কিছু দিন আগে গত ২৬জুন ভারতের আসাম রাজ্যের শিংমাড়ি পাহাড় থেকে দলছুট হয়ে, উজানের পানিতে ভেসে আসে ভারতীয় একটি বন্যহাতি ৷ প্রথমে আটকা পড়ে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের নয়াচরে, অবশেষে ঘুরতে ঘুরতে বন্য হাতিটি আটকা পড়ে জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার বড়বাড়িয়া গ্রামের একটি বিলে ৷
এখন কথা হলো; বানের পানিতে ২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে, ভাসতে ভাসতে একটা বন্যহাতি বাংলাদেশে আসে ৷ সাথে সাথে আমরা ঘোষণা করে দেই এটা ভারতীয় বন্যহাতি, ভারত ও দাবি করে বসে এটা ভারতের ৷ একটি বন্যপ্রাণীর গায়ে লেখা থাকেনা প্রাণীটি কোন দেশের, তবু আমরা ভালোবাসা দেখিয়ে সেই বন্য হাতিটি ভারতের কাছে ফেরৎ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি ৷ খবর পেয়ে ভারত থেকেও তিন চারজন বন বিভাগের কর্মকর্তা বাংলাদেশে আসে হাতিটিকে ফেরৎ নেওয়ার জন্য, আমরাও রাজি হয়ে যাই ভারতের ভালোবাসা পাবার আশায় ৷ সেই ভালোবাসায় আমরা হাতিটির নামও রেখে দিয়েছিলাম “বঙ্গবাহাদুর” ৷ শেষ পর্যন্ত হাতিটিকে নিয়ে বহু টানাহেঁচড়া করার পর গত ১৬ আগষ্ট সেই বঙ্গবাহাদুর শেষ নিশ্বাস ত্যগ করে, আমাদের কাঁদিয়ে চলে যায় চিরদিনের বাড়িতে ৷ আমরা মনে করেছিলাম বঙ্গবাহাদুরের ভালোবাসার বিনিময়ে বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তহত্যা বন্ধ করতে পারব, গঙ্গার পানির ন্যায্যহিষ্যা পাব, কিন্তু আমরা পেয়েছি কী?
এখন শুনছি বিহার রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত সরকার ৷ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদাহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার গঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত এই ফারাক্কা বাঁধ, যার মধ্যে আছে ১০৯টি স্লুইস গেইট ৷ ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে নির্দেশে বর্তমানে কিছু গেইট খুলে দিলেও পুরোপুরি ১০০টি গেইট খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে, যার কারণে ইতি মধ্যেই আমাদের দেশে বহু জায়গায় বন্যার অবনতি ঘটছে৷ ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সমীর সিনহা বিবিসিকে বলেন, বর্ষাকালে এমনিতেই অন্য সময়ের তুলনায় ফারাক্কার বেশি গেইট খোলা থাকে ৷ এবার বিহার প্রদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার কারণে ফারাক্কার ১০৯টি গেটের ৯টি বাদে সবই খুলে দেওয়া হবে ৷
এখন কথা হচ্ছে, বানের পানিতে ভেসে আসা একটা বন্যপ্রাণীকে ভারত দাবি করে বসলো, বলা হল, এটা আমাদের দেশের অাসাম রাজ্যের শিংমাড়ি পাহাড়ের হাতি ৷ আমরাও সায় দিলাম, ভালোবাসা বজায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলাম বন্য হাতিটিকে ফেরৎ দেওয়ার জন্য, প্রাণীটির মৃত্যুর কারণে পারিনি ফেরৎ দিতে এটা আমাদের দুর্ভাগ্য, ফেরৎ নিতে পারেনি এটা তাঁদেরও দুর্ভাগ্য ৷
এখন ছাড়ছে ফারাক্কার স্লুইস গেইট, পানির সাথে আসতে পারে ভারতীয় ছোট বড় অনেক মাছ ৷ সেই মাছ ধরবে আমাদের বাংলাদেশের নদীতে মাছ ধরার জেলেরা ৷ তখন যদি ভারত সেই মাছও দাবি করে বসে? তখন কী হবে উপায়! কাজেই ফারাক্কার স্লুইস গেইট খুলে দেওয়ার আগে, আমাদের বাংলাদেশে সমস্ত নদীতে মাছ ধরা নিষেধ করে দিলে জেলেদের জন্য অনেক ভাল হত ৷ বলা তো’ যায় না! কোন মাছ ধরে আবার কোন দোষের তলে পরতে হয়, কে জানে! দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করুণ, মাছ ধরা থেকে বিরত থাকুন ৷ হতেও পারে এটা “ভারতীয় মাছ” ৷ যেমন: হাতি’র গায়ে লেখা ছিল, “Made in India”
সৈয়দ আশরাফ মহি-উদ্-দ্বীন বলেছেনঃ
ভালো বলেছেন নিতাই দা। খুবই চিন্তার বিষয় ! 🙁
নিতাই বাবু বলেছেনঃ
সম্মানিত দাদা, চিন্তা শুধু একটাই ৷ তা হলো দেশের বন্যা সামাল দেওয়া, এর বেশি কিছু নয় ৷ ধন্যবাদ সম্মানিত সৈয়দ আশরাফ মহি-উদ্-দ্বীন দাদা, ভালো থাকবেন আশা করি ৷
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
দাদা, পারফেক্ট কোয়েশন!
