টাকা দিয়ে ব্রয়লার মুরগী কিনে কী খাচ্ছি?

নিতাই বাবু
Published : 10 Dec 2016, 07:05 PM
Updated : 10 Dec 2016, 07:05 PM

এই ব্রয়লার মুরগী কোন একসময় ছিল আতঙ্ক, অনেকে সেই আতঙ্কে এখনো ব্রয়লার মুরগী খায় না। এখনো অনেক মানুষে এই ব্রয়লার মুরগীকে পছন্দ করে না। প্রথম প্রথম আমি নিজেও এই ব্রয়লার মুরগী খেতাম না, এখন ধনী-গরীব সবাই যখন খায়, আমি গরীব বাদ যাব কেন? আমিও খাই। তবে আগে ভালো লাগতো, এখন সেই আগের মত ভালো লাগে না।

আমি ছোটখাটো একটা সমিতির অফিসে ম্যানেজার, বেতন সীমিত। যেই টাকা বেতন পাই, সেই টাকা দিয়ে বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এরমধ্যে আবার মাসে চার-পাঁচটে শুক্রবার আছে সপ্তাহিক বন্ধের দিন, এই বন্ধের দিনে একটু মাছ-মাংস ছাড়া কি আর চলে? চলে না। সপ্তাহে প্রতি শুক্রবারও আমার অফিস খোলা থাকে, যা প্রতিদিনের মত অফিস টাইম ডিউটি করতে হয়। এই ঝামেলার কারণে হাটবাজার করতে হয় সন্ধ্যার পর রাতের বেলা। কোনদিন তড়িঘড়ি করে মুরগীর দোকান থেকে দেড় কেজি ওজনের বা তারও কম ওজনের একটা মুরগী কিনতে হয়। মুরগী কেনার পর দোকানদার মুরগীটাকে জবাই করার পর সিদ্ধ করে, তারপর ড্রেসিং মেশিনে মুরগীটা ছাটাই বা পরিষ্কার করে একটা পলেথিনে ভরে দেয়। আমি একটা রিকশাওয়ালাকে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেই, আর বলে দেই যে, বলবি মাংস যেন ভালো করে রান্না করে। গিন্নি যত ভালো করেই রান্না করুক না কেন, ব্রয়লার মুরগীর মাংস আগের মত আর ভালো লাগে না। কেন ভালো লাগে না, বলতে পারেন? ভালো না লাগার কারণটা কেউ হয়তো জানেন, আবার অনেকে হয়তো জানেন না।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, দেখুন তো ভালো করে এগুলো কী? পানি না রক্ত? একবার এক বালতি পানি দিয়ে প্রায় ৫০-৬০টা মুরগী সিদ্ধ করে। তাহলে মাংসের স্বাদ থাকবে কী করে? মুরগীর স্বাদ খেয়ে ফেলেছে বিষাক্ত রক্তে আর ড্রেসিং মেশিনে, ঝগড়া করি নিজের গিন্নির সাথে। এক সময় বলে ফেলি, ধুর! তুমি রান্নাই করতে জানো না।

আমাদের বাংলাদেশে প্রথম যখন এই ব্রয়লার মুরগী বাজারে আসলো, তখন কিন্তু মুরগী ছেলার বা মুরগীর পলক পরিষ্কার করার মত কোন মেশিন ছিল না। কাজেই, দোকান থেকে মুরগী ক্রয় করে, সোজা বাড়িতে এনে সেই মুরগীটাকে নিজেরাই জবাই করে পরিষ্কার করে নিতাম, নিজেদের মন মত। মাংসের স্বাদ মাংসেই থাকতো নষ্ট হত না, বা মাংস দুইবার সিদ্ধ হত না। আর এখন? এখন মুরগীর দোকানে দূষিত পানিতে সিদ্ধ হচ্ছে একবার। সিদ্ধ হওয়ার পর আস্ত মুরগীটা আবার মেশিনে লেতা-পেতা করা হচ্ছে। তখন মাংসের যতটুকু স্বাদ থাকবে, তার চাইতে বেশি হচ্ছে অরুচিকর। মুরগী ছেলার বা পলক পরিষ্কার করার সময় দেখা যায় আস্ত মুরগীটা একেবারে তুলতুলে নরম হয়ে যায়, কিছুক্ষণ পর যখন ঠাণ্ডা হয়, তখন দেখা যায় আরেকটা দৃশ্য, আস্ত মুরগীটা হয়ে যায় লোহার মত শক্ত। এবার নিচের ছবিখানা দেখুন, ব্রয়লার মুরগী ওই রক্তযুক্ত পানিতে সিদ্ধ করার পর মুরগী ছেলার মেশিনটা। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, মেশিনটা দেখলে অবশ্যই মনে পরবে যে, আমার বাড়ির সামনে তো মুরগী বিক্রির দোকান আছে, হয়তো সেই দোকানের মেশিটা।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, এই হলো ব্রয়লার মুরগী ড্রেসিং মেশিন, মুরগী গরম পানিতে সিদ্ধ করে যেখানে আস্ত মুরগীটা ইলেকট্রিক মটরের সাহায্যে ছেলা হয়।

এসব দেখে শুনেও আমরা মুরগীর দোকান থেকেই মুরগী কিনে সেই মুরগীটা সেই বিষাক্ত পানিতে সিদ্ধ করে, ড্রেসিং মেশিনে ছাঁটাই করে বা পরিষ্কার করে দিব্বি চলে যাচ্ছি বাড়িতে। বাসায় বা বাড়িতে নিয়ে, আস্ত মুরগীটাকে কেটে টুকরো টুকরো করে পরিমাণের চেয়েও বেশি মসলাদি দিয়ে রান্না করি একটু স্বাদের আশায়। কিন্তু হায়! স্বাদ গেল কোথায়? স্বাদের কথা চিন্তা করে শেষ অবধি নিজের গিন্নির সাথে মনোমালিন্য আর দ্বিধাধন্ধের কথাও মনে পড়ে যায়। বাড়ির গিন্নি ঠিকমতোই রান্না করেছে, মাংসের স্বাদ খেয়েছে বিষাক্ত রক্তযুক্ত পানিতে আর মুরগী ছেলার ড্রেসিং মেশিনে।

কী বুঝলেন প্রিয় পাঠকবৃন্দ? যে যাই বুঝুক আর শুনুক, আমার মতে, এখন থেকে ব্রয়লার মুরগী কিনে মুরগীর দোকানে আর মুরগী সিদ্ধ নয় বা মুরগী ড্রেসিং নয়। যা হবার নিজের বাড়িতেই হবে। একটুখানি পরিশ্রম কমানোর জন্য, টাকা দিয়ে ব্রয়লার মুরগী কিনে এই অস্বাস্থ্যকর মাংস খাবো? একটু কষ্ট করে নিজের কাজটা নিজে করবো, অপরকে দিয়ে নয়। এতে মাংসের স্বাদও থাকবে, কষ্টে উপার্জিত টাকারও স্বার্থকতা লাগবে।

নিতাই বাবু
তাং- ১০/১২/২০১৬ইং