মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ‘গণঅভ্যর্থনা’ আর যানজটের কবলে রাজধানিবাসী

নিতাই বাবু
Published : 2 Oct 2016, 07:25 PM
Updated : 2 Oct 2016, 07:25 PM

গত ২৯/০৯/২০১৬ইং তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার রাতে, আমার এলাকার একজন সম্মানিত লোক আমাকে ডেকে পাঠান ৷ সম্মানিত ব্যক্তির ডাকে সারা দিয়ে আমি উনার সাথে দেখা করতে গেলে, উনি সম্মানিত ব্যক্তি আমাকে বলে তোমার নামটা লিস্টে রেখেছি আগামীকাল ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আমাদের সাথে যেতে হবে, পারবে? বললাম স্যার, কোথায় এবং কোনস্থানে? বললেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে "গণঅভ্যর্থনা" দেয়ার কর্মসূচীতে ৷ জিজ্ঞেস করলাম কোন জায়গায়? বললেন বিমানবন্দর, দুটে বড় বাস রিজার্ভ করা হয়েছে কোন অসুবিধা হবেনা, যাবে আমাদের সাথে ৷ আমি সম্মানিত ব্যক্তির কথা শুনে অনেকক্ষণ নিশ্চুপ থাকলাম, ভাবতে লাগলাম দুপুর দুইটা থেকে এই 'গণঅভ্যর্থনা' কর্মসূচীতে যোগদানের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহুলোক,বহুগাড়ি ঢাকার উদ্দেশে আসবে ৷

তাহলে ঢাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা কী হবে? আবার হলো শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ৷ অন্যান্য দিনের কর্মসূচীর চেয়ে এই শুক্রবারের কর্মসূচীতে এমনিতেই লোকের সমাগম বেশি ঘটে ৷ আবার আছে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, তার ওপর আবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে 'গণঅভ্যর্থনা' দেয়ার কর্মসূচী ৷ নিজেরও কাজ আছে প্রচুর, অন্যান্য দিনের চেয়ে শুক্রবারে আমার কাজ থাকে বেশি, মোট কথা সকাল থেকে রাত বরোটা অবধি ৷ সম্মানিত ব্যক্তির কথা শুনে অনেকক্ষণ পর জবাব দিলাম 'না' স্যার, আমি যেতে পারব না, আমার হাতে অনেক কাজ ৷ আমার কথার জবাবে সম্মানিত ব্যক্তি উত্তর দিলেন, ঠিক আছে নিজের কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে কোথাও যাওয়া ঠিক নয়, নিজের কাজটাই তো সবাইকে আগে করতে হয় ৷ বললাম স্যার, তাহলে আমি এখন আসতে পারি? সম্মানিত ব্যক্তি সায় দিলেন হাঁ যাও ৷ সম্মানিত ব্যক্তির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজ বাসায় চলে এলাম ৷ পরদিন শুক্রবার, দুপুর থেকেই আমাদের বিডি নিউজের খবরের পাতায় চোখ রাখলাম যানজটের খবরটা জানার জন্য ৷

খবরে দেখছি ও পড়ছি মহাযানজট আর মহাদুর্ভোগের খবর, সময় অতিক্রম করছে আর যানজটও মহাযানজটে পরিণত হচ্ছে, যা খবরের পাতায় আসছে খানিকটা পরপর ৷ যানজট শুরু হতে যাচ্ছে সেই বিমানবন্দর থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র বাসভবন পর্যন্ত ৷ আর বিমানবন্দর থেকে সেই টঙ্গি আর আশেপাশের যত রাস্তা ৷ অথচ 'গণঅভ্যর্থনা' কর্মসূচী ঘোষণা করার সাথে সাথে বলা হয়েছিল, রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে 'গণঅভর্থনা' জানানো হবে ৷ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকেও দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সুশৃঙ্খল বজায় রাখার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছিল ৷ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর কর্মকর্তাগণ ও আশ্বাস দিয়েছিল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র 'গণঅভ্যর্থনা' কর্মসূচীতে যতলোকের সমাগম ঘটুক না-কেন, কোন যানজটের কবলে পরতে হবে না নগরবাসিকে ৷ কারণ: তাদের বিশ্বাস ছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও স্বমর্থকদের ওপর যে, তাঁরা অন্তত দলীয় নির্দেশটা একটু মেনে চলবেন, কিন্তু না তা তাঁরা মানেননি ৷ শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, রাস্তার দুপাশে আর কেউ ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকেনি, সবাই এলোপাতাড়ি রাস্তার ওপরই অবস্থান নেয় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ৷

আমার এক বন্ধু গিয়েছিল এই 'গণঅভ্যর্থনা' কর্মসূচীতে যোগ দিতে, সেই বন্ধুর মুখ থেকে শোনা, যানজট কাকে বলে ৷ শেষ পর্যন্ত সেই বন্ধু রাত ৯:৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছে ৷ আমার বন্ধুটি হয়তো গিয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানতে, আমার বন্ধুর মত বহু লোক কোন না' কোন গন্তব্যের যাত্রী ৷ সেসব যাত্রীগণ এই যানজটের কবলে পড়ে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে নিজ গন্তব্যে পৌঁছতে বাধ্য হয় ৷ যানজটের কবলে পড়তে হয় বিদেশ থেকে আসা বিমান যাত্রীদের ৷

এখন কথা হল যে, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যারা এই 'গণঅভ্যর্থনা' জানতে গিয়েছিল, তাঁরা তো' সবাই আওয়ামী লীগের'ই নেতা-কর্মী-সমর্থক ৷ তাঁরা তো' একটুও দলীয় বা প্রশাসনিক নির্দেশ মেনে চলেননি, তাঁরা নেতা-কর্মীরা শুধু নিজেদের বাহবা কুড়ানোর জন্য যারযার মত করে রাস্তার ওপরই অবস্থান নেয়, যার কারণে এই ছুটির দিনেও মহাযানজটের নাকালে রাজধানীবাসী হয়ে পড়েছিল দিশেহারা ৷ মোট কথা পুরো রাজধানী স্তব্ধ হয়ে যায় প্রায়ই ৮ঘন্টার মত, সেই দুপুর দুটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ৷ এতে করে মনে হয়, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একটুও খুশি বা আনন্দিত হয়নি ৷ কারণ: জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সবসময়ই এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, খুখের জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন ৷ মানুষের কষ্ট আর দুর্দশা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কখনই কামনা করেন না ৷

"ছবিটি গুগল থেকে সংগ্রহ"
মাননী প্রধানমন্ত্রী ১৮দিন আগে অর্থাৎ ঈদুল-আযহার পরদিন কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিল, কানাডার জিএফ সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য ৷ সেখান থেকে জাতীসংঘ অধিবেশনও যোগ দেয় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৷ এই ১৭দিন সফরে থেকেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেখানে বসে দেশের কাজে ৫১টি গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে স্বাক্ষর করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ৷ তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানেই থাকুক সবসময়ই দেশের মানুষের কথা, দেশের কথাই ভাবে ৷

আর আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতা-কর্মী-স্বমর্থক হয়ে দেশের কথা, দেশের জনগণের কথা একবারও ভেবে দেখি না ৷ ভেবে দেখি নাই, এই ঢাকা শহরের আনাচেকানাচের যত রাস্তা আছে, সেই রাস্তার সাথে মিশে আছে গরিব মানুষের জীবিকা ৷ এইদিন সকাল থেকেই একপ্রকার রাস্তাঘাট ফাঁকা-ফাঁকা, এই 'গণঅভ্যর্থা' কর্মসূচীকে ঘিরে ৷ এর কারণে বেকার হয়ে পড়ে হাজার হাজার 'বাস ড্রাইভার' 'সিএনজি ড্রাইভার' 'রিকশা চালক' 'অটো চালক সহ নানাবিধ খেটে খাওয়া দিনমজুর ৷ অন্য দিনের চেয়ে প্রতি শুক্রবারের কামাই রোজগার এমনিতেই একটু বেশি হয় সপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে ৷ নিজ ভাবনায় ভাবিত নেতা-কর্মীদের অসচেতনতার জন্য এসব গরিব মানুষের সেইদিনের পুরো কামাই গেল ভেস্তে ৷

এই 'গণঅভ্যর্থনায়' কারো কোন সমস্যাই হতো না, যদি নেতা-কর্মী আর স্বমর্থকরা দলীয় নির্দেশ আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরামর্শ মেনে রাস্তার ওপর অবস্থান না নিয়ে, রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতো একটু ধৈর্য ধরে ৷ অনেক সময় অনেক জায়গায় যেতে নিজেও প্রায়সময় যানজটের কবলে পড়ে যাই, তখন বুঝি যানজটের যন্ত্রণা কাকে বলে ৷ আবার অনেক সময় দেখা যায়, আমাদের দেশে কোন রাজনীতি কর্মসূচীর আয়োজন হলে শহরের প্রাণকেন্দ্রের মেইন সড়কের মাঝখানে ডেকোরেশন দ্বারা পেণ্ডেল করে সভা-মিটিং করা হয় ৷ যানজট আর মানুষে কষ্টের কথা একটুও আমরা চিন্তা করি না ৷ যদি গরিব দুখীর আর সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা ভাবতাম তবে রাজনীতি কর্মসূচী পালনের জন্য থাকত প্রতিটি জেলা শহরে সুনির্দিষ্ট একটি জায়গা ৷ দলীয় হোক আর বিরোধী দল হোক, সভা মিটিং করতে হলে প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে ওই সুনির্দিষ্ট স্থানেই সভা মিটিং করতে হবে, শহরে আর কোন স্থানে নয় ৷

যেমন: আমাদের নারায়ণগঞ্জে বেশির ভাগ দলীয় বা ধর্মীয় কর্মসূচীর আয়োজন করা হয় ডিআইটি মার্কেট তথা বঙ্গবন্ধু সড়কে ৷ যেদিন এই সভা মিটিং এর আয়োজন হয় সেদিন দেখা যায় একটা ছোট শহরে যানজটের মরণ-কামড় ৷ এই ডিআইটি প্রাঙ্গণে সভা মিটিং না করে যদি নারায়ণগঞ্জের ওসমানী স্টেডিয়ামে করা হয়, তবে আর শহরের প্রাণকেন্দ্রে যানজট হবে না, নগরবাসিকেও যানজটের দুর্ভোগে পড়তে হবে না ৷ সেই সাথে থাকতে হবে আমাদের মানুষের প্রতি ভালবাসা আর খেটে খাওয়া দিনমজুরের জন্য সুচিন্তা ৷ আসুন সবাই সুচিন্তিত মন নিয়ে এগিয়ে যাই সামনের দিকে, নতুন প্রজন্মদের সুন্দর জীবন গড়ার লক্ষ্যে।
তাং- ০১/১০/২০১৬ইং
ছবি সংগ্রহ: বিডি নিউজ থেকে ৷