নারায়ণগঞ্জে প্রতিবছর, কোরবানির মাংসের হাট বসে

নিতাই বাবু
Published : 17 Sept 2016, 05:50 AM
Updated : 17 Sept 2016, 05:50 AM

প্রতিবছর ঈদ আসে, ঈদ যায় ৷ বছরে দুটো ঈদ, পবিত্র ঈদুল-ফিতর, ও পবিত্র ঈদুল-আযহা ৷ বড়লোক আর গরীব মধ্যবিত্ত যাই হোক না কেন, ঈদ হয় সবার জন্য ৷ এবার ১৩/০৯/২০১৬ইং তারিখে উদ্ যাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল-আযহা ৷ নারায়ণগঞ্জেও বহু বিত্তবান আছে দেড়-দুই লাখ টাকা খরছ করে কোরবানির পশু(গরু) ক্রয় করে থাকে প্রতিবার'ই ৷ অনেক মানুষ আছেন, যারা কোরবানি দিতে পারেনা, তাঁরা ওইসব বিত্তবানদের কোরবানির জন্য সংগ্রহ করা পশু(গরু) কাটা-কুটার আশায় থাকে সবসময়৷ অনেক বিত্তবান লোক আছে, তাঁদের ঈদের আগে থেকে কিছু বলতে হয়তে হয় না, চিন্তাও করতে হয় না পশু(গরু) কোরবানির পর কাটা-কুটার জন্য ৷ কারণ: তাঁদের বছরবান্ধা লোক আছে, তাঁরা ঈদের দিন সকালে সোজাসুজি ওইসব বিত্তবানদের বাড়িতে মাংস কাটার ছুরি চাকু নিয়ে হাজির হয়ে যায় কোরবানি দেওয়ার আগমূহুর্তে ৷ বিনিময়ে পায় জনপ্রতি ৫ থেকে ৬ কেজি করে মাংস ও নগদ ৫শ থেকে ৬শ টাকা করে ৷

আমার পরিচিত অনেক মুসলিম ভাই-বন্ধু আছে, তাঁরা গরীব, তাঁদেরও দেখি প্রতিবছর কোরবানি ঈদের আগে থেকেই তাঁদের কাছে থাকা চাকু-ছুরি চাপাতি চাইনিজ কুড়াল নিয়ে যায় কামারের কাছে ওইগুলি ধারালো করার জন্য ৷ ঈদের দিন ওইসব ছুরি-চাকু নিয়ে চলে যায় যার যার গন্তব্যে ৷ কাটা-কুটা করে মাংস নিয়ে আসে বিকালবেলা, সাথে নগদ কিছু টাকাকড়ি ৷ এদিকে তাঁরা যেখানে থাকে, সেখানকার সমাজ থেকেও পেয়ে যায় অনেক মাংস, সব মিলিয়ে মাংস হয়ে যায় ১০/১২ কেজি'র মত ৷ যদি জিজ্ঞেস করি যে, এত মাংস তোমরা খাবে ক'দিনে? উত্তর মিলে রাতেই শেষ হয়ে যাবে ৷ তার মানে হলো হাটে নিয়ে বিক্রি করে দিবে ৷

আবার অনেক মানুষ আছে তাঁরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মাংস টোকায়ে বেড়ায়, সাথে থাকে নিজ পরিবারের ছেলেমেয়ে বা আত্মীয়স্বজন ৷ প্রত্যেকের কাছে থাকে একটা করে ব্যাগ, যার মধ্যে থাকে বিত্তবানদের দেওয়া মাংস ৷ এতে দেখা যায় একজন বিত্তবান লোক কোরবানি দিয়ে সমাজে, আত্মীয়স্বজন ও গরীবদের দিয়ে মাংস থাকে বেশি হলেও ১৫/১৬ কেজি ৷ আর যারা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মাংস টোকায়, তাঁদের মাংস সংগ্রহ হয়ে যায় ১০/১২ কেজি ৷ ওই মাংসগুলি তাঁরা কি সব খেতে পারে? মোটেই না ৷ ওইসব মাংসগুলি থেকে নিজেদের জন্য কিছু রেখে বাদবাকি মাংস নিয়ে যায় শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করার উদ্দেশে ৷ নারায়ণগঞ্জ শহরে এই কোরবানির মাংস বিক্রির নির্দিষ্ট স্থানও আছে, যেমন: ১নং রেলগেইট হতে ২নং রেলগেইট পর্যন্ত, আরো আছে চাষাঢ়া রেলস্টেশন ৷

আমাদের এই সমাজে এক শ্রেণির গরীব মানুষ আছে, তাঁরা হয় অত্যন্ত লাজুক, তাঁরা কোরবানি দিতে পারে না, আবার কারো কাছে হাত পেতে মাংসও চেয়ে নিতে পারে না ৷ ওই শ্রেণির লোকেরাই প্রত্যেক কোরবানি ঈদে ওইসব কোরবানির মাংসের হাটে ভিড় জমায় মাংস কেনার জন্য ৷ নিত্যদিনের বাজার মূল্য থেকে এই মাংসের দাম থাকে অর্ধেকের মত, এতে তাঁরাও কিনে নিছে স্বাচ্ছন্দ্যে, আর যারা বিত্তবানদের বাড়ি থেকে চেয়ে মাংস সংগ্রহ করেছে তাঁরাও কিছু টাকা পাচ্ছে ৷

এতে বোঝা যায় সৃষ্টিকর্তা এক এবং সবার ৷ যারা লক্ষলক্ষ টাকা ব্যয় করে কোরবানি দিচ্ছে তাঁরাও মাংস খাচ্ছে, আর যারা টাকার অভাবে কোরবানি দিতে পারছে না, তাঁরাও মাংস খাচ্ছে, বিত্তবানদের কাছ থেকে চেয়ে ৷ আর যাঁরা কোরবানি দিতেও পারে না, চেয়েও নিতে পারে না, তাঁরাও খাচ্ছে কোরবানির মাংসের হাট থেকে মাংস কিনে নিয়ে ৷ সবার জন্য হোক ঈদের আনন্দ ৷