হরিসভা মন্দিরে বিজয়া দশমীতে আরতি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ

নিতাই বাবু
Published : 12 Oct 2016, 08:13 AM
Updated : 12 Oct 2016, 08:13 AM

গতকাল হয়ে গেল হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী ৷ সারাদেশের মত নারায়ণগঞ্জ ও বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে ৷ সেই সাথে আমাদের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল চিত্তরঞ্জন কটন মিলস এর হরিসভা মন্দিরের 'মা' দুর্গাদেবীর প্রতিমাও বিসর্জন করা হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীতে ৷

এর আগে ছিল নবমী বিহিত পূজা, প্রতিবারের মত এবারো দিনেরবেলা পূজার কার্যকারিতা শেষ করে, রাতে দেবীর সন্তুষ্টির জন্য সপ্তমী পূজা হতে নবমী পর্যন্ত আরতি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয় ৷ এই নিয়মটা প্রায় সব পূজা মন্ডপেই করে থাকে মন্ডপ কমিটি, তবে একেক মন্ডপের একেক নিয়মে করা হয় ৷ আমাদের গোদনাইল এলাকার হরিসভা মন্দিরে প্রতিবছরই একই নিয়মে হয়ে থাকে, ছোট শিশুদের জন্য সবার আগে, তারপর বয়স্কদের জন্য, সবার পরে বহিরাগত যদি কেহ আরতি দিতে বা নাচতে চায় তাদের সুযোগ দেয়া হয় ৷ সবার পরে এলাকার মধ্যবয়সী ছেলে-মেয়েদের জন্য, তাঁরা একেবারে মধ্যরাত্র পর্যন্ত আরতি চান-গান ও কৌতুক অভিনয় করে থাকে ৷

এসব আরতি, নাচগান, কৌতুক অভিনয়ে যারাযারা অংশগ্রহণ করে, তাদের নামের তালিকা করা থাকে মণ্ডপ কমিটির কাছে ৷ পূজার রাতে সেইসব আরতি সহ নাচগানে যারা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হবে তাদের নাম ওই নামের তালিকায় লিখে রাখা হয় ৷ তারপরে একেবারে দশমী বিহিত পূজার শেষে 'মা' দুর্গাদেবীকে বিদায় দেয়ার আগে প্রতিযোগিতার সর্বশেষ আরতি, নাচগান, কৌতুক অভিনয় করে প্রতিযোগিতার সমাপ্তি টানা হয় ৷ তারপরে বিজয়া দশমীর সূচনা লগ্নে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয় ঢাক-ঢোলের বাজনার মধ্যদিয়ে ৷

একদিকে চলতে থাক পুরস্কার বিতরণী, অন্যদিকে চলতে থাকে 'মা' দূর্গাদেবীকে বিদায় দেযার কাজ ৷ হিন্দুধর্মাবলম্বী যুবতী মেয়ে ও বিবাহিত নারীরা দেবীকে ধানদূর্বা অর ফুলতুলসী দিয়ে মিষ্টিমুখ করিয়ে দেয়া হয ৷ পরে পানপাত্র দিয়ে দবীর অশ্রুজল মুছে দেয়া হয় সযত্নে ৷ পান-সুপারি দেয়া হয় দেবীর চরনে, আর দবেীর সিতিতে দেয়া হয় সিঁদুর ৷ সেই সিঁদুর নিয়ে চলে বেশ মজার খেলা, যা না দেখলে আর লিখে বোঝানো বড় দায় ৷ সেই সিঁদুর বিবাহিত নারীর একে অপরের সিঁথিতে এঁটে দেয়, এই সিঁদুর এঁটে দিতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি আর মজা করা ৷

তখন মনে হয় যেন দোলপূর্ণিমা হোলী খেলা চলছে পুরোদস্তুর ৷ 'ম' দুর্গাদেবীকে বিদায় অভ্যর্থনা জানাতে আসা সকল যুবতী আর বিবাহিত নারীরা আনন্দে মেতে উঠে মুহূর্তের মধ্যে ৷ আবার অনেক বুড়ো বয়সী নারীরা 'মা' দূর্গাদেবীকে বিদায় জানাতে এসে কাঁদতে থাকে, তখন এই কান্নাকাটিরও একটা প্রতিযোগিতা চলতে থাকে পূজার মণ্ডপে ৷ একজনের কান্না দেখে সমবয়সী অপরজনও কাঁদে এভাবে শুরু হয় কান্নার প্রতিযোগিতা ৷ যেমনটা হয়, একটা মেয়েকে বিয়ে দিলে প্রথমবার স্বামীর বাড়ি যাওয়ার সময়, ঠিক তেমন ৷

শেষ সময়ে এক এক করে মণ্ডপের ভিতর থেকে প্রতিমাগুলো সবাই মিলেমিশে বাহারে এনে গাড়িতে করে বাজনার তালেতালে নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জন দেযার নির্ধারিত স্থানে ৷ আমাদের নারায়ণগঞ্জে বিসর্জনের স্থান হলো লঞ্চ টার্মিনাল সংলগ্ন ৫ নং ঘাট ৷ বিসর্জনের দিন অর্থাৎ দশমীর দিন নারায়ণগঞ্জের নিউ মেট্রো সিনেমা হল রোড হতে শুরু করে চাষাঢ়া থেকে বঙ্গবন্ধু সড়ক সহ টার্মিনাল পর্যন্ত রোডের সব ধরণের যানবাহন ৪/৫ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৷ বিসর্জনের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যাতে কোন প্রকার অঘটন না ঘটে ৷

প্রতিবারের মত এবারও শান্তি শৃঙ্খলা ভাবেই হিন্দুধর্মাবলম্বীরা সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জন দিতে পেরেছে ৷ এবার আমাদের এলাকার হরিসভা মন্দিরে আরতি প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণ করেছিলো মোট ৬৫জন প্রতিযোগি, তাদের মধ্যে মোট ২৪জন অংশগ্রহণকারীকে বিজয়ি ঘোষ করা হয় ৷ এসব বিজয়িদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের জ্ঞানীগুনি ব্যক্তিরা ৷ এই আনন্দ আর এই পূজা হবে আবার আগামী আশ্বিনের শুক্লপক্ষে ৷ আবার আসবে 'মা' দুর্গাদেবী আমাদের মনের ভিতরে লালিত করা মহিষাসুর নিধন করার জন্য, আসবেন 'মা' দূর্গতনাশিনী সমাজের দুর্গতি নাশ করার জন্য ৷ জয় 'মা' শক্তিরূপিণী, জয় 'মা' দূর্গতনাশিনী ৷