মহাগুরুর ভালোবাসায় আমি ধন্য হলাম!

নিতাই বাবু
Published : 28 Dec 2016, 06:17 PM
Updated : 28 Dec 2016, 06:17 PM


সেদিন ছিল ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ রোজ: শনিবার, ঠিক বিকেল ৫ঢায় নিজের মুঠোফোনে একটা কল এলো, ফোন লিস্টের নামটা দেখেই খুশিতে আত্মহারা ৷ কলটা করেছেন আমার এই বিডিনিউজ ব্লগের মহাগুরু ৷ কলটা রিসিভ করে নমস্কার জানানোর পর, ফোনের অপর প্রান্ত থেকে মহাগুরু বললেন নিতাই ভাই, কেমন আছেন? বললাম ভালো আছি মহাগুরু, তো' আপনি কেমন আছেন বলেন? মহাগুরু বললেন আমিও একপ্রকার ভালো আছি ৷ আরো বললেন যে, নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে আপনার গন্তব্য কত দূরে? বললাম তা হয়তো ৩ কি:মি: হবো মহাগুরু ৷ মহাগুরুকে জিজ্ঞেস করলাম কেন মহাগুরু জানতে পারি? মহাগুরু বললেন, না মানে আগামীকাল আমি হয়তো নারায়ণগঞ্জ গলাচিপায় আসতে পারি! আসবোই যখন, তখন হয়তো আপনার এখানে আসতে পারি ক্ষণিকের জন্য ৷ আমিতো বেজায় খুশি! বললাম হাঁ মহাগুরু আসেন, আসলে আমি খুব খুশি হবো ৷ মহাগুরু বললেন, আচ্ছা দেখা যাক কী হয়? তো' আপনার চোখের অবস্থা এখন কেমন? বললাম এখন একটু ভোলোর দিকে আছে মহাগুরু ৷ মহাগুরু বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থাকবেন আবার কথা হবে ৷


পরদিন ২৫ডিসেম্বর, রেজ: রবিবার, প্রতিদিনের মত সেদিনও আমি সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠে বাহিরের কাজকর্ম সেরে, জামাকাপড় পরে রওনা দিলাম অফিসে ৷ অফিসে গিয়ে প্রতিদিনের ন্যায় সেদিনও অফিসের কাজে ব্যস্ত, তারমধ্যে বাৎসরিক অডিট সম্পাদনের কাজটাও ছিল বিশেষ ভাবে ৷ তাই ঝটপট করে আগের দিনের সমস্ত হিসাবাদি মালিকদিগকে বুঝিয়ে দিয়ে দোকানে এলাম, এককাপ চা' গিলতে আর একটা সাদা বাসি বাজাতে ৷ এমন সময় আমার মুঠো ফোনে একটা কল, রিসিপ্ট করতে গিয়ে দেখি আমার মহাগুরুর নম্বর ৷


আমি একপ্রকার হতভম্ব হয়ে গেলাম, কল রিসিপ্ট করে নমস্কার জানিয়ে বললাম, মহাগুরু বলেন, আপনি কি নারায়ণগঞ্জ গলাচিপা অবস্থান করছেন? মহাগুরু অপর প্রান্ত থেকে বললেন, হাঁ আমরা বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-ই আছি৷ আমি বললাম, তাহলে মহাগুরু বলুল আপনার অবস্থানের জায়গাটার নাম ৷ বললেন আমরা এখন আছি নারায়ণগঞ্জের গলাচিপায়, তো আপনার অফিস কোথায় বলুন ৷ আমি বললাম, আমার অফিস নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন চৌধুরীবাড়ি সংলগ্ন নিউ লক্ষীনারায়ণ কটন মিলস্ এর বাজারে ৷ মহাগুরু বললেন ঠিক আছে, একটু অপেক্ষা করুন আমরা আসছি ৷ আমি খুশিতে অধীর আগ্রহে মহাগুরুর অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছি, কখন আসছে আমার গুরু, মহাগুরু!


