মেয়র আইভীর দুই নয়ন, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন!

নিতাই বাবু
Published : 20 Dec 2016, 09:00 PM
Updated : 20 Dec 2016, 09:00 PM

আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানাধীন লক্ষণখোলা আদর্শ কটন মিলে ৷ লেখাপড়া যতটুকু করেছি তাও এখানেই ৷ ১৯৭২ সালে নোয়াখালী থেকে সপরিবারে এই বন্দর থানাধীন লক্ষণখোলা আদর্শ কটন মিলে আসা, সেই থেকেই নারায়ণগঞ্জে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু ৷ আমি স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৪ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচন দেখেছি, আমি সেই নির্বাচনে জয়লাভকারী প্রয়াত আলী আহম্মদ চুনকা সাহেবকে দেখেছি ৷ তারপর আরো একজন পৌর চেয়ারম্যানকে দেখেছি, তিনি ছিলেন নাজিমুদ্দিন মাহমুদ ৷ সেই সময়কার নির্বাচনে প্রয়াত আলী আহম্মদ চুনকা সাহেবের প্রতীক ছিল "খেজুর গাছ" আর নাজিমুদ্দিন মাহমুদ সাহেবের প্রতীক ছিল "বাই সাইকেল ৷ সেই নির্বাচনও আমি দেখেছি, দেখেছি প্রয়াত আলী আহম্মদ চুনকা সাহেবের পরাজয়ের বেদনা ৷


তারপর দীর্ঘ কয়েক বছর পর দেখলাম, প্রয়াত আলী আহম্মদ চুনকা সাহেবের মেয়ে ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীকে, নারায়ণগঞ্জ পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে ৷ স্বাধীনতা পরবর্তী অনেকটি বছর কেটে গেল ১৯৭৪-২০০৩ পর্যন্ত, এত ব্যাপক উন্নয়ন আগে কখনো চোখে পড়েনি ৷ ২০০৩-২০১৬ পর্যন্ত এত উন্নয়ন দেখবো, তা জীবনে কল্পনাও করতে পারিনি ৷ বর্তমানে গোটা নারায়ণগঞ্জ সিটিকে এক পদ্মফুলের মত করে সাজিয়ে রেখেছে সদ্য পদত্যাগকারী সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর উন্নয়নের কর্মকাণ্ড দিয়ে ৷ এসব উন্নয়নের কারণেই বর্তমানে নারায়ণগঞ্জবাসীর নয়নমণি আর চোখের তারা উন্নয়নের মানস কন্যা, রাতের আকাশের ধ্রুবতারা হয়ে বসে আছেন তিনি নারায়ণগঞ্জবাসীর আন্তরে আর সবার মুখে-মুখে ৷

তিনি হলেন স্বাধীনতা পরবর্তী আমাদের নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের একজন সফল মেয়র "ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী"৷ আমি কারো পক্ষপাতিত্ব করছি না, আমি শুধু ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর দীর্ঘ ১৩ বছরের উন্নয়নের জয়গান করছি ৷ যিনি একজন ডাক্তার, যার ধর্ম মানব সেবা, যিনি সবসময় নগরবাসীর সেবায় নিয়োজিত ছিল, তখন তার প্রশংসা তো করতেই হয় ৷ এতে কারো মনে কষ্ট পেলে আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে ক্ষমা করে দিবেন ৷ কেন না, কেউ মনে করতে পারেন যে, আমি ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থক ৷ আমি সমর্থক আর ভক্ত বুঝি না, অামি নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়নের সমর্থক ও ভক্ত তাই ৷

(ছবিখানা গুগল থেকে সংগ্রহ করা)
এবারও আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে, সেই সেবা করার প্রতিজ্ঞা করে, দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছেন ৷ আশা করি ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর জয়লাভ সুনিশ্চত, কারণ: নারায়ণগঞ্জে বাসবাসকারীরা যদি নারায়ণগঞ্জকে ভালোবাসে, তবে নারায়ণগঞ্জের এত বিশাল উন্নয়ন যার দ্বারা হলো, তাকে কি ভালোবাসবে না? অবশ্যই ভালোবাসে ৷ তবে এবার তার প্রতি মানুষের ভালোবাসাটা হয়তো দুইটা ভাগ হয়ে গেল, যেমন: গত নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল (বি.এন.পি) ঠিক ভোটের আগের দিন নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেয় ৷ তখন এই হঠাৎ বর্জনের ঘোষণায় (বি.এন.পি)র সমর্থকের প্রায় বেশির ভাগ ভোট-ই সম্মানিতা আইভীর ঝোলায় পড়ে ৷ কিন্তু এবার মনে হয় তা আর হবে না, হবে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই, জয়-পরাজয়ের লড়াই ৷ এই লড়াইয়ে হারজিতের ফলাফল বোঝা যাবে ২২ডিসেম্বর ভোট গণনার পর হতে ৷ ফল প্রকাশের আগমূহুর্তে পুরো নারায়ণগঞ্জবাসী সহ সারাদেশের মানুষ ফল ঘোষণা শোনার অপেক্ষায় থাকবে ৷

