নারায়ণগঞ্জ শহর যানজট মুক্ত হোক

নিতাই বাবু
Published : 28 April 2016, 09:30 PM
Updated : 28 April 2016, 09:30 PM

সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক পরিচিত নাম নারায়ণগঞ্জ৷১৮৭৬ সালে নারায়নগঞ্জ শহরের সার্বিক উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা করার লক্ষে নারায়নগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালে ৫ই মে নারায়নগঞ্জ পৌরসভা, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা ও কদমরসূল পৌরসভাকে বিলুপ্ত করে ২৭টি ওয়ার্ড সমন্বয়ে ঘটিত হয় নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। এটি বাংলাদেশের সপ্তম সিটি কর্পোরেশন। এর আয়তন৭২.৪৩কিঃমিঃ।

শহরের কেন্দ্রস্থল রাস্তাগুলো হচ্ছে চাষাঢ়া, নিউমেট্রো সিনেমা,কালীর বাজার, ১নং রেলগেইট, ফলপট্টি, চেম্বাররোড, পাঁচনং ঘাঁট, টানবাজার, নিতাইগঞ্জ, ২নং রেলগেইট, পুরাতন কোর্ট সংলগ্ন ফেন্ডস মার্কেটও চাষাঢ়া-জামতলা-মাসদাইর গোরস্থান।

এসব রাস্তা দিয়ে দিনরাত হাজার হাজার বাস, কার, ট্রাক, মিনিবাস, অটোরিক্সা ও দেহচালিত রিক্সা চলাচল করে। এসব স্থানে দিনেরবেলা প্রায় সবখানেই যানজট লেগেই থাকে যা শহরবাসীর জন্য এক মরণফাঁস। যানজট নারায়নগঞ্জ শহরবাসীর কাছে মরণঘাতি এইডসের মতোই এক ভয়াবহ আতঙ্কের নাম। এইডসের ছোঁবলে যেমন মৃত্যু নিশ্চিত তেমনি দুর্বিষহ হয়ে ওঠা যানজটও দিন দিন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে শহরবাসীর যাপিত জীবনকে।

যানজটে আটকে থাকার কারনে নষ্ট হচ্ছে শ্রমঘন্টা, বাড়তি জ্বালানি পোড়াতে হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে প্রভাতি কালীন কোমলমনা শিক্ষার্থীদের স্কুলের লেখাপড়া।অনেক সময় দেখাযায় সময়মত স্কুলে না পৌঁছানোর কারনে শিক্ষকদের গালমন্দও শুনতে হয়। কি অলিগলি কি আর মেইন রোড,সবখানেই যানজট। বর্তমানকালে গার্মেন্টস এর কাজতো একটা রুটিন বাঁধা। প্রতদিন ২ মিনিট করে যদি একটা শ্রমিক ডিউটি লেইট করে তবে মাস শেষে ঐ শ্রমিকের একদিনের পরিশ্রমিক কর্তন করা হয়। যানজটের কারনে ঐ সব শ্রমিকেরও মাথায় হাত।

যানজট এখন সারা বছরের সমস্যা। এবং নারায়নগঞ্জবাসীর জন্য এক বিড়ম্বনার নাম। এমনকি ছুটির দিনগুলোতেও যানজটের নিয়তি এড়ানো শহরবাসীর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রের সড়কগুলোতে প্রায়ই লেগে থাকে মহাযানজট। আমাদের নারায়নগঞ্জের উন্নয়নের অগ্রগতি থামিয়ে দিয়েছে এ ভয়ঙ্কর যানজটে, সময়ের এক ফোঁড় আর অসময়ের দশ ফোঁড় সমান কথা। সময় ও নদীর স্রোত কারও জন্য বসে থাকেনা। যানজটের কারনে যে সময় নষ্ট হচ্ছে অর্থনীতির বিচারে তা ভয়াবহ এ সমস্যা৷ নারায়নগঞ্জের উত্পাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা এ সমস্যা সমাধানে পূর্বসূরিদের মতে বর্তমান নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোেরশনের উদ্যোগ থাকলেও তার অবস্থা কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নাই-এর মতো।

রাজধানী ঢাকার মত নারায়নগঞ্জে কোন ফ্লাইওভার নাই৷ নাই রাস্তা পারাপারের জন্য কোন ওভারব্রিজ, নাই কোন লাল সবুজ বাতির সিগন্যাল৷ আবার নাই বিশাল প্রস্থ কোন রাস্তা৷রাস্তা আছে সেই প্রাচীন আমলের হাতে মাপা পাঁচহাত প্রস্থ মহল্লার গলির মত।উল্লেখ করা যেতেপারে যেমন টানবাজার, কলীর বাজার, নিতাইগঞ্জ এই রাস্তাগুলো ১৮৭৬সালে যেমন প্রস্থ ছিল এখনো একই রকম অবস্থায়ই আছে। অদূর ভবিষ্যতে এসব রাস্তা আর একহাতও বাড়াতে পারবেনা। কিন্তু এসব স্থানেই হচ্ছে নারায়নগঞ্জের প্রাচ্যেরডান্ডি।

কালীরবাজারও টানবাজারে একটা মালবাহী ট্রাক ঢুকলে আর একটা গাড়ি সাইট নিয়ে যেতে খুবই কষ্ট হয়৷ তারপরেও এই কালীরবাজার দিয়েই ঢাকা-নারায়নগঞ্জ যাত্রীবাহী বাস চলাচলের রুট৷ বর্তমানে নারায়নগঞ্জের প্রধান বাসটার্মিনাল হচ্ছে ১নং রেলগেইট, লঞ্চঘাঁট সম্মুখে। এখানে এলোপাতাড়ি গাড়ি রাখার কারণে পায়ে হেঁটে চলাও দায়। এই জায়গা হলো শহরের নাভি,আর এখানেই নারায়নগঞ্জবাসীর নাভিশ্বাস। এই জাগায়,এই বাসটার্মিনালের কারনে চেম্বার রোড, ২নং রেলগেইট নিত্য দিনের যানজটের মূলকারণ। একবার জ্যামে পড়লে একঘন্টা সময় শেষ।

এই যানজট সৃষ্টিকারী একমাত্র বেপরোয়া বাসড্রাইভাররা। কার আগে কে যাত্রী উঠাবে, কার আগে কে যাবে৷ প্রধান বাসটার্মিনাল হতে বাসগুলো ছেড় ২নং রেলগেইট অতিক্রম করে চলেযায় চাষাঢ়া, চাষাঢ়া গিয়েও যাত্রী উঠানোর বাহানা করে প্রায আধাঘন্টা সময় শেষ করে। আর যখন ঢাকা হতে নারায়নগঞ্জ চাষাঢ়া অাসে, চাষাঢ়ার যাত্রী নামিয়ে সোজাসুজি চলে মিশন পাড়া রোড ধরে নিউমেট্রো সিনেমা হল হয়ে কালীরবাজার, এসব বড় বড় বাসগুলের কারণে কালীরবাজার প্রবেশদ্বার হতেই শুরু হয় মহাযানজট।

এই নিত্য দিনের যানজট থেকে কীভাবে মুক্তি পাব আমরা নারায়নগঞ্জবাসী? দিন যাচ্ছে, গাড়ি বাড়ছে, সমান তালে বাড়ছে চীনের তৈরি অটোরিক্সা, বাড়ছে আগেকার দেহচালিত তিনচক্রযান। বর্তমানে এমতাবস্থায় যানজট নিরসনের জন্য বর্তমান ১নং রেলগেইট বাসটার্মিনাল সিটি কর্পোেরশন যদি চাঁনমারীতে হস্তান্তর করতে পারে তবে শহর থেকে চিরদিনের জন্য যানজট বিদায় নিবে এটা ১০০% নিশ্চিত।

বহু চেষ্টার পর এই চাঁনমারী বেদখলকারীদের হাত থেকে দখলমুক্ত করার সময় বলা হয়েছিল এই চাঁনমারী নারায়নগঞ্জের প্রাধান বাসটার্মিনাল করা হবে৷দখলমুক্ত ঠিকই হলো, হয়নাই বাসটার্মিনাল৷ এত বড় বিশাল জায়গা দখলমুক্ত হয়ে আবার বেদখল হতে চলছে। এই সুবিশাল জায়গা যদি এইভাবে ফেলে না রেখে, এই জায়গায় বাসটার্মিনাল করা হয় তবে এই বাসটার্মিনালটি হবে বাংলাদেশের সর্ববৃহত বাসটার্মিনাল। এখন এ সমস্যা সমাধানে আন্তরিক প্রয়াসই এখন নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোেরশনের লক্ষ হওয়া উচিত।