ইদানীং দেখা যাচ্ছে, বলা হচ্ছে- বানের জলও নাকি ভারতের? তাহলে শুষ্ক মৌসুমের জল কার? আর এই জলের সাথে আসা পলি মাটির কি হবে? বেচারা’র কি কোন দেশের নাগরিকত্ব হবে না? 😛
ভারত থেকে প্রতিদিন যে ৫০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ আসে; সেটা কিন্তু ‘রামপালেরা’ ভুলে গেছে!
— খুব খেয়াল কইরা? 😛
নিতাই বাবু বলেছেনঃ
সম্মানিত সুকান্ত দাদা, ভারত হতে অাসা সবই ফেরৎ দিব, কিন্তু মাটি ফেরৎ দিব না ৷ ও আমার দেশের মাটি, তোমার তরে ঠেকাই মাথা” গানটা নিশ্চই আপনার মনে আছে দাদা ৷ আর “রামপালেরা” ভুলে নাই, মনে আছে ঠিকই ৷ ধন্যবাদ সম্মানিত দাদা, ভাল থাকবেন ৷
আবুল কাশেম বলেছেনঃ
জটিল ভাবনা ! 🙂 🙂 🙂
ধন্যবাদ দাদা @শ্রদ্ধেয় নিতাই বাবু!
নিতাই বাবু বলেছেনঃ
সম্মানিত আবুল কাশেম দাদা, জটিল কোনটাই নয় ৷ সবই সম্ভব দাদা ৷ মন্তব্যের জন্য অজস্র ধন্যবাদ ৷ আর আপনার নতুন লেখা পড়ার আশায় রইলাম, ভালো থাকবেন দাদা ৷
এলডোরাডো বলেছেনঃ
দাদা, একটা তথ্য দিতে চাই তবে সেটা ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য নয়।
কোথাও বাঁধ দিয়ে তারপর হঠাৎ বাঁধ খুলে দিলে প্রচন্ড একমুখী স্রোতের সৃষ্টি হয়। সেখানে যে পরিমান মাছ উজান থেকে স্রোতে ভেসে ভাটিতে আসে তার পরিমান খুব কম হয়। কারণ মাছ স্রোতের বিপরীতে চলতে বেশী স্বচ্ছন্দ বোধ করে। একারণেই বঙ্গোপসাগর থেকে ইলিশ মাছ আমাদের পদ্মা-মেঘনায় আসে। সুতরাং ফারাক্কা খুলে দেয়ার ফলে যে পরিমান মাছ এপারে আসবে, তার চেয়ে বেশী মাছ ওপারে চলে যাবে সেটা আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। এমনকি, বাঁধের ঢাল বেয়ে পদ্মার কিছু ইলিশ ও যদি ওপারে চলে যায়, তাহলে আমি অবাক হব না।
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
😛 😛 😛
— আমিও এমনটাই ভেবেছিলাম!
সেক্ষেত্রে বেশী পরিমাণে ইলিশের ঝাঁক বঙ্গপ্রসাগরের রুট ধরে ধেয়ে আসবে! ফলে পদ্মার মোহনাতে জাল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিতে পারেন!
পলিমাটির মালিকানার বিষয়ে আপনার উপদেশ কী? 😛
নিতাই বাবু বলেছেনঃ
সম্মানিত এলডোরাডো দাদা ভাবিয়ে তুললেন ৷ তবে দাদা, আপনি কখনো ভারত ভ্রমণ করেছিলেন কিনা আমি জানিনা ৷ যদি ভারত ভ্রমণ করে থাকেন, তবে হয়তো ভারত সমন্ধে বিশেষ অভিজ্ঞতা আপনার আছে আমি মনে করি ৷ পৃথিবীর কৃপণ দেশের তালিকায় বিশেষ অবদানকারী দেশ হল ভারত, আর সেই দেশের মাছ ফারাক্কার ওপারে বন্দি ৷ ভারতের মাছগুলো ভারতে থাকতে চায় না, ওরা বন্দি অবস্থায় আছে ৷ সুযোগ পেলেই দলবল নিয়ে বাংলাদেশ সফরে চলে আসে, এটা আশা করি সবার’ই জানা আছে দাদা ৷ যেমন সাগরের ইলিশ, কিছুতেই ভারত থাকতে চায় না দাদা, ওদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশ ৷ ভারত এই ইলিশ মাছকে জামাই আদরে রাখতে চায়, কিন্তু কাজ হয় না দাদা, ওরা ঘুরে-ফিরে ওদের প্রিয় জায়গা বাংলাদেশ’ই চলে আসে দলবল নিয়ে ৷ বর্তমানে এমন এক অবস্থা সৃষ্টি হয়ে গেছে ফারাক্কার ওপারে, ইদানীং আসছেও দলে-দলে ৷ আমি গ্যারাটি দিচ্ছি দাদা, আমাদের দেশের একটা মাছও ওপারে যাবে না, যদিও যায় তবে হয়তো বন্ধুতা আর ভালোবাসা দিয়ে সাথে করে আরো বহু ভারতীয় মাছ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে আশা করি ৷ ধন্যবাদ দাদা নিশ্চিন্তে থাকুন টেনশন করবেন না ৷ মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ৷ ভালো থাকবেন আশা করি ৷
জাহেদ-উর-রহমান বলেছেনঃ
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিতাই দা। 🙄
নিতাই বাবু বলেছেনঃ
জাহেদ দাদা, যদি ভারতীয় দুএকটা মাছ এসেই যায় তাহলে সেগুলি ভারতে পাঠাবো কী করে দাদা? এখন এটাই আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে দাদা ৷ তবে এলডোরাডো দাদা বলছে, মাছ আসবে না, বরং উজানের দিকে মাছ অগ্রসর হবে ৷ আপনার অভিমত কী? অভিমত ব্যক্ত করুন দাদা! ধন্যবাদ ৷