মানুষের মাঝে এই উৎকণ্ঠা আর হতাশা এর আগের নির্বাচনেও ছিল, কে হারছে আর কে জিতছে ৷ গত নির্বাচনের ফলাফলগুলো যেমটা হয়েছিল, ২০০৩ সালে ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী লড়েছিলেন "মোমবাতি" প্রতীক নিয়ে, তারপরে "দেয়াত কলম" নিয়ে লড়েছিলেন ৷ ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী বিপুল ভোটে জয়ী হন ৷ ওই নির্বাচনে দলের সমর্থন না পেলেও নির্বাচন থেকে একচুল পিছু হটেনি সম্মানিতা আইভী ৷

তখন আওয়ামী লীগ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলের এক প্রভাবশালী নেতাকে সমর্থন দেয়ার পরও সম্মানিতা আইভী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন ৷ তখন সম্মানিতা ডাঃ আইভীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করতে গঠন করা হয় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ ৷ নির্বাচনে "দোয়াত কলম" প্রতীক নিয়ে সম্মানিতা আইভী পেয়েছিলেন ১লাখ ৮০হাজার ৪৮ ভোট ৷ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী (দেয়াল ঘড়ি) পেয়েছিলেন ৭৮হাজার ৫৪৮ভোট ৷ আতিকুল ইসলাম জীবন (তালা) ১হাজার ৮৫৫ভোট, এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার (আনারস) পেয়েছিলেন ৭হাজার ৬১৬ভোট, আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সি (গরুর গাড়ি) পেয়েছিলেন ৬হাজার ৬১১ভোট, শরিফ মোহাম্মদ (হাঁস) পেয়েছিলেন ১হাজার ৪৮৩তোট ৷

তবে এবার ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হবে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই, বেঝা যাচ্ছে কেউ কারো চেয়ে কম নয় ৷ তবু আশা করা যায় নারায়ণগঞ্জ নগরবাসী সম্মানিতা ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর উন্নয়নের জোয়ার অব্যাহত রাখার জন্য বিপুল ভোটে তাকে বিজয়ী করবেন ৷ সম্মানিতা ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীও নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে প্রাণান্তর চেষ্টা করবেন, সেই আশাই সবাই করছে ৷ তিনিও নির্বাচনী প্রচারণায় যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানে তার প্রিয় অনুসারীদের কথা দিচ্ছেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে ৷


যিনি বিগত দিনে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নগরবাসীর সার্বিক উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম, দক্ষতা ও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন ৷ যাঁর আন্তরিক সেবা ও সযত্ন পরিচর্যায় শহরের সর্বত্র আধুনিকতা ও উন্নয়নের চিত্র দৃশ্যমান ৷ যেখানে ছিল বাঁশের সাঁকো, সেখানে আজ রড-সিমেন্টের ঢালাই করা প্রস্থ রাস্তা ৷ যেখানে ছিল নর্দামা, ময়লা পানির খাল, সেখানে নয়নাভিরাম মহাসড়কের মত রাস্তা ৷

নারায়ণগঞ্জ শহরে আগে কোন ভাস্কর্য ছিল না, ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর আমল থেকেই শহরের মোড়ে-মোড়ে বিশাল বিশাল ভাস্কর্য, সবই ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী উন্নয়ন ৷ এগুলো মানুষ ভুলবে কী করে? নিম্নে সম্মানিতা ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর সামান্য কিছু উন্নয়নের চিত্র দেয়া হলো ৷


শুধু শহরের মোড়ে-মোড়ে ভাস্কর্য-ই নয়, রাস্তা, ড্রেন, কালবার্ট এসব ছিল তার দুই নয়নের সুদৃষ্টি ৷


যেখানে ছিল পরিতপ্ত রেললাইনের পাশে স্বল্পপ্রস্থ পেক-কাদার রাস্তা, সেখানে আজ পাকাসড়ক ৷ যেসব খেয়াঘাটে যাত্রী পারাপারে নৌকায় বা ট্রলারে উঠতে ছিল বাঁশের মাচান, সেসব খেয়াঘাটে আজ সুবিশাল নয়নাভিরাম যাত্রী ছাউনি ৷ খেয়া পার হবার আগে ওইসব যাত্রী ছাউনিতে একটু বসে থাকতে মন চায় ৷


আরো উন্নয়ন হয়েছে নারায়ণগঞ্জের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্মশানঘাট, যা নারায়ণগঞ্জ মাসদাইর গোরস্থান সংলগ্ন অবস্থিত ৷ যেখানে আগে একসাথে দুইটা লাশ দাহ করা যেত না, সেই শ্মশানঘাটে আজ অন্ততঃ তিনটি লাশ খুব সুন্দর ভাবে দাহ করা যায় ৷ নতুন করে আরো তিনটি দাহ করার চুলা তৈরি করে রাখা হয়েছে, যা একসময় তিতাস গ্যাস দ্বারা লাশ দাহ করা হবে ৷ এটা সম্মানিতা মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর এক অনন্য অবদান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশাল পাওয়া ৷ নিম্নে সেই মাসদাইর শ্মশানঘাটের ছবি সংযুক্ত করা হলো


নারায়ণগঞ্জের কোনো মানুষ জীবনে কল্পনাও করতে পারে নাই, এসব খেয়াঘাটে কোনো একসময় কোন সৎমানুষের সুদৃষ্টির ফলে পাকা যাত্রী ছাউনি হবে ৷ এসব উন্নয়নের মূলে ছিল ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর সুদৃষ্টি আর তার আপ্রাণ প্রচেষ্টার ফসল ৷ এবারও তিনি নারায়ণগঞ্জকে একটি আধুনিক ও উন্নত জনপদে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়েছেন ৷


নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ২৭টি ৷ শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়-পশ্চিমপাড়, উত্তর-পূর্ব কোণে কুড়িপাড়া, পশ্চিম-দক্ষিণ কোনে শীতলক্ষ্যা তামাকপট্টি সব মিলিয়ে ২৭টি ওয়ার্ডেই সমান তালে উন্নয়নে ছোঁয়া ৷ যাদের বাড়িতে পাকা লেট্রিন ছিল না, তাদের বাড়িতে স্বল্প খরচে পাকা লেট্রিন নির্মাণ করা হয়েছে ৷ যাদের তিতাস গ্যাসের চুলা নেই, তাদের সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নামমাত্র মূল্যে সিমেন্ট দ্বারা পাকা চুলা করে দেয়া হয়েছে, যেই চুলায় থাকে বিশেষ ধরণের চিম্নি ৷ ধুয়া উপরে উঠে বাতাসে মিশে যাবে, ঘর আর ধুয়ায় অন্ধকার হবে না ৷ এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ শহর হতে যারা একটু দূরদূরান্তে বসবাস করছে, একজন রুগী নিয়ে শহরে আসতে সময়ের প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে প্রসূতি মায়েদের বেলায় মহাবিপদের ৷ সেই চিন্তা মাথায় রেখে, বিভিন্ন এলাকায় পরিতপ্ত জায়গায় প্রসূতি মায়েদের জন্য গড়ে তুলেছেন হাসপাতাল ৷ আমাদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইলেও একটা নতুন ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ করে রেখেছেন, তা এখন যেকোন সময় শুভ উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে ৷

পরিশেষে সম্মানিতা ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর দীর্ঘায়ু ও সফলতা কমনা করে নিম্নে তার উন্নয়নের একটা ছোট ভিডিও দেয়া হলো ৷ আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তা এবারও সম্মানিতা ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী করে, আবার নগর ভবনের সেই মেয়রের আসনে বসাবেন ৷ জয় হোক সৎ মানুষের, জয় হোক মানবতার, জয় হোক নারায়ণগঞ্জবাসীর ৷

https://www.youtube.com/watch?v=O6YaFNei5E4