পানিতে ভেসে আসা বন্য হাতিটি ভারতের হলে, মাছগুলো হবে কার?

নিতাই বাবু
Published : 28 August 2016, 03:41 AM
Updated : 28 August 2016, 03:41 AM

কিছু দিন আগে গত ২৬জুন ভারতের আসাম রাজ্যের শিংমাড়ি পাহাড় থেকে দলছুট হয়ে, উজানের পানিতে ভেসে আসে ভারতীয় একটি বন্যহাতি ৷ প্রথমে আটকা পড়ে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের নয়াচরে, অবশেষে ঘুরতে ঘুরতে বন্য হাতিটি আটকা পড়ে জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার বড়বাড়িয়া গ্রামের একটি বিলে ৷

এখন কথা হলো; বানের পানিতে ২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে, ভাসতে ভাসতে একটা বন্যহাতি বাংলাদেশে আসে ৷ সাথে সাথে আমরা ঘোষণা করে দেই এটা ভারতীয় বন্যহাতি, ভারত ও দাবি করে বসে এটা ভারতের ৷ একটি বন্যপ্রাণীর গায়ে লেখা থাকেনা প্রাণীটি কোন দেশের, তবু আমরা ভালোবাসা দেখিয়ে সেই বন্য হাতিটি ভারতের কাছে ফেরৎ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি ৷ খবর পেয়ে ভারত থেকেও তিন চারজন বন বিভাগের কর্মকর্তা বাংলাদেশে আসে হাতিটিকে ফেরৎ নেওয়ার জন্য, আমরাও রাজি হয়ে যাই ভারতের ভালোবাসা পাবার আশায় ৷ সেই ভালোবাসায় আমরা হাতিটির নামও রেখে দিয়েছিলাম "বঙ্গবাহাদুর" ৷ শেষ পর্যন্ত হাতিটিকে নিয়ে বহু টানাহেঁচড়া করার পর গত ১৬ আগষ্ট সেই বঙ্গবাহাদুর শেষ নিশ্বাস ত্যগ করে, আমাদের কাঁদিয়ে চলে যায় চিরদিনের বাড়িতে ৷ আমরা মনে করেছিলাম বঙ্গবাহাদুরের ভালোবাসার বিনিময়ে বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তহত্যা বন্ধ করতে পারব, গঙ্গার পানির ন্যায্যহিষ্যা পাব, কিন্তু আমরা পেয়েছি কী?

এখন শুনছি বিহার রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত সরকার ৷ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদাহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার গঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত এই ফারাক্কা বাঁধ, যার মধ্যে আছে ১০৯টি স্লুইস গেইট ৷ ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে নির্দেশে বর্তমানে কিছু গেইট খুলে দিলেও পুরোপুরি ১০০টি গেইট খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে, যার কারণে ইতি মধ্যেই আমাদের দেশে বহু জায়গায় বন্যার অবনতি ঘটছে৷ ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সমীর সিনহা বিবিসিকে বলেন, বর্ষাকালে এমনিতেই অন্য সময়ের তুলনায় ফারাক্কার বেশি গেইট খোলা থাকে ৷ এবার বিহার প্রদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার কারণে ফারাক্কার ১০৯টি গেটের ৯টি বাদে সবই খুলে দেওয়া হবে ৷

এখন কথা হচ্ছে, বানের পানিতে ভেসে আসা একটা বন্যপ্রাণীকে ভারত দাবি করে বসলো, বলা হল, এটা আমাদের দেশের অাসাম রাজ্যের শিংমাড়ি পাহাড়ের হাতি ৷ আমরাও সায় দিলাম, ভালোবাসা বজায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলাম বন্য হাতিটিকে ফেরৎ দেওয়ার জন্য, প্রাণীটির মৃত্যুর কারণে পারিনি ফেরৎ দিতে এটা আমাদের দুর্ভাগ্য, ফেরৎ নিতে পারেনি এটা তাঁদেরও দুর্ভাগ্য ৷

এখন ছাড়ছে ফারাক্কার স্লুইস গেইট, পানির সাথে আসতে পারে ভারতীয় ছোট বড় অনেক মাছ ৷ সেই মাছ ধরবে আমাদের বাংলাদেশের নদীতে মাছ ধরার জেলেরা ৷ তখন যদি ভারত সেই মাছও দাবি করে বসে? তখন কী হবে উপায়! কাজেই ফারাক্কার স্লুইস গেইট খুলে দেওয়ার আগে, আমাদের বাংলাদেশে সমস্ত নদীতে মাছ ধরা নিষেধ করে দিলে জেলেদের জন্য অনেক ভাল হত ৷ বলা তো' যায় না! কোন মাছ ধরে আবার কোন দোষের তলে পরতে হয়, কে জানে! দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করুণ, মাছ ধরা থেকে বিরত থাকুন ৷ হতেও পারে এটা "ভারতীয় মাছ" ৷ যেমন: হাতি'র গায়ে লেখা ছিল, "Made in India"