মাননীয় রেলমন্ত্রী মহোদয়,
বিষয়ঃ পরিত্যক্ত রেললাইনগুলো উঠিয়ে নিয়ে দখলদারীদের নির্বিগ্নে নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া প্রসঙ্গে।
যথাবিহীত সম্মান পূর্বক সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে, আমি এই স্বাধীন বাংলাদেশের ষোল কোটি জনগণের মধ্যে একজন নাগরিক। মহোদয়, এই দেশের সম্পদ ষোল কোটি মানুষের সম্পদ, দেশের বিভিন্ন সম্পদের মধ্যে রেলওয়ের জায়গা ও রেললাইনও একটা সম্পদ। আর এই সম্পদের দেখাশোনার দায়িত্ব রাষ্ট্র কর্তৃক রেলমন্ত্রণালয়ের উপর ন্যস্ত।
মহোদয়, স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৮৭ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া টু সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজী সংলগ্ন সাইলো বিশ্বগোডাউন সহ আরও দুটি রেল সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়, যা এই পর্যন্ত আর এই রেললাইন দিয়ে কোনো মালবাহী রেলগাড়ী চলাচল করছে না। রেল চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে এই রেল পথের পরিত্যক্ত দামী লোহার লাইনগুলি দিনদিন মাটির নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে, আর রেললাইনের দুই পাশের খালি জায়গাও দখল হয়ে গেছে।
মহোদয়,
জায়গা দখল হোক বা হয়েছে তাতে কোনো সমস্যা নয়; কারণ, রেলওয়ের রেললাইনের ধারে দেশের গরীব মানুষেরা-ই ঘর বানিয়ে কোনরকম ভাবে মাথা গুঁজে থাকছে বা বসবাস করছে। যারা থাকছে তাঁরা আমাদেরই মা-বাবা, ভাই-বোন ও দেশের মানুষ, যাদের মাথা গুঁজার ঠাই নেই, তাঁরাই থাকছে বস্তিবাসীর মত রেললাইনের পাশে নিরুপায় হয়ে। কিন্তু মহোদয়, আপনার এই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা রেললাইনের জন্য এই গরীব মানুষগুলো নিরাপদে নির্বিগ্নে থাকতে পারছে না। না পারার কারণ বলতে বলা যায়, রেললাইনের পাশে আর কতটুকু জায়গা থাকে মহোদয়? রেললাইনের পাশে থাকে খাল অথবা পুকুর, যেই খাল আর পুকুর কেটে রেললাইন করার রাস্তা করেছিল। সেই পুকুর আর রেললাইনের মাঝখানে যতটুকু জায়গা খালি থাকে? তবু যেটুকুই আছে তারমধ্যেই ওইসব গরীব মানুষগুলো কোনরকম ভাবে মাথা গুঁজে আছে বাঁচার তাগিদে। মহোদয়, এখন যদি মাটির নীচে চাপা পড়া এই পরিত্যক্ত রেললাইন উঠিয়ে নেন, তাহলে রেললাইনের পাশে থাকা গরীব দারিদ্র মানুষগুলো আরেকটু আরাম-আয়েশে আর নিরাপদে থাকতে পারবে।
মহোদয়,
কোন একসময় আমাদের নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া হতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল কো-অপারেটিভ, চিত্তরঞ্জন কটন মিলস্ সংল্গন বি.জে.এম.সি আর সিদ্ধিরগঞ্জ সাইলো বিশ্বগোডাউন পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ছিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাংলার সোনালী আঁশ পাট আর বিভিন্ন খাদ্য-দ্রব্য রেলওয়ের মালগাড়ী বোঝাই করে ঢাকা হয়ে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ, তারপর নারায়ণগঞ্জ হতে চলে যেত কো-অপারেটিভ, বি.জে.এম.সি আর সিদ্ধিরগঞ্জ সাইলো বিশ্বগোডাউন। ১৯৮৬/৮৭ সালের পর থেকে চাষাঢ়া টু বি.জে.এম.সি ও সাইলো বিশ্বগোডাউন রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধ হওয়ার কারণও আছে। কারণ, বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সীঃ) (কো-অপারেটিভ) এর পাট তখন আর রেলযোগে আনা হতো না। পাট আসতো ট্রাকে করে আর আসতো নদী পথে নৌকায়, কাজেই রেলওয়ের মালগাড়ীর আর দরকার হত না। আর বি.জে.এম.সি এর অবস্থাও ঠিক একই রকম, যা আসার তা আসে বাই রোডে আর নৌকায়।
এই দুই প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে সিদ্ধিরগঞ্জ সাইলো বিশ্বগোডাউনও একই অবস্থা, তাহলে রেলওয়ের মালগাড়ীর আর দরকার নাই, রেল বন্ধ। কিন্তু রেলওয়ের লোহার লাইনগুলো এখনো ঠিক জায়গায় পড়ে আছে, বর্তমানে বেশিরভাগ রেললাইনই মাটির নিছে চাপা পড়ে আছে। আর রেললাইনের দুই ধারে গড়ে উঠেছে স্থায়ী বসতি। গড়ে উঠা এসব বসতির মধ্যে আছে যাদের কোথাও মাথা গুঁজার স্থান নাই, অসহায় দারিদ্র্য কিছু মানুষ। তাদের নেই বিদ্যুৎ, নেই পানি, নেই গ্যাস, তাদের বাড়ির দলিল নাই বিধায় পানির সংযোগ দিচ্ছে না, তিতাস গ্যাস কোপম্পানি গ্যাস দিচ্ছে না, তাঁরা বিদ্যুৎও পাচ্ছে না ঠিক একই কারণে। এই পরিত্যক্ত রেললাইনই হচ্ছে তাদের যত ঝামেলার কারণ।
মহোদয়, দয়া করুণ, এই পরিত্যক্ত রেললাইন উঠিয়ে নিন, তাদেরকে সুন্দরভাবে বাঁচতে দিন। মহোদয়, যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকার রেললাইন পড়ে আছে যুগযুগ ধরে মাটির নীচে মূল্যহীনভাবে, সেখানে এসব গরীব অসহায় মানুষগুলো বড় একটা বোঝা নয়, তারাও বেঁচে থাকতে চায়, তাদেরও বাঁচার অধিকার আছে, তারাও মানুষ । প্রয়োজনে এইসব দখলকৃত জায়গা লিজ সংক্রান্ত নীতিমালার বিধান রেখে তাদের মাঝে লিজ দিয়ে দিন, তারাও থাকুক সুন্দরভাবে মিলেমিশে আমাদের সাথে।
অতএব, মহোদয় সমীপে আমার আকুল আবেদন ও বিনীত প্রার্থনা এই যে, বর্তমান দূরমূল্যের বাজারে এই পরিত্যক্ত লোহার রেললাইনগুলো এভাবে ফেলে না রেখে, সেগুলো উঠিয়ে নিয়ে টেন্ডার আহ্বানে বিক্রি করে, দেশের কোষাগারে যোগ করে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করে সরকারকে সহায়তা করুন, সেই সাথে রেললাইনের পাশে থাকা মানুষদের সুন্দরভাবে বসবাস করার সুযোগ করে দিতে মহদয়ের সু-আজ্ঞা কামনা করি।
বিনীত নিবেদক,
স্বাধীন বাংলাদেশের একজন গরীব মানুষ।