দিলে হয় না! বললো না ভাই, আমার ৪০০/=টাকার তেল'ই লাগবে। আমি চিন্তা করলাম কি আছে জীবনে,যাই হোন্ডা চড়ে। আমাকে বার বার বলতে লাগলো ভাই আর কিছু বাড়ান না! আমি তখন ৫০০/=টাকা বললাম, হোন্ডা আরোহি রাজি হয়ে বললো আসেন। তারপর হোন্ডা চড়ে ছুটলাম টেকেরহাটের দিকে।

টেকটরহাট যেতে সময় লাগলো একঘন্টা। টেকটরহাট নেমে হোন্ডাআরোহিকে ৫০০/=টাকা দিয়ে উঠলাম গোপালগঞ্জগামী বাসে। আমার মেয়ের বাড়ি গোপালগঞ্জ যাওয়ার মাঝখানে বৌলতলী বাজার। মেয়ের বাড়ি পৌঁছলাম বেলা দুই ঘটিকায়, মেয়ের বাড়ি থাকলাম মাত্র মাঝখানের একদিন। ২৪/৪/২০১৬ইং তারিখে আবার পরিবার নিয়ে গোপালগঞ্জ হইতে নারায়নগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আসার সময় মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি নারায়ণগঞ্জ পৌঁছলাম।