নারায়ণগঞ্জ গোদনাইলে পানির জন্য রাস্তা বন্ধ করে মানববন্ধন কর্মসূচী

নিতাই বাবু
Published : 8 March 2017, 02:57 AM
Updated : 8 March 2017, 02:57 AM

গত ৬ মার্চ রোজ সোমবার সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ গোদনাইল এলাকায় মাইকিং করে জানানো হয়, ৭ মার্চ রোজ মঙ্গলবার সকাল ৯ ঘটিকার সময় গোদনাইল চোধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে খালি কলশি নিয়ে যেন মানববন্ধন কর্মসূচীতে সবাই হাজির হয়।

শীতলক্ষ্যা নদীর পানি শোধন করে গোটা নারায়ণগঞ্জবাসীর জীবন চলে। কিন্তু, বর্তমানে গোদনাইল পানির কল এলাকায় অবস্থিত পানি শোধনাগাররে পানি শোধান করে পুরোপুরিভাবে গোটা নারায়ণগঞ্জ শহরে ঠিকমত পানি সরবরাহ করতে পারছেনা। কারণ, বর্তমানে আগের চেয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে জনসংখ্যা অনেক বেশি। প্রায় সব জায়গাতেই ঘনবসতি, যেখানে ছিল ডোবা-নালা আর পুকুর খাল, সেখানে আজ বড়বড় রড-সিমেন্টের তৈরি ১০/১২ তলা বিল্ডিং।

তাই ঢাকা ওয়াসা নগরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে সরকারি খাসজমিতে গভীর নলকূপ (পানির পাম্প) বাসায়। শীতলক্ষ্যা নদীর পানি পান না-করা গেলেও এই গভীর নলকূপের পানি মানুষ মনের আনন্দেই পান করে থাকে। তবে শহরের সব জায়গাতে এই গভীর নলকূপ (পানির পাম্প) নাই, সব এলাকার মানুষে এই গভীর নলকূপের পানি পায়না।

নারায়ণগঞ্জ শহরে মোট নলকূপের সংখ্যা আমার জানা না-থাকলেও গোদনাইল এলাকার নলকূপের সংখ্যা আমার জানা আছে। নারায়ণগঞ্জ সিটির ৮/৯/১০ নং ওয়ার্ডে মোট নলকূপের সংখ্যা তিনটি, যথাক্রমে আরামবাগ, তাঁতখানা ও পাঠানটুলী গোরস্থান।। এই তিন জায়গায় তিনটি পাম্প আছে, অত্র এলাকার জনগণের পানির চাহিদা পূরণের জন্য। কিন্তু এসব পাম্প থেকে এলাকার সাধারণ জনগণ ঠিকমত পানি পায়না। কদিন পরপর পাম্প বিকল হয়ে পড়ে, বিদ্যুৎ না-থাকলে পানি পাওয়া যায়না, ঠিকমতো পানি প্রেসার হয় না।

এদিকে পানি সোধনাগার থেকেও এই এলাকায় পানি সরবরাহ করেনা, লাইন বা সংযোগ নাই বিধায়। ফলে গোদনাইল এলাকার মানুষ দিনদিন পানির কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ৭ মার্চ মঙ্গলবার চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে সবাই খলি কলশি নিয়ে জড়ো হয় রাস্তার মাঝখানে। তখন সবার হাতে ছিল খালি কলশি, বালতি, মুখে ছিল শ্লোগান পানি চাই পানি চাই, পানি ছাড়া রক্ষা নাই।

এসময় গোদনাইল এলাকার হাজার হাজার মানুষ যখন চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে সমাবেশিত হয়, তখন নারায়ণগঞ্জ-ডেমড়া-চিটাগাং রোডের সব যানবাহ মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। সকাল নয়টা থেকে শুরু হওয়া মানববন্ধনের কারণে মেইন রোডে হাজার হাজার গাড়ি সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এরফলে এলাকার সমস্ত রাস্তাঘাটে দেখা দেয় তীব্র যানজট, পথচারী হয়ে পড়ে দিশেহারা, রাস্তার পাশের দোকানদারদের মনে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক, কখন যে কী ঘটে যায়। বেলা ১০ টায় খবর পেয়ে, পরিস্থিতি সামাল দিতে আর জনগণকে শান্তনা দিতে, ছুটে আসে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র।

ছুটে আসে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ। পরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার মিলে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী মানুষকে বুঝনোর চেষ্টা করেন। সেসময় সিটি মেয়র ও স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারদের রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ক্ষিপ্ত এলাকাবাসীদের সেথে কথা বলতে দেখা যায়।

গোদনাইল এলাকার মানুষের ভাষ্য, আগের মতো বাড়িবাড়ি টিউবওয়েল জাঁতাকল নাই, বর্তমানে এই নলকূপের (পাম্প) পানিই আমাদের জীবনধারণের একমাত্র উপায়।

অথচ কদিন পরপর এই নলকূপ (পাম্প) বিকল হয়ে পড়লে বিশুদ্ধ পানির জন্য আমাদের দৌড়াতে হয় নানান জায়গায়, যেখানে টিউবওয়েল (জাঁতাকল) আছে সেখানে। তাহলে এই সাইনবোর্ড মার্কা পানির পাম্প রেখে লাভ কী? এসব পাম্পগুলি উঠিয়ে নিয়ে আমাদের স্থায়ীভাবে পানির ব্যবস্থা করে দেন,যেন আমরে পানির জন্য আর কষ্ট কতে না হয়। পরে এলাকাবাসীর কথা শুনে সিটি মেয়র পানির আর পাম্পের এই দুরবস্থা অচিরেই সমাধানের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে বলে এলাকার মানুষকে আশ্বস্ত করেন। তারপর সম্মানিত মেয়রের কথা শুনে এলাকার জনগণ রাস্তা ছেড়ে দিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচীর সমাপ্তি ঘোষণা করেন।