শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা মরণব্যাধি বাসস্ট্যান্ড

নিতাই বাবু
Published : 26 Oct 2016, 06:40 AM
Updated : 26 Oct 2016, 06:40 AM


এই হলো সেই প্রাচীন আমলের বাস মালিক/শ্রমিক/কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস, লঞ্চঘাট সংলগ্ন

মাননীয়া মেয়র, আমি আপনার নারায়ণগঞ্জ সিটির ১০ নং ওয়ার্ডের একজন স্থায়ী বাসিন্দা ৷ আমি বর্তমানে গোদনাইল চৌধুরীবাড়ি সংলগ্ন আরামবাগ এলাকায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করছি ৷ চাকরি করি নিউ লক্ষীনারায়ণ কটন মিলস (লক্ষীনারায়ণ বাজার) সংলগ্ন একটা ব্যক্তিমালিকানাধীন অধীনে ৷  অফিসের বা নিজের কাজের জন্য প্রায় সময় নারায়ণগঞ্জ শহরে যেতে হয় ১৫ দিন পর অথবা মাসে ৷ যেতে হয়, কালীবাজার, চাষাঢ়া, অথবা ডিআইটি মার্কেটে বিভিন্ন কাজের জন্য বা নিজের কেনাকাটার জন্য ৷ চৌধুরীবাড়ি হতে আটো রিকশায় বা রিকশায় চড়ে আপনার নারায়ণগঞ্জ শহরে যখন আসি, তখন আর ভালো লাগে না শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রবেশ করতে ৷

লঞ্চঘাট সংলগ্ন শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে উঠা বাসস্ট্যান্ড ৷

মাননীয়া মেয়র, প্রশ্ন করতে পারেন যে কেন? মাননীয়া মেয়র, শুধু যানজটের কারণে ৷ নিউ মেট্রো সিনেমা হল ঘেঁসে যখন কুমুদনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অফ বেঙ্গল (কুমুদিনী) গেইট সংলগ্ন যাওয়া হয়, তখন-ই বাঁধে বিপত্তি ৷ রিকশা বা সিএনজি কোনটাই আর এগোয় না জ্যামের কারণে মাননীয়া মেয়র ৷ ঢাকা টু নারায়ণগঞ্জের বড়-বড় বাসগুলোর জন্য সৃষ্টি হয় এই যানজট ৷ এই বাসগুলো ঢাকা হতে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসার পর, সাইনবোর্ড হয়ে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড দিয়ে চাঁনমারীর হইয়ে চাষাঢ়া যাত্রী নামিয়ে, যখন নিউ মেট্রো সিনেমা হল ঘেঁসে প্রবেশ করে, তখন-ই শুরু হয় মহাযানজটের সৃষ্টি ৷

লঞ্চঘাট সংলগ্ন শহরের প্রাণকেন্দ্র গড়ে উঠা বাসস্ট্যান্ড, যা নারায়ণগঞ্জবাসীর মরণব্যাধি ৷

বাসগুলোর লক্ষ্য থাকে কালীর বাজার হয়ে, চাড়ারগোপ ঘেঁসে ৫ নং ঘাট দিয়ে লঞ্চঘাট সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড পৌঁছানো, সেখানেই তাদের গন্তব্যের শেষ ঠিকানা এবং ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার শুরু ৷  এই বাসগুলো যখন ঢাকা হতে আসতে থাকে, তখন দেখা যায় একটার পিছনে একটা লেগেই রয়েছে সারিবদ্ধ ভাবে ৷

লঞ্চঘাট সংলগ্ন মরণব্যাধি বাসস্ট্যান্ড

কারণ বর্তমানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বহু বাস সার্ভিস রয়েছে। নিউ মেট্রো সিনেমা হল হতে ১ নং রেল গেইট পর্যন্ত সরু একটা রাস্তা, যা দিয়ে কেবল দুইটা রিকশাই ক্রসিং করতে সক্ষম ৷ তাহলে এই বর্তমান যুগের এত বড়-বড় বাসগুলো চলে কীভাবে? তা হয়তো আপনার নিজের চোখেই দেখা মাননীয় মেয়র।

কোন একসময়ের খ্যাতনামা নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাট, এর সামনেই গড়ে উঠা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ৷

নিউ মেট্রো সিনেমা হল হতে লঞ্চঘাট বাসস্ট্যান্ড যেতে সময় লাগে প্রায় একঘন্টা মাননীয় মেয়র৷ তখন এই বাসগুলোর পিছনে রিকশা নিয়ে বসে থাকতে হয় সমপরিমাণ সময়, যা এক মৃত্যু যন্ত্রণার মত মরণব্যাধি ৷ এই যানজটের কারণে এই সরু রাস্তার আশেপাশের সংযোগ সড়কগুলিও যানজটের কবলে পড়ে যায় ৷ আবার এই কালীর বাজারের দুই সাইটে থাকে হতদারিদ্রদের ফুটপাতে বেচাকেনার দোকান, আর থাকে ফেলে রাখা ময়লার স্তুপ, যা পুরো কালীবাজার এলাকার ময়লাগুলো, আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনেই খোলা জায়গায় ফেলে রাখে, দিনের পর দিন ৷ আছে আরো নারায়ণগঞ্জ টু চিটাগাং রোড বাস সার্ভিসের শীতলক্ষা বাস কাউন্টার, যা মরার ওপর খড়ার ঘা ৷ আবার যখন লঞ্চঘাট বাসস্ট্যান্ড হতে বাসগুলো ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে, তখন দেখা দেয় অন্যরকম আরেক দৃশ্য ৷

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড

বাস কাউন্টার থেকে রিলিজ নিয়ে বাস ছেড়ে যাচ্ছে চলন্ত এক পিঁপিলিকা গতিতে যাত্রীর আশায় ৷ বাসগুলি ধীর গতিতে যাচ্ছে আর যাত্রী উঠাচ্ছে তাদের নিয়মিত ভাবে ৷ এভাবে লঞ্চঘাট বাসস্ট্যান্ড হতে বাসগুলি ছেড়ে ২ নং রেল গেইট যেতে সময় নেয় নিছে ৩০ মিনিট ৷ ২ নং রেলগেইট এমনতেই একটা ব্যস্তময় চৌরাস্তা, যা আপনার বাড়ি সামনেই অবস্থিত ৷ সময় সময় হয়তো আপনি নিজেই এই যানজটে কবলে পড়ে যান, মাননীয় মেয়র। এই বাসগুলির কারণে যখন ২ নং রেলগেইটে যানজট সৃষ্টি হয়, তখন আপনার এলাকা দেওভোগ হতে কেউ বা কোন রিকশা, টেক্সি অটো শহরে প্রবেশ করতে পারে না ৷ ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় বসে থাকতে হয়, মাননীয়া মেয়র ৷ এরপর ২ নং রেলগেইট পাড় হয়ে চাষাঢ়া যেতে যেতেও বাসগুলির ধীর গতিতে জায়গায় জায়গায় যানজটে সূচনা ৷

২ নং রেলগেইট চৌরাস্তার মোড় ৷

চাষাঢ়া গিয়ে আবার যাত্রী ডাকাডাকির পালা শুরু হয় পুরোদস্তুর ভাবে, সেখানে সময় পার করে প্রায় ১৫ মিনিটের মত, মাননীয়া মেয়র ৷ এদিকে এই যানজটের কারণে স্কুল চলাকালীন সময়ে, ছাত্রছাত্রীরা সময়মত স্কলেও যেতে পারে না ৷ ক্লাসে যেতে হয় বিলম্বে, শুনতে হয় মাস্টারদের বকাবাদ্য ৷ অনেক সময় অনেক ছাত্রছাত্রী সময়মত যেতে পারবে না ভেবে ওইদিন আর স্কুলেই যায় না। একটা ছাত্র বা ছাত্রী যানজটের কবলে পড়ে সময় নষ্ট করে ওইদিন কেন স্কুলে যায় নাই, সেই প্রশ্ন তাদের কাছে রয়ে যায় মাননীয়া মেয়র ৷ সময়মত স্কলের ক্লাস ধরতে না পারলে যে কী হয়, তা সবার-ই জানা ৷

বঙ্গবন্ধু সড়ক, গ্রীন্ডলেজ ব্যাংক মোড়

বর্তমানে আপনার অগ্রনী ভূমিকায় নারায়ণগঞ্জে যে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, সেই উন্নয়নের বিষফোঁড়া হলো নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র একটা বাসস্ট্যান্ড ৷ এই বাসস্ট্যান্ড হলো নারায়ণগঞ্জবাসীর দুঃখ ৷ চীনের যেমন দুঃখ হুয়াংহো নদী, মুহূর্তের মধ্যেই গণচীনের সকল সুখ কেড়ে নিতে এই হুয়াংহো নদী ৷ তেমন দুঃখ নারায়ণগঞ্জবাসীর এই শহরের প্রাণকেন্দ্রের একটা বাসস্ট্যান্ড, মুহুর্তের মধ্যেই সকল উন্নয়নের জয়গান আর হাসিগান ম্লান করে দেয় এই মরণব্যাধি বাসস্ট্যান্ড ৷ আপনার উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আজ নারায়ণগঞ্জবাসী স্বপ্নের শহরে বাস করছে ঠিক, কিন্তু যখন রাস্তায় বের হয়, তখনি মানুষের মনে দুঃখ লাগে শুধু এই বাসস্ট্যান্ডের কারণে, যানজটের কারণে ৷ মাননীয় মেয়র, আপনার উন্নয়নের ছোঁয়ায় যেখানে ছিল নর্দামার পানিযুক্ত রাস্তা, সেখানে আজ রড-সিমেন্টের ঢালাই করা পাকা রাস্তা, যা ছিল নারায়ণগঞ্জবাসীর কোন একসময়ের স্বপ্ন ৷

কালীবাজার পোস্ট অফিস সংলগ্ন ফ্রেন্ডস মার্কেট, কালীরবাজার ৷

কিন্তু দুঃখ শুধু একটাই ওই মরণব্যধি বিষফোঁড় বাসস্ট্যান্ডখানা ৷ এই বাসস্ট্যান্ডখানা কী সরিয়ে নেয়া যায় না? মাননীয় মেয়র, আপনার সাহসিকতায় নর্দামার খালও আজ নারায়ণগঞ্জ শহরে দুই লেন পাকা রাস্তা ৷ সেই রাস্তাখানা হলো নিতাইগঞ্জ হতে তামাকপট্টি মোড় পর্যন্ত, যা আপনার সাহসিকতার ফসল মাননীয়া মেয়র ৷ আপনি তো নারায়ণগঞ্জের কোন একসময়ের বীরপুরুষের মেয়ে, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সর্বপ্রথম চেয়ারম্যান মরহুম আলী আহম্মদ চুনকা সাহেবের মেয়ে ৷ নিশ্চয়ই আপনি কাউকে ভয় পান না, মাননীয়া মেয়র। এই মরণব্যাধি বাসস্ট্যান্ডখানা শহরের প্রাণকেন্দ্র হতে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যান, শহরবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দিন মাননীয় মেয়র। এটা শুধু আমার একার কথাই নয়,  শহরের প্রাণকেন্দ্রের লঞ্চঘাট সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডখানা মানুষের একমাত্র বিতৃষ্ণা!!

নারায়ণগঞ্জ মডেল থানা সংলগ্ন আল-জয়লান প্লাজা, বাসস্ট্যান্ড হতে টানবাজার রোড ৷

পরিশেষে মাননীয় মেয়র সাহেবার কাছে জোর অনুরোধ করছি, একটু দেরিতে হলেও আপনি আপনার নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র হতে এই মরণব্যধি বাসস্ট্যান্ডখানা সরিয়ে অন্যত্র একটা সুবিশাল আন্তঃনগর বাসস্ট্যান্ড স্থাপন করুণ, আর এই যানজটের কবল থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীকে মুক্তি দিন ৷ নারায়ণগঞ্জ শহরের আশেপাশে সুবিশাল একটা বাসস্ট্যান্ড করার বহু জায়গা এখনো পড়ে আছে৷ আমরা জানি আপনার এই দু'চোখ ভীষণ তীক্ষ্ণ বড় প্রখর, আপনি চাইলে অতি তাড়াতাড়ি পারবেন এই যানজট থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীকে মুক্তি দিতে, মাননীয় মেয়র, আমাদের নগর মাতা ৷