এরপর ঠিক সকাল ১১:৩০ মিনিটের সময় একটা কালো প্রাইভেট কারে করে লক্ষীনারায়ণ কটন মিলস্ স্কুলের সামনে এসে আমাকে ফোন দিলেন মহাগুরু ৷ বললেন নিতাই ভাই, আমরা এখন লক্ষীনারায়ণ স্কুলের সামনে, আপনার অফিস কোথায়? মোবাইলে মহাগুরুর কথার উত্তর দিতে গিয়েই দেখি আমার সামনে দিয়ে একটা কালো রঙ্গের প্রাইভেট কার আমার সামনে অতিক্রম করছে ৷ আমি বললাম গুরু দাঁড়ান, আমি দেখতে পাচ্ছি আপনি একটা কালো রঙ্গের গাড়ি দিয়ে যাচ্ছেন ৷ থামুন! আমি গাড়ির পিছনে আছি ৷
গাড়ি রাখলেন, গুরু, মহাগুরু গাড়ি থেকে তাদের রাঙ্গা চরণ আমার এলাকার মাটিতে রাখলেন ৷ আমি দৌড়ে গিয়ে মহাগুরুর চরণধূলী মাথায় নিলাম ৷ গুরু, মহাগুরু আমাকে বুকে টেনে নিলেন, করমর্দন করলেন, কেমন আছি জিজ্ঞেস করলেন৷
আমি গুরু, মহাগুরুকে আমার চাকরি করা অফিসে নিয়ে গেলাম ৷ গাড়ির ড্রাইভার সাহেব গাড়ি থেকে মহাগুরুর আনা বেশকিছু মালামাল আমার অফিসে এনে হাজির করলেন ৷ অনেকগুলো মিষ্টি আর একটা কার্টুনের বাক্স, বাক্সের ভিতরে যে কী তা আমি তখনো বুঝে উঠতে পারিনি ৷ অফিসে বসার পরপর মহাগুরু সেই কার্টুনের বাক্সটা খুলছে, বাক্স খুলছে আর গুরুমহাশয় বলছে, নিতাই দা কোন একদিন আপনি একটা মন্তব্যে লিখেছিলেন যে, মোবাইলে লিখতে গিয়েই আমার বানানে যত ভুল ৷ যদি একটা ল্যাপটপ হতো তাহলে আর এই ভুলগুলো হতো না ৷ আর ল্যাপটপ হয়তো আমি জীবনে কিনতেও পারবো না ৷ সেই থেকেই মহাগুরু আপনাকে একটা ল্যাপটপ দেয়ার জন্য মনস্থির করে রেখেছেন ৷ আর সেটার পূর্ণরূপ আজকে ফলতে যাচ্ছে আপনার ভাগ্যে ৷ গুরুমহাশয়ের কথা শেষ হতে না হতেই মহাগুরু আমাকে সামনে যাওয়ার জন্য ডাকছে ৷ আমি মহাগুরুর সামনে যেতেই আমার হাতে উঠিয়ে দিলেন একটি মূল্যবান ল্যাপটপ ৷ যা আমার ছিল কোন একদিনের স্বপ্ন, একটা ল্যাপটপ ৷ আমি তখন খুশিতে আত্মহারা ল্যাপটপ পেয়ে নয়, মহাগুরুর দয়া আর কৃপাতে খুশি হয়েছিলাম সবচেয়ে বেশি ৷


আমি তখন বুঝতে পারলাম কোন এক স্বর্গ দেবতা এসে আজ আমার হাতে একটা মহামূল্যবান জিনিস উঠিয়ে দিলেন ৷ বিডিনিউজ ব্লগে লেখা শুরু করার পর শুধু ভাবতাম, যদি একটা ল্যাপটপ কিনতে পারতাম তাহলে কত ভাল হতো! হাতে একটা ল্যাপটপ উঠবে তা কখনো কল্পনাও করি নাই ৷ আজ আমার সেই আশা গুরু, মহাগুরুর দয়ায় পূরণ হয়েছে, যেন আকাশের একটা তারা আমার হতে এসে পৌঁছেছে ৷ আমি গর্বিত, আমি আনন্দিত, আমি আত্মহারা, আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম আমার গুরু, মহাগুরুর কৃপাতে আর দয়াতে ৷ তখন মনে হচ্ছে আমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানষ, আমার মত সুখী মানুষ এই সংসারে আর কেহ নাই ৷ আমার মহাগুরু আছে, আমার গুরুমহাশয় আছে, এর চাইতে বেশি কিছু আর কিছুই আমার দরকার নাই ৷


তারপর সেই আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমার দুজন বসসহ মহাগুরু আর গুরুমহাশয়কে নিয়ে গেলাম কোন একসময়ের খরস্রোতা নদী শীতলক্ষ্যার পাড়ে ৷ তাও ঐতিহ্যবাহী লক্ষীনারায়ণ কটন মিলস্ এর ভিতর দিয়ে ৷ সেখান থেকে মহাগুরু শীতলক্ষ্যার কিছু ছবি সংগ্রহ করলেন ৷ মিলের ভিতরে বসলেন, ঘুরলেন, দেখলেন একটু সময় অতিবাহিত করলেন গুরু, মহাগুরু ওই মিলের ভিতরে ৷ সময় তখন প্রায় ১:৩০মি: হবে, শিষ্যের ভালোবাসার টানে সেই ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ ৷ একটু জলপান ছাড়া আর কিছুই করতে পারি নাই আমি গুরু, মহাগুরু জন্য ৷ নিজের বাসায়ও নিতে পারি নাই পরের বাড়ি থাকি তাই ৷ বাসায় নিলে হয়তো আমি আরো লজ্জিত হতাম, কারণ: বসতে দিবো কোথায়? আমার এই পরিস্থিতি হয়তো গুরু, মহাগুরুও বুঝতে পেরেছেন৷ যাই হোক সেদিন গুরু, মহাগুরুর সাথে আমার দুই বসও ছিলেন ৷ আমার মনিব দুজনও খুব ভালো মানুষ, এক কথায় অতিথি পরায়ণ ও ফুর্তিবাজ লোক তারা ৷


তারপর বিদায়ের পালা ঘনিয়ে এলো ধীরে ধীরে, সময় তখন মনে হয় আনুমানিক বিকাল ৩:০০টা ৷ বিদায়ের আগে গুরুমহাশয় ল্যাপটপ চালানোর জন্য কিছু তথ্যবচন দিয়ে গেলেন সাথে কিছু উপদেশ ৷ আরো দিয়ে গেলেন অনেক অনেক আশীর্বাদ, সেই আশীর্বাদ নিয়েই আমি নতুন করে চলার শপথ নিয়েছি ৷ গুরু শিষ্যের এই ভালোবাসার একটা ভিডিও ইতিমধ্যে একটা ভিডিও আপলোড করে রেখেছি সারাজীবনের জন্য ৷ আমি মরে গেলেও এই ভিডিওটা এই পৃথিবীতে থেকে যাবে যুগযুগ ধরে ৷ অমর হয়ে থাকবে গুরু শিষ্যের ভালোবাসা ৷

https://www.youtube.com/watch?v=OiCWmyBfkv0

জয়গুরু, জয়গুরু ৷ জয় হোক মহাগুরুর, জয় হোক আমার গুরুমহাশয়ের, জয় হোক বিডিনিউজের সকল সম্মানিত ব্লগার/লেখকবৃন্দের, জয় হোক মানবতার ৷
ভিডিওটা দিলাম সবাই যেন আমার প্রাণপ্রিয় গুরু আর গুরুমহাশয়কে একটু দেখতে পারে তাই ৷