আশা ছিল বিশ্ব ইজতেমায় যাবো, কিন্তু যাওয়া হলো না

নিতাই বাবু
Published : 23 Jan 2017, 06:57 PM
Updated : 23 Jan 2017, 06:57 PM

বিশ্ব ইজতেমা শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের এলাকা থেকে লঞ্চ ভাড়া করে এলাকার কিছু মানুষ, এভাবে প্রতি বছরই ইজতেমায় যায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে। তাই এবার আমিও ভেবেছিলাম ইজতেমায় যাব এলাকার সবার সাথে, টিকেটও সংগ্রহ করে রেখেছিলাম ২২ জানুয়ারি ভোরবেলায় যাব বলে। কিন্তু যাওয়া হল না কিছু সংসারের ঝামেলার কারণে, আর নিজের চোখের সমস্যার জন্য। কারণ, সেখানে লক্ষ মানুষের পদচারণায় ধূলোবালিতে থাকে একাকার, যা আমার চোখের জন্য হবে খুবই সমস্যা। এর বহু আগেও আমি যখন টঙ্গী বিসিকে চাকরি করতাম, তখনও পারি নাই এই পবিত্র ইজতেমার লক্ষ লক্ষ মানুষের পদধূলি মাথায় নিতে। মনে হয় আমার ভাগ্যে নাই এই পবিত্র ইজতেমা ঘুরে দেখার। ভাগ্যে থাকলে তো যেতেই পারতাম, তবু আশায় আছি আগামীতে হয়তো যেতে পারব।

আগেই বলে রাখা ভালো যে, এই বিশ্ব ইজতেমার ব্যাপারে আমার কোন বিশেষ ধারণা নাই, তবে সব ধর্ম সমন্ধে আমার খুব জানার ইচ্ছা হয়। তাই আমাদের মহল্লার যেকোন ওয়াজ বা কোন পীর সাহেবের আগমনের অনুষ্ঠানে আমি ওখানে উপস্থিত থেকে সবকিছু উপভোগ করি। যাক সে কথা, যতটুকু জানি ২২ জানুয়ারি ছিল তাবলিগ জামাতের ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার শেষ দিন। দ্বতীয় পর্বে মোনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগতীরে শেষ হয়েছে এই বিশ্ব ইজতেমা। আজ সকাল ১১.৩০ মিনিটের সময় আমি অফিসের কাজ সেরে দোকানে আসলাম এককাপ গরম চা পান করার জন্য, দোকানে গিয়ে দেখি টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের পর্ব সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে। আর প্রতিটি দোকানের কাস্টমার দোকানদার সহ সবাই টিভির দিকে চেয়ে দু'হাত জোড় করে ইজতেমার মোনাজাতের বয়ান শুনছে। তাই দেখে ভাবলাম, এই আখেরি মোনাজাতে হয়তো দেশের সকল স্থান থেকেই ধর্মপ্রাণ মানুষেরা দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় সৃষ্টিকর্তার কাছে দুহাত তুলে ফরিয়াদ করছে ঠিক এভাবেই। আমিও সৃষ্টিকর্তার কাছে কামনা করি এই মোনাজাতের মধ্য দিয়ে যেন সললের মনের আশা পূরণ হয়, জগতের সকল প্রাণীই যেন শান্তিতে থাকে।

নিম্নে আমাদের এলাকার কিছু দোকানে ধর্মপ্রাণ মানুষের মোনাজাতে অংশ নেয়ার দৃশ্য দেয়া হল।

এক চ'দোকানদারকে মোনাজাতরত অবস্থায় দেখা যায়।

অরেক চা দোকানদারকে দুহাত তুলে মোনাজাত ধরতে দেখা যায়।

চা দোকানের ভেতরে মোনাজাতে অংশ নেয়া কিছু ধর্মপ্রাণ মানুষ।

দোকানের সামনে দু'হাত তুলে ফরিয়াদ করছে কিছু মানুষ।

ফোন ফ্যাক্সের দোকানে ক'জন।

একটি মুদিদোকানের সামনে কয়েকজন মানুষ দু'হাত তুলে মোনাজাতে শরিক হয়।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমি একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ, আমার কোন ধর্ম জ্ঞান আমার নাই। তবু এই বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে যেতটুকু জানা যায় সেব্যাপারে কিছু লিখতে মন চায়, জানিনা আপনাদের হৃদয়গত হয় কিনা। ভুল হলে দয়া পূর্বক আমাকে ক্ষমা করে দিবেন আশা করি।

"সিরাতুন মুসতাকিম" নামের একটি ওয়েব সাইট থেকে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ৬ দশক আগে ১৯১০ সালে ভারতের এক জনবিরল অঞ্চল মেওয়াত থেকে হাতে গোনা ক'জন মানুষ নিয়ে হযরত ইলিয়াছ কান্ধলভী (রঃ) তাবলিগের দাওয়াতে মেহনত শুরু করেন। তাবলিগের এ মেহনত এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। হযরত ইলিয়াছ (রঃ) ১৩৫১ হিজরি সালে হজ্ব থেকে ফিরে আসার পর সাধারণ মুসলমানদের দুনিয়া ও সংসারের ঝামেলা থেকে মুক্ত করে ছোট ছোট দলবদ্ধ করে মসজিদের ধর্মীয় পরিবেশে অল্প সময়ের জন্য দ্বীন শিক্ষা দিতে থাকেন। এরই মাঝে একদা তিনি হুজুর আকরাম (স.) কে স্বপ্নে দেখেন এবং মহানবী (স.) তাকে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের জন্য নির্দেশ দেন। মহানবী (স.) এর নির্দেশ মোতাবেক তিনি দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের সূচনা করেন। তারপর এ কাজকে আরো বেগমান ও গতিশীল করার জন্য এ উপমহাদেশের সর্বস্তরের আলেম-ওলামা পীর-মশায়েখ ও বুজর্গদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয় এবং দিল্লীর কাছে মেওয়াতে সর্বস্তরের মুসলমানদের জন্য ইজতেমা বা সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়।

এরপরই ক্রমেই তাবলিগের কার্যক্রম বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের গন্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় বিশ্বের সর্বত্র। হযরত মাওলানা আব্দুল আজিজ (রহ.) এর মাধ্যমে ১৯৪৪ সালে বাংলাদেশে তাবলিগ শুরু হয়, এরপর ১৯৪৬ সালে বিশ্ব ইজতেমা সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের তাবলিগের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে। পরে ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামে হাজী ক্যাম্পে ইজতেমা শুরু হয়। এরপর ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে, তারপর ১৯৬৫ সালে টঙ্গীর পাগারে এবং সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর ভবেরপাড়া তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব ইজতেমা। সেই থেকে এখন পর্যন্ত সেখানেই ১৬০ একর জায়গায় তাবলীগের সর্ববৃহৎ ইজতেমা বা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

ভারতের মুম্বাই ও ভূপালে এবং পাকিস্তানে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও জনসমাগমের বিচারে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাই বড় এবং বিশ্ব দরবারে বিশ্ব ইজতেমা বলতে বাংলাদেশের টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমাকেই বুঝায়। এটা আমাদের জন্য একটা গর্বের বিষয়, তাই বিশ্ব ইজতেমা যুগে যুগে সফল হোক সেই কামনা করছি। আগামীতে যেন আমি এই বিশ্ব ইজতেমায় যেতে পারি তার জন্য সবার আশীর্বাদও কামনা করি।