নাসিক নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শান্তিপূর্ণ ভাবে

নিতাই বাবু
Published : 22 Dec 2016, 10:22 AM
Updated : 22 Dec 2016, 10:22 AM

ছবিটি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১০নং ওয়ার্ড, গোদনাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র থেকে তোলা ৷ এখানে পুরুষ আর মহিলা ভোটাররা আলাদা আলাদা ভাবে যার যার মূল্যবান ভোট প্রয়োগ করে ৷ আমিও এই কেন্দ্রেই ভোট দিয়েছি, বিদ্যালয়টির তৃতীয় তলায় ৷ আজ ২২ ডিসেম্বর, রোজ বৃহস্পতিবার ছিল নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন ৷ সকাল থেকেই পাড়া-মহল্লার দেখা যায় সাজ-সাজ ভাব আর উৎসাহ উদ্দীপনা ৷ মহল্লায় বসবাসকারী ভোটার মহিলারা ভোর থেকেই সংসারের নিয়মিত কাজগুলো সেরে ফেলতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় ৷ কারণ: সকাল আট ঘটিকা হতে শুরু হবে ভোট গ্রহণ তাই এই ব্যস্ততার কারণ৷ এর ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল ১০ নং ওয়ার্ডের মহিলা-পুরুদের ব্যস্ততা একরকম-ই চোখে পড়ে ৷

ছবি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ১০নং ওয়ার্ডের গোদনাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলা থেকে তোলা ৷ ছবিতে দেখা যায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সারিবদ্ধভাবে মহিলা ভোটারা ভোট প্রয়োগের জন্য দাঁড়িয়ে আছে এরমধ্যে গতরাতে ছিল এক অন্যরকম পরিস্থিতি ৷ নারায়ণগঞ্জবাসীকে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশ এলো, রাত দশটার মধ্যেই যেন সকল দোকানপাট বন্ধ করে ফেলা হয়, তখন রাত নয়টা ৷ বিজিবির এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে মহল্লার সব দোকানদার, তাদের দোকান বন্ধ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে ৷ রাত ৯.৩০মি: এর সময়, মহল্লার মসজিদের মাইকে বিজিবির সদস্যরা আবারও ঘোষণা দেয় দোকান বন্ধ করার জন্য, যেই কথা, সেই কাজ ৷ রাত দশটার পর শহরের প্রতিটি ভোট কেন্দ্রর সামনে আর কোন দোকানপাট খোলা থাকতে দেখা যায়নি ৷

ছবিটি ২২ডিসেম্বর সকালে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ১০নং ওয়ার্ড গোদনাইল রসূলবাগ থেকে তোলা ৷ ভোটাররা ভোট দেয়ার জন্য যার-যার স্লিপ সংগ্রহে ব্যস্ত, আইডি কার্ডের নম্বরের সাথে মিলিয়ে নিচ্ছে ভোটার নম্বর ৷  তারপর রাত শেষে সকাল থেকে শহরের কোথাও কোন গাড়ি চলতে দেখা যায়নি ৷ গাড়ি চলছে শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট বহনকারি গাড়ি আর আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনী ও মিডিয়া সংবাদিকদের গাড়ি ৷ এছাড়া আর একটা যাত্রী বহনকারী রিকশাও চলতে দেখা যায়নি ৷ সবখানেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীও ছিল তৎপর ৷ খানিক পরপর র‌্যাব-পুলিশের গাড়ির বহর আর মিডিয়া সংবাদিকদের ভিডিও ক্যামেরাসহ কেন্দ্রে কেন্দ্রে আনাগোনা ৷ আরো দেখা যায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতাকারী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের আনাগোনা আর প্রতিটা চাদোকানে আড্ডা ৷ প্রার্থীদ্বয়ের অনুসারিরা ভোটারদের সাথে কথা বলছে, বোঝাচ্ছে ও দিক নির্দেশনা দিচ্ছে ৷ প্রিয় মার্কা আর প্রিয় প্রার্থীর প্রতীক নিয়েও অনেককে বসে থাকতে দেখা যায় ভোট কেন্দ্রে বাহিরে অধীর আগ্রহে ৷

প্রথম ছবিতে প্রিয় প্রতীক নিয়ে বসে আছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডের দুইজন কর্মী ৷ দ্বিতীয় ছবিতে চার-পাঁচজনকে তাদের প্রিয় প্রার্থীর মার্কা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ৷ তৃতীয় ছবিও ঠিক ওইরকম, তারাও দাঁড়িয়ে আছে ভোটারদের একটু বোঝানোর জন্য ৷ তারা যে ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছে, তাকে বোঝাচ্ছে, আর যেই ভোটার ভোট দিয়ে আসছে তাকে জিজ্ঞেস করছে ৷ এছিল শুধু কেন্দ্রের বাহিরের অবস্থা৷ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ১০নং ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্র  তিনটি (৩) ৷ যথাক্রমে: (১) লক্ষীনারায়ণ কটন মিলস্ উচ্চ বিদ্যালয়, (২) গোদনাইল দক্ষিণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (আজিম মার্কেট) (৩) গোদনাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয় ৷ এসব ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত ৷ নিম্নে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ১০নং ওয়ার্ডের তিনটি ভোট কেন্দ্রের কিছু চিত্র সংযুক্ত করা হলো ৷

এসব উৎসাহ উদ্দীপনা আর আনন্দ বেদনা ও হতাশার দৃশ্যগুলি ছিলো দেখার মত ৷ যার-যার ধান্দা সে-সে নিরবে করে যাচ্ছে যার-যার কাজ ৷ সম্মানিত পাঠকবৃন্দ ও আমার প্রাণপ্রিয় সহ-ব্লগার/লেখকবৃন্দ, আমি আমার ভোট দিয়েছি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৷ সেখানে আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীর বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও সেই ভোট কেন্দ্রে কয়েকটি ছবি তুলতে পেরেছি ৷ ছবি তোলার সময় অবশ্য আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্যবৃন্দরা আমাকে ছবি তুলতে বারণ করে, পরে আমি নিজেকে বিডিনিউজ এর একজন নাগরিক সংবাদিক ও ব্লগার পরিচয় দেয়ার পর সম্মানিত আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনী আমাকে কয়েকটা ছবি তুলতে দেয় ৷ তার জন্য আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছি, তারাও আমার ধন্যবাদ স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করে ৷ আমি আমার ভোট কেন্দ্রে যেসব ছবিগুলো তুলতে সক্ষম হয়েছি সেগুলি নিম্নরূপ।


গোদনাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট প্রদান করে চলে আসি আমার অফিসের সামনে, সেখানে একটা ভোট কেন্দ্র আছে তাহলো লক্ষীনারায়ণ কটন মিলস্ উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র ৷ এই লক্ষীনারায়ণ কটন মিলস্ উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের কিছু ছিবি সংগ্রহের জন্য স্কুলের ভিতরে প্রবেশ করি ৷ স্কুলের প্রধান ফটকের ভিতরে দুইজন পুলিশ বাহিনী সদস্য কর্তব্যরত অবস্থায় বসা ছিল যা আমি ভিতরে ঢোকার সময় খেয়াল করতে পারিনি ৷ যাই হোক, বুকপকেট থেকে মোবাইলটা বাহির করে যখন লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের ছবি তুলবো তখন কর্তব্যরত ওই দুইজন পুলিশ থেকে একজন পুলিশ দৌঁড়ে এসে আমার মোবাইটা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ৷ আমি বললাম 'প্লিজ' দয়া করে আমাকে একটু বুঝিয়ে বলুন যে, আপনি এমন করছেন কেন? সম্মানিত পুলিশ সদস্য আমাকে কোন কিছু না বলেই, আমার শরীরে ধরার চেষ্টা করে ৷ আমি বলতে লাগলাম দেখুন, এটা আমার স্থায়ী এলাকা এবং আমি এখানকার-ই স্থায়ী বাসিন্দা, আমি শুধু একটা ছবি তুলবো বিডিনিউজ ব্লগে আজকের নির্বাচন নিয়ে কিছু লেখার জন্য ৷ কিন্তু সম্মানিত পুলিশ সদস্য আমার কোন কথাই শুনলো না, এক পর্যায়ে খুব বিশ্রী ভাষায় গালাগাল করে আমাকে ঘাড়ে ধরে স্কুলের গেইটের বাহির করে দেয় ৷

পিয় পাঠকবৃন্দ ও আমার সহ-ব্লগারবৃন্দ, আমি খুব কষ্ট পেয়েছি তবে কোন দুঃখ পাইনি ৷ দুঃখ পাইনি এ কারণে যে, সম্মানিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যবৃন্দ তারা তাদের কর্তব্য পালন করেছেন ৷ আর আমি কষ্ট পেয়েছি এ কারণে যে, আমি যে বিডিনিউজ ব্লগের একজন নাগরিক সংবাদিক ব্লগার/লেখক, আমার কাছে তার কোন প্রমাণ নেই ৷ যাই হোক, তারপরেও আমি আনন্দিত হলাম যে, দেশের বহু কাঙ্ক্ষিত এই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ভোটের দিনের কিছু ছবি সংবলিত একটা পোস্ট আমি আমার বিডিনিউজ ব্লগে দিতে পেরেছি তাই ৷ প্রিয় পাঠকবৃন্দ, এই লেখাটা লিখেছি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল ১০নং ওয়ার্ডের লক্ষীনারায়ণ কটন মিলস্ উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের বাহিরে একটা চা দোকানে বসে ৷ বর্তমানে সময় এখন দুপুর ২.৩০মি: এখনো এই ১০ নং ওয়ার্ডের তিনটি ভোট কেন্দ্রই প্রচুর ভোটারের উপস্থিতি লক্ষণীয় ৷ কে হারবে কে জিতবে তা শোনার জন্য অপেক্ষা করুন আর সন্ধ্যার পর চোখ রাখুন যে কোনো টেলিভিশনের পর্দায় ৷ পরিশেষে শুধু বলছি, বাকীটা সময় যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ বা প্রয়োগের এবং গণনার সমাপ্তি ঘটে, এই কামনা রইল ৷