প্রিয় ব্লগ! অঞ্জলি লহ মোর

নিতাই বাবু
Published : 18 Feb 2017, 04:25 AM
Updated : 18 Feb 2017, 04:25 AM


ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার আমাদের নাগরিক সাংবাদিকদের মিলনমেলায় সাথে করে কাউকে নিবো বলে ভাবছিলাম, কিন্তু যাকেই বলছি সাবাই বলছে, বাবু ব্যস্ত কাজ আছে। উপায়ান্তর না দেখে আর কাউকে কিছু না বলে নিজেই সকাল সাতটায় একা একা বের হলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে, চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বেকার পরিবহনে চড়ে গুলিস্তানের উদ্দেশে রওনা দিলাম। আদমজী ইপিজেডের সামনে আসতেই শুরু হলো জ্যাম, জ্যাম কী যেই সেই জ্যাম? এক জ্যামেই এক ঘন্টা পার। সেখান থেকে চিটাগাং রোড আসতে সময় লাগলো এক ঘন্টা ত্রিশ মিনিট, সময় হলো সকাল সাড়ে আটটা।


হায় কপাল! যাবো কখন? বসেবসে ভাবছি একা একা, ভাবতে ভাবতে আসলাম গুলিস্তান। গুলিস্তান নেমে ভাবছি ওয়েলকাম বাসে চড়ে যাবো, না সিএনজি নিয়ে তাড়াতাড়ি করে যাবো। ভেবেচিন্তে সিএনজি নিলাম।

যাওয়ার পথে মোবাইলে কথা হলো ব্লগার/লেখক গৌতম বুদ্ধের সাথে, কথা হলো তানজির দাদার সাথে, আরো কথা হলো সুমন দে দাদা'র সাথে, কাজী শহীদ দাদাও আর বাদ থাকলো না কথা হলো। সবাইকে বলছি আমি গুলিস্তান থেকে সিএনজি নিয়ে ধানমন্ডি রওনা দিয়েছি কিছুক্ষণের মধ্যেই ধানমন্ডি ড্যাফোডিল টাওয়ারের সামনে হাজির হচ্ছি।

সবাই বললো দাদা আসেন আমরাও আসছি, ড্যাফোডিল টাওয়ারের সামনে এসে আপনাকে ফোন দিবো, বললাম আচ্ছা ঠিক আছে আমি সোবানবাগ মসজিদের কাছাকাছি আছি আপনারা আসেন।

.

কিছুক্ষণ পর সম্মানিত লেখক তানজির দাদা ফোন করে বললেন দাদা আপনি কোথায়? আমি উত্তর দিলাম, দাদা আমি সোবানবাগ মসজিদের সামনে আছি। তানজির দাদা বললেন, দাদা সামনের ফুট ওভারব্রিজ পার হয়ে ড্যাফোডিল টাওয়ারের সামনে আসেন, আমি সেখানে অবস্থান করছি।

.

তানজির দাদা'র কথামতো ফুট ওভারব্রিজ পার হয়ে ড্যাফোডিল টাওয়ারের সামনে যেতেই দেখি সম্মানিত প্রাণপ্রিয় তানজির দাদা আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। সামনে গিয়ে দাদা'র সাথে করমর্দন করে টাওয়ারের পাশে গেলাম চা-পান করতে। এমন সময় ফোন এলো আমাদের ব্লগের লেখক গৌতম বুদ্ধের, জিজ্ঞেস করলো দাদা আপনি কোথায়? আমি বললাম, আমি আর তানজির দাদা ড্যাফোডিল টাওয়ের পাসের চা' দোকানে আছি আপনি এখানে আসুন।

.

আমাদের সাথে এবার যোগ হলেন গৌতম বুদ্ধ পাল। তারপর তিনজনে মিলে নাস্তা আর চা-পান করে আসলাম ড্যাফোডিল টাওয়ারের সামনে। সেখানে দেখি চাঁদপুরের লেখক রিফাত কান্তি সেন এক বন্ধু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তারপর তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ড্যাফোডিল টাওয়ারের ভিতরে প্রবেশ করলাম।

.

আমরা সবাই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ব্লগের ষষ্ঠ বর্ষপূর্তিতে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দদের মতবিনিময় সভা মঞ্চের প্রধান ফটকের সামনে ডায়রীতে নাম এন্ট্রি করে ভিতরে গেলাম, সাথে ছিলো সম্মানিত ফারদিন দাদা। ভিতরে গিয়ে বসার ২০/৩০ মিনিট পর সভাকক্ষে এক এক করে সম্মানিত অতিথিবৃন্দ সহ বিডিনিউজ ব্লগের প্রায় সবাই এসে উপস্থিত হয়।

.

কিছুক্ষণ পর সভাকক্ষে উপস্থিত হলেন ঢাকা দক্ষীণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সম্মানিত জনাব মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সাহেব, উপস্থিত হলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান তথ্য কমিশনার সম্মানিত অধ্যাপক জনাব গোলাম রহমান সাহেব এবং আরো উপস্থিত হলেন আমন্ত্রিত অন্যান্য সম্মানিত অতিথিবৃন্দ।

.

দেখতে দেখতেই সভাকক্ষটি কানায় কানায় ভরে গেল মূহূর্তের মধ্যেই, আমি তখনো চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি আমার মহাগুরু আর আমার শ্রদ্ধেয় সুকান্ত দাদাকে দেখার জন্য, কিন্তু না, দেখছি না।

.

অবশ্য সুকান্ত দাদা আমাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল উনি আজ এই মিলনমেলায় উপস্থিত থাকতে পারবেন না, হাতে প্রচুর কাজ থাকার কারণে। তবু আশায় ছিলাম, হয়তো আসবেন, এদিক-ওদিক তাকিয়ে সুকান্ত দাদা আর মহাগুরুকে না দেখে মন খারাপ করে বসে আছি সভাকক্ষের দ্বিতীয় সারিতে।


কিছুক্ষণ পর সম্মানিত আইরিন সুলতানা দিদির সঞ্চালনায় শুরু হয় মিলনমেলার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা আর দেখানো হয় ২০১৬ সালে ব্লগারদের নির্মিত ভিডিওচিত্র 'দ্য রাইজ অব সিটিজেন জার্নালিজম' এর ভিডিও।

বিডিনিউজ ব্লগের সম্মানিত আইরিন সুলতানা দিদি তুলে ধরেছেন ২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিডিনিউজ ব্লগ ডট কম যাত্রা শুরু করে অদ্য পর্যন্ত পথচলার কিছু কথা। এরপর সম্মানিত আইরিন সুলতানা দিদি আমন্ত্রিত সম্মানিত অতিথিবৃন্দদের মঞ্চে আসন গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন।

.

সম্মানিত অতিথিবৃন্দ আসন গ্রহণ করার পর তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ফুলের তোড়া, আর দেওয়া হয় ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর ব্লগারদের ২৫টি লেখা দিয়ে এবারের প্রকাশিত 'নগর নাব্য- মেয়র সমীপেষু বই। প্রকাশিত নাগরিক সাংবাদিকদের নির্বাচিত ২৫ লেখার সংকলন 'নগর নাব্য- মেয়র সমীপেষু'র বইয়ের মোড়ক 'উম্মোচন হয় সম্মানিত অতিথিবৃন্দের হাতের ছোঁয়ায়।

.

এই মিলনমেলার আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র আর সংবাদ সংগ্রহের জন্য সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলো দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল এর সাংবাদিকবৃন্দ। তাদের সাথে যোগ দেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর।

.

এরপর সম্মানিত আইরিন সুলতানা দিদি প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় ব্লগারদের এবারে সম্মাননা দেওয়ার বিষয়ে প্রসঙ্গ টেনে আমার লেখার একটা শিরোনাম বলতে থাকে। শিরোনামটা ছিল 'শীতলক্ষ্ম্যা নদীতে বিষাক্ত কেমিক্যালের পানি এবং আমাদের মৃত্যু', আমি বসে বসে দিদির কথা শুনছিলাম। পরে সম্মানিত মেয়রের কাছ থেকে আমাকে সম্মাননা পুরস্কার নেওয়ার জন্য মঞ্চের সামনে আসতে বলেন।

.

ঘোষনা দেয়ার সাথে সাথে আমার পাশে বসা আমার প্রিয় লেখক ফারদিন ফেরদৌস দাদা আমাকে অতিথিবৃন্দের সামনে যেতে বললেন, তখন আমি আনন্দে আর ভয়ে কাঁপছিলাম। আবার এই সম্মাননা পাবার আনন্দে ভেতরে-ভেতরে একপ্রকার কাঁদতে লাগলাম, সেটা ছিলো অতি সুখে আনন্দের কান্না। আমতা-আমতা করে সম্মানিত অতিথিবৃন্দের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, সম্মানিত মেয়র সাহেব আমাকে আর একটু সামনে আসতে বলেন, আমি সামনে গেলেই সম্মাননার একটা ক্রেস্ট ও রঙিন কাগজে মোড়ানো দুটি পুস্তক সহ আমার হাতে তুলে দেয়।

.

আমি সম্মানিত মেয়রের হাত থেকে ব্লগের সম্মাননা পুরস্কার আমার হাতে নেওয়ার পরেই শুরু হয় মঞ্চে উপস্থিত সকল সম্মানিত ব্যক্তি ও আমার প্রিয় সহ-ব্লগার/লেখকবৃন্দদের হাততালি। আমি হাতে নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত সম্মানিত অতিথিবৃন্দদের সাথে করমর্দন করে সবাইকে নমস্কার জানিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে এসে আমার প্রিয় লেখকদের সাথে বসি।

.

এর কিছুক্ষণ পর শুরু হয় প্রশ্ন-উত্তর পর্ব, সেই পর্বে আমাদের বিডিনিউজ ব্লগের অনেকেই সম্মানিত মেয়র সাহেবকে নগরের সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করেন, সম্মানিত মেয়র সাহেবও সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্ন-উত্তর পর্বের পরপর শুরু হয় স্বাগত ভাষণ, এরপর শুরু ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ষষ্ঠ বর্ষপূর্তির কেক কাটা। সম্মানিত অতিথিবৃন্দ ব্লগের ষষ্ঠ বর্ষপূর্তির কাক কেটে মিষ্টিমুখ করে সভাস্থল ত্যাগ করেন। আমরা সকল ব্লগার/লেখকরা মেতে উঠি আনন্দে উল্লাসে, হাসি আর গানে।


এই মহানন্দে একসাথে উল্লোসিত ছিলাম সম্মানিত গুরুমশাই জনাব জুলফিকার জুবায়ের সাহেব, সমানিতা নাজনিন খলিল, সাম্মানিত ফারদিন ফেরদৌস, সম্মানিত কাজী রাশেদ সাহেব, সম্মানিতা রোদেলা নীলা দিদি, সম্মানিতা নুরুন নাহার লিলিয়ান দিদি, সম্মানিতা আনা নাসরিন দিদি, সম্মানিত সৈয়দ আশরাফ মহিউদ্দিন, কাজী শহীদ শওকত, সম্মানিত তানজির খান, সম্মানিত জাহেদুর রহমান, সম্মানিত গালিব মেহেদি খান, সম্মানিত উৎপল চক্রবর্তী সম্মানিত সুমন দে, সম্মানিত সাজ্জাদ রহমান, সম্মানিত শফিক মিতুল, সম্মানিত নুর ইসলাম রফিক, সম্মানিত রিফাত কান্তি সেন, সম্মানিত গৌতম বুদ্ধ পাল, সম্মানিত সুকিত বণিক, সম্মানিত মিঠুন চাকমা সহ ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির বহু শিক্ষার্থী, যারা এই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগকে ভালোবাসে। সেই মহতি লগ্নে বর্ষপূর্তির কেক কেটে খাওয়ার দৃশ্য কখনো ভোলার মতো নয়, একে অপরকে কেক খাওয়ানোর দৃশ্য আর ছবি তোলার হিরিক।

.

সেসময় মিলনমেলায় সবার সান্নিধ্যে আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ি, মনে হয়েছিল আমি নিজ পরিবারের আপনজনদের সাথেই আনন্দে মেতে আছি। ব্লগের এই মিলনমেলায় এসে বুঝতে পারলাম, যারা লেখক, যারা লিখে তাদের মনটা থাকে অনেক বড়। লেখকরা খুব সহজেই যেকোনো মানুষকে আপন করে বুকে টেনে নিতে পারে, যারা লেখক তাঁরাই বুঝে মানুষের মনের কথা আর মনের ব্যথা।

.

পরে সবাই মিলে একসাথে চতুর্থতলায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে কিছুওক্ষণ কর্মশালায় বসে লেকচার শুনে ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্মানিতা আইরিন সুলতানা দিদির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ড্যাফোডিল টাওয়ার থেকে নেমে আসি, আমি ফারদিন দাদা, শহীদ শকওত দাদা, তানজির দাদা, উৎপল দাদা সহ।


আমার এই সম্মাননার জন্য আমি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগটিমের কাছে ঋণী, আমি এই প্ল্যাটফর্মের সবার কাছে কৃতজ্ঞ যারা আমাকে এই সম্মাননা দেয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করেছেন। এই ঋণ শোধরানোর মতো নয়, ব্লগ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর আমাকে বহু কিছু দিয়েছে, ব্লগ থেকে আমি বহুকিছু পেয়েছি শিখেছি, দিতে পারি নাই কিছুই, আমার দেওয়ার সামর্থ্যও নাই।

.

আমার মতো একজন নগণ্য মানুষকে এই বিশাল সম্মাননা দিয়ে আমাকে ঋণী করার জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সেই সাথে বিডিনিউজ ব্লগের সকল ব্লগার/লেখকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ ও আজীবন ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে রইলাম, এই ভালোবাসা ছিন্ন হবার নয়। আর এই সম্মাননা আমার একার নয়, এই বিশাল সম্মাননা এই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগের সবার সম্মাননা। জয়তু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, জয়তু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগের নাগরিক সাংবাদিক ব্লগার/লেখক, জয় হোক দেশ ও দেশের মেহনতি মানুষের।