বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে

নিতাই বাবু
Published : 29 June 2016, 03:25 PM
Updated : 29 June 2016, 03:25 PM

আমাদের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে, সাথে আমরা জনগণও বদলে যাচ্ছি, এগিয়ে যাচ্ছি ৷ সে'দেখা দেখে আসছি বহু আগে থেকে ৷ জন্মের পর বয়স যখন পাঁচ বছর হয়, তখন পড়া-লেখা শিখার জন্য হাতেখড়ি দেওয়ার জন্য মাথাব্যথা উঠে যায় অভিভাবকদের ৷ সম্মানিত মুসলমান ভাইদের এই হাতেখড়ি দেওয়ার নিয়ম আমার জানা নেই, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়মটা আমার জানা আছে ৷ কারণ:- আমি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী তাই ৷ অমার বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন আমাকে হাতেখড়ি দেয়, তা আমার মায়ের মুখ থেকে শোনা ৷ মা' বলেছিলেন ঠিক বিদ্যাদেবী স্বরস্বতী পূজার দিন আমার হাতেখড়ি দেওয়া হয়, সেই স্বরস্বতী পূজার পুরোহিত দ্বারা ৷ আসলে হাতেখড়ি দেওয়ার নিয়মটা সম্পূর্ণ হিন্দুর্মীয় সংস্কার বিশেষ ৷ এর মাধ্যমে একটা শিশুর বিদ্যাচর্চা শুরু হয় ৷ এই হাতেখড়ি দেওয়ার আগে তাকে লিখিত ভাবেও কিছু শেখানো হয় না ৷ তার ব্যতিক্রম আমার বেলায়ও পাল্টায়নি ৷ এদিন অতি কষ্ট করে বাবা আমার জন্য একটা নতুন জামা কিনে আনলেন, যার নাকি দাম ছিল সাড়ে তিন টাকা মাত্র ৷

পুরোহিত আসার পূর্বে আমাকে নতুন জামাটা পড়িয়ে কপালে চন্দন তিলক এঁকে দিয়ে সাজিয়ে রাখলেন ৷ এই নতুন জামা পেয়ে আমি নাকি খুব খুশি হয়েছিলাম, যা মা' ও আমার বড়দিদি'রা বলেছিলেন ৷ তারপর একটা কাঁসার থালের মধ্যে একটা লম্বা তালপাতার দ্বিখণ্ডের এক খণ্ড, আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বানানো একটা কলম ৷ স্বরস্বতী পূজা সেরে পুরোহিত মহাশয় আমাদের বাড়িতে আসলেন, আমাকে ঘরের মাঝখানে একটা পিঁড়ির উপরে বসিয়ে দিলেন, পুরোহিত মহাশয় আমার এক বড়দিদিকে বলেন ওর হাতে বাঁশের কলমটা দিয়ে তুমি ওর হাতখানা চেপে ধর তালপাতায় লেখার জন্য ৷ বড়দিদি তাই করলেন, বড়দিদি আমার হাতে কলম ধরিয়ে দিয়ে আমার হাত ধরে তালপাতায় লেখা আঁকতে শুরু করলেন, আর পুরোহিত মহাশয় মন্ত্র পড়তে লাগলেন৷ এভাবে একটা তালপাতায় স্বরবর্ণের দু'চারটা বর্ণ, আর ব্যঞ্জনবর্ণের দু'চারটা বর্ণ লিখলো আমার হাত ঘুরিয়ে ৷ প্রিয় পাঠক, এই হলো আমার হাতেখড়ি ৷ আসলে প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী নিয়ম হলো হাতে খড়িমাটি ধরিয়ে দিয়ে শ্লেটে লিখতে শিখানোকেই হাতেখড়ি বলতো বা বলে থাকে ৷ যাই হোক, সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি যে, আমাদের এদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সাথে-সাথে আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি ৷ ১৯৭১ সালের আগে আমারা ছিলাম পরাধীন, ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ হইতে ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত যুদ্ধ করে আমরা এদেশ স্বাধীন করেছি, ছিলাম পরাধীন, হলাম আজাদি ৷ এটা ছিল আমাদের এগিয়ে চলার প্রথম ধাপ, তারপরে আস্তে-আস্তে এগুতে থাকি আমরা ৷ এর আগে ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা রক্ষা করার জন্যও আন্দোলন করে উর্দুভাষা হটিয়ে বাংলা ভাষা বহাল রেখেছি, যা এখন সারা দুনিয়ায় ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসাবে পালন করে থাকে ৷ সেই আমলে এটাও ছিল আমাদের এগিয়ে যাওয়ার একটা নমুনা মাত্র ৷ ১৯৭১-১৯৭৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ছিল আমাদের পোড়াবাড়ি ঠিকঠাক করে নেওয়ার সময়, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশের সবকিছু আয়ত্তে আসতে বা আনতেও একটু সময়ের প্রয়োজন হয় ৷ সেই হিসেবে যুদ্ধবিরতির চার বছর বেশি একটা সময় তো নয়, সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার মধ্যেই আমরা আমাদের ললাটে এঁকেছিলাম এক কলঙ্কিত ঘটনা, যা ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট কাল রাতে ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়িতে ৷ এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই হারিয়েছি আমাদের জাতির জনক'কে, যার ডাকে আমরা হয়েছিলাম আজাদি, পেয়েছিলাম স্বাধীনতা ৷

জাতির জনক হারিয়ে শোকগ্রস্ত মন নিয়ে সামনের দিকে এগুতে লাগলাম আস্তে- আস্তে, পার করলাম কয়েকটি বছর ৷ এই কয়েকটি বছরের মধ্যে আমাদের দেশের অনেক রাজা-মহাজারার উত্থানপতনও দেখলাম সবাই ৷ সব শেষে দেশের হাল ধরলেন জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী, বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ এগিয়ে চলছি আমরা ধাপে-ধাপে, মাথা উঁচু করে চলছি বিশ্বদরবারে ৷ আগেকার সময় আমরা কেউ সৌদি আরব চাকরি করতে গেলে আমাদের মিসকিন বলতো, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই আমাদের গরিব-মিসকিন বলে জানতো বা ডাকতো, কিন্তু এখন আর তা বলে না ৷ আমরা নিম্ন আয় হতে মাধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করেছি ৷ পরিচিতি লাভ করেছি আমরা বাঙ্গালী জাতি হিসাবে ৷ যা সারা বিশ্বের বিস্ময়, আর আমাদের এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে ৷ ১৯৭১ সালের আগে যেখানে ছিল ডোবা-নালা আর পুকুর, সেখানে আজ রড-সিমেন্টের তৈরি বিশাল-বিশাল ভবন ৷ আগে নাম শুনতাম ঈসা খাঁর রাজধানী সোনার গাঁও এর পানামের কথা, পানাম গেলে নাকি আনাম (আস্ত) আসা যেত না, বড়-বড় দ্বিতল ভবনের জন্য ৷ ভবনের উপরের দিকে চেয়ে-চেয়ে হাঁটতে-হাঁটতে নাকি ঢুঁস খেয়ে পড়ে পা' কোমর ভেঙ্গে আসতে লাগতো ৷ এই সেই দেশে আজ ২৪/৩০ তলা ভবনও রয়রছে বহু, হাতে গোনে শেষ করা যাবে না ৷ আমরা এগিয়ে চলছি দুর্বার গতিতে, সব দিক দিয়ে ৷ আমি ১৯৮৬ সাল থেকে যখন সংসার জীবন শুরু করলাম তখন চাউলের মূল্য ছিল সারে পাঁচ টাকা, এখন নিম্ন আয়ের মানুষের নিত্য খাওয়ার চাউলের মূল্য ৫০/৫৫ টাকা, তাও কিনে খাচ্ছি দিব্বি আরাম আয়েসে, তারপরেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ৷ আমাদের সময়ে যখন স্কুলে পড়া-লেখা করতাম তখন দেখতাম সমস্ত স্কুলের দায়দায়িত্ব ছিল হেডমাস্টার মহাশয়ের উপর, আমরা কোন অভিভাবক প্রতিনিধি দেখি নাই ৷

আর এখন, প্রতিটা স্কুলের দায়দায়িত্ব অভিভাবক প্রতিনিধিদের উপর বর্তায়, যা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার এক মাইলফলক দৃষ্টান্ত ৷ আমরা ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছি শুধু পাঁচটাকা ভর্তি ফি দিয়ে, যা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে পারতাম, এর মধ্যে আর কোন ভর্তি ফি'র দরকার হতো না ৷ আর এখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ধাপে-ধাপে, স্কুলে ভর্তি ফি দিচ্ছি বছরের পর বছর মানে প্রতি বছর ৷ জিপিএ ৫ পেলেও আবার ভর্তি ফি দিয়ে ভর্তি হয়ে স্কুলে প্রবেশ করতে হবে, না হয় আর হয় না, বাৎসরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নালে তো ভর্তি ফি হয়ে যায় দ্বিগুণের চেয়েও অধিক, তা দিয়েই ভর্তি হতে হয় ৷ আমরা কত দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছি, যা দেখে গোটা বিশ্ব হতবাক ৷ ১৯৮৪ সালে যখন টেক্সটাইল মিলে কাজ করতাম তখন মনে-মনে ভাবতাম যে, আমি'ই হয়তো একজন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কারিকর ৷ কারণ আমি বস্ত্র কারিকর, বস্ত্র ছাড়া কারো ইজ্জত বাঁচে না, তাই আমি শ্রেষ্ঠ কারিকর ৷ এখন গার্মেন্ট্স শিল্প, কোটি-কোটি লোকের কর্মসংস্থান, যা দেশের জন্য এক মঙ্গল সূচক শিল্প, যা দিয়ে আমরা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের লোকের ইজ্জত রক্ষা করতে পারছি ৷ গার্মেন্ট্ স শিল্প দিয়েও আমরা এগিয়ে আছি বিশ্বদরবারে, যা পৃথিবীর অন্য কোন দেশ নেই যে, আমাদের সাথে পাল্লা দিয়ে পোষাক রপ্তানী দিতে পারে ৷ উন্নয়নের দিক দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছি আমরা, ছোটবেলায় যখন ধান-গম ভাঙ্গানোর জন্য বাজারে যেতাম, দেখতাম বিশাল এক মেশিন, তা আবার চলতো ডিজেল দিয়ে ! যখন চালু দিতো তখন দশগ্রামের লোক বাড়িতে বসেই ঐ মেশিনের শব্ধ শুনতে পেত ৷ এখন আর সেই মেশিন নেই, আছে বড়-বড় ফ্লাওয়ার মিল, এসব মিলের ধান ভাঙ্গানোর মেশিনটা চালু দিতে লাগে ১০০-১৫০ মন ধান, এর কম হলে মেশিন চালুই হবেনা ৷ এগিয়ে যাচ্ছি আমরা বুকের পাটা টান করে ৷ এগিয়ে যাচ্ছি আমরা দুর্নীতিতেও, দুর্নীতিতেও আমাদের একটা সুনাম আছে, এই দুর্নীতির বিষয়ে আমরা জিপিএ ৫ পেয়েছি কয়েকবার ৷ বর্তমানে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা কয়েকটি বিষয় নিয়ে, এর মধ্যে ইদানীং কালে গুপ্তহত্যায়ও আমরা প্রথম স্থান অর্জন করতে পারি, আরো আছে ক্রসফায়ার, (বিচার বহির্ভূত হত্যা) গেল কিছুদিন আগেও পুলিশ রিমান্ডে থাকা অবস্থায় ক্রসফায়ারে মৃত্যু হলো এক ১৮ বছরের যুবক ৷ এই বিষয়ে আমরা হয়তো হতে পারি বিশ্বসেরা ৷

আমরা কিছুতেই পিছিয়ে নেই, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি দলীয়করণেও, সর্বত্রই এই বিষয়ে লক্ষণীয় ৷ যে সময় যে দল'ই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকুক না কেন, দলীয় ক্ষমতার বাহাদুর হয়ে যাই আমরা সবাই ৷ উৎপাদনের দিক দিয়েও আমরা এগিয়ে আছি, যখন আমরা মধ্যঅায়ের দেশে পা' রাখলাম, তখনই ভিক্ষুকের উৎপাদনও বাড়তে লাগলো, যা আগেকার সময়ের চেয়ে চারগুণ বেশি ৷ গ্রামে-গঞ্জে-হাট-বাজারে সর্বত্রই ভিক্ষুক আর ভিক্ষুক, কমতি নেই ভিক্ষুক উৎপাদনের ৷ এই উৎপাদন বন্ধে একদিন জাতিয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কঠোর ভাষায় বলেছিলেন ভিক্ষা কোন পেশা নয়, অতছ এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে কিছু অসাধু লোক, এটাকে আইন করে বন্ধ করা হবে, আপনারা যেখানে ভিক্ষুক দেখবেন, তাদের খোঁজখবর নিয়ে তাদের পূণ্যবাসনের ব্যবস্থা করবেন ৷ বলেছিলেন বাংলাদেশ সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের দিকে চোখ রেখে, তারপরেও বন্ধ হচ্ছে না এই ঘৃণিত পেশা ভিক্ষাবৃত্তি ৷ আমরা এত এগিয়ে যিচ্ছি যে, আইনকেও তোয়াক্কা করি না৷

ঘুসের ব্যাপারটার দিকে খেয়াল করলে মনে হয়, এই ঘুস যেন আমাদের জন্য একটা উপসনা, চাকরিতে, টেন্ডারে, অফিসে, হাটে-বাজারে, কেনা-বেচায় সর্বত্র ঘুস ৷ এই ঘুসের প্রশিক্ষণে পৃথিবীতে আমরাই সেরা, এবং শীর্ষস্থানে এগিয়ে আছি ৷ এগিয়ে যাচ্ছি সড়ক পরিবহনে, আগে যেখানে ছিল মুড়ির টিন বাস বা ষ্ট্যাট বাস, আজ সেখানে এিসি বাস সার্ভিস ৷ আরো এগিয়ে যাচ্ছি খেলাধুলায়, ক্রিকেটে তো কয়েকবার আমরা বিশ্বসেরাও হয়েছি ৷ পরিশেষে বলবো, আমরা ভাল-খারাপ মিলিয়ে সবদিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি শুধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ স্বাধীন হওয়ার কারণে ৷ আজ তিনি নেই, তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আমরা আরো এগিয়ে যেতে পারতাম ৷ ভবিষ্যতে আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে ভাল কর্মের দিক দিয়ে, খারাপ কর্ম, হিংসা-অহংকার পরিহার করে আরো এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় রইলাম ৷