সাজ্জাদ রাহমান এর হাত ধরে তরঙ্গিণী নাট্যকেন্দ্রের নবযাত্রা

নিতাই বাবু
Published : 10 May 2017, 05:25 AM
Updated : 10 May 2017, 05:25 AM

আমি ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এ নিবন্ধিত হয়েছি গত ২০১৫ সালের ৩ মার্চ। আমার প্রথম লেখাটি ছিল অল্পসংখ্যক শব্দ দ্বারা আমার মনের কিছু দুঃখের কথা। সেই থেকে ব্লগে লেখার মন্তব্যের জের ধরেই আমি ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর ব্লগার/লেখক সম্মানিত সাজ্জাদ রাহমানকে চিনি ও জানি। অত্যন্ত বিনয়ী নম্র স্বভাবের একজন মানুষ তিনি। আমার জন্মস্থান নোয়াখালী শুনে সম্মানিত সাজ্জাদ রাহমান আরও খুশি হয়ে আমার প্রতিটি লেখাই ফলো করতে থাকে। কারