নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং নাগরিক প্রত্যাশা!

নিতাই বাবু
Published : 8 Dec 2016, 04:37 PM
Updated : 8 Dec 2016, 04:37 PM

সারা বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি এখন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিকে ৷ কারণ: এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বহু আগে থেকেই এই নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ ছিল না, প্রার্থী নিয়ে আর প্রতীক নিয়ে ৷ কাকে দেব, কাকে দেব না, কে হবে আর কে হবে না, এই নিয়েও জল্পনাকল্পনার কমতি ছিল না ৷ শেষ অবধি সকল জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটলো, প্রার্থী নির্বাচন হলো, প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হলো, দ্বিধাদ্বন্দ্ব একপ্রকার দূর হলো, নির্বাচনের তারিখও ঘনিয়ে এলো, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২২শে ডিসেম্বর, রোজ বৃহস্পতিবার ৷ কে হারবে আর কে জিতবে, কার পাওয়ার বেশি কার পাওয়ার কম, কার জনসম্মতি বেশি কার জনসম্মতি কম, কার ঝোলায় বেশি ভোট, কার ঝোলায় কম ভোট, কাকে জনগণ চায় আর কাকে জনগণ চায় না, সব কিছুর অবসান ঘটবে ২২শে ডিসেম্বর রোজ; বৃহস্পতিবার ৷ এবারের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে প্রার্থীর অভাব নাই, সব প্রার্থীর-ই ক্ষমতা, দক্ষতা, সাহসিকতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা, দূরদর্শিতা, মায়া-মমতারও অভাব নাই কারোর ৷ সব কিছুর প্রতিযোগিতা আর হারজিতের ফলাফল নির্ণয় হবে ২২শে ডিসেম্বর ৷

এই প্রথম দলীয় প্রতীক নিয়ে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) নির্বাচন ৷ বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দুই দল সহ আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ২২শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ৷ এরমধ্যে গত ৫ ডিসেম্বর রোজ সোমবার প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়, যারা যা পেলেন: নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়বেন, সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী ৷ আর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান লড়বেন ধানের শীষ নিয়ে ৷ এছাড়া বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির মাহবুবুর রহমান ইসমাইল লড়বেন কোদাল প্রতীক নিয়ে ৷ লিভারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) কামাল প্রধান লড়বেন ছাতা প্রতীক পেয়ে ৷ বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস হাত ঘড়ি নিয়ে লড়বেন ৷ ইসলামী ঐক্যজোট বাংলাদেশ ইজাহারুল হক লড়বেন মিনার প্রতীকে ৷ এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাসুম বিল্লাহ লড়বেন হাত পাখা নিয়ে ৷

"ছবি গুগল থেকে আপলোড করা"

এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে (নাসিক) প্রতীক ও প্রার্থী নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন প্রায় ৪ লাখ ভোটার ৷ এবারের নির্বাচনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর নৌকা ও বিএনপির প্রার্থী অ্যাড্‌ভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের ধানের শীষ ৷ কারো ছেয়ে কেউ কম নয়, দেশের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি বড় দুই দলের দুই প্রার্থী ৷ তবে কী মার্কা দেখে ভোট দেবেন ভোটাররা? না ব্যক্তি দেখে ভোট দেবেন? নাকি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখবেন? এ প্রশ্ন এখন শহরজুরে সর্বত্র পাড়া মহল্লায়, শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড় আর পশ্চিমপাড়ের মানুষে মুখে-মুখে ৷ এদিকে বিএনপি প্রার্থী প্রচারে নেমে বলছে, আমারা শতভাগ আশাবাদী নির্বাচনে জয় আমাদের হবে ৷ বিপরিত দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী বলছেন, দল মত নির্বিশেষে ভোটাররা আমাকেই ভোট দেবেন ৷ কারণ; দলীয় প্রতীক তো আছেই, সাথে আমার আছে উন্নয়নের জোয়ার ৷ এ দুটোই কাজে লাগাবেন সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী ৷

তারপরেও সবকিছু নির্ভর করবে ভোটারদের উপর, তা বোঝা যাবে ২২শে ডিসেম্বর সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পরবর্তী ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর ৷ বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে বইছে নির্বাচনী হাওয়া, যেন পবিত্র ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আযহা'র চাঁনরাত ৷ প্রার্থীদ্বয়ের অনুসারীরা সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পোস্টার টানাচ্ছে বৈদ্যুতিক খাম্বায়, গাছের ঢালায়, দোকানের চালের ওপর আর অলিগলিতে ৷ প্রার্থীরা সাথে করে তাদের অনুসারীদের নিয়ে যাচ্ছে বাড়িবাড়ি ভোট চাইতে ৷ প্রার্থীরা ভোটারদের নানাবিধ আশা ভরসাও দিচ্ছে প্রচুর, ভোটারদের কথাও দিচ্ছে সবসময়ই পাশে থাকবে ৷ সকাল থেকে রাত অবধি দেখা যায় প্রার্থীদ্বয়ের পদচারণা, হাতের কাছে আর চোখের সামনে যাকেই পাচ্ছে, সে যেখানকার-ই হোক, সালাম দিচ্ছে করমর্দন করছে, কোলাকুলি করছে, ভোট চাচ্ছে দোয়া চাচ্ছে ৷ রেস্তরাঁয় গিয়ে হালিম, চটপটি, গ্রীল-কাবাব, পরটা-মাংস, দই-মিষ্টি, পলাও বিরিয়ানী, চা'পান, বিড়ি-সিগারেট চলছে তো চলছেই ৷


সব প্রার্থীরাই সবাকে আশা দিচ্ছে, প্রার্থীদ্বয়ও আশায় আছে পাস করার ৷ ভোটের আগে প্রার্থীদের যেমন আন্তরিকতা দেখা যায়, তা যদি পাস করার পরেও থেকে যায়, তাহলে তো ভালো ৷ আর যাদি শুধু ভোট আদায় করার জন্য ভালোবাসার অভিনয় করা হয়? জনগণের ভোটে জয়লাভ করে পরে যদি আর দেখা না হয়? হঠাৎ করে একদিন রাস্তায় দেখা হলে মেয়র বা কমিশনার সাহেবকে সালাম দিলে, গরীবের সেই সালাম যদি স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ না করে? একটা সার্টিফিকেটের জন্য গেলে, যদি না দেয়? ছেলের চাকরির জন্য একটা বায়োডাটা ফরম এ যদি সই না করে? আমার নামের রিলিপের স্লিপ যদি ওনার পরিচিত কাউকে দিয়ে দেয়? সালিশে দরবারে যদি হক কথা না বলে? গরীবদের জন্য সরকারী অনুদানের অর্থ যদি গরীবেরা না পায়? তখন কেমন হবে? আশা করি তা হবে না ৷

আসন্ন সিটি নির্বাচনে যারা জয়লাভ করবে, তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, নির্বাচন আগমনী লগ্নে যেমন আন্তরিকতা, তা যেন সবসময়-ই বহাল থকে ৷ আর সদাসর্বদা জনসাধারণের দুখ-সুখের খবর নেয়া, নগরবাসীর নাগরিক সমস্যা দূর করা, যানজট মুক্ত শহর উপহার দেয়া, শহরের জায়গায় জায়গায় ঢাকনা সহ ডাস্টবিন রাখা, প্রতিদিন প্রাতঃকালীন সময়ের আগেই শহর পরিচ্ছন্ন করে ফেলা, শহরে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের জন্য ওয়াসার বিশুদ্ধ পানি ঠিকমত পরিবেশন করা, পয়ঃনিষ্কাশনের সুন্দর ব্যবস্থা রাখা, স্কুল কলেজে দলীয় প্রভাব না ফেলা, নগরবাসীর সমস্যার কথাটা তাদের মাথায় রাখা ৷ সর্বোপরি দলীয় মুক্ত, সন্ত্রাস মুক্ত, যানজট মুক্ত একটা সুন্দর নগরী পাওয়ার আশা করি ৷

আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সেই আশা আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই পূরণ করবেন ৷ এবং সম্মানিত প্রার্থীদ্বয়ের কাছেও এই প্রত্যাশা আমাদের নারায়ণগঞ্জবাসীর ৷ নিশ্চয়ই মহান সৃষ্টিকর্তা তাকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা দান করেন, যার দ্বারা মানুষের মঙ্গল হবে, যিনি দুখীর দুঃখ বুঝবেন, যিনি ব্যথিত জনের ব্যথা অনুভব করতে পারবেন ৷

যদি নির্বাচনের পরে নগরবাসী ওইসব নাগরিক সুখ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়, তবে কাউকে দোষারোপ করা যাবে না, সব কিছুই সাধারণ মানুষের কপালের উপর বর্তাবে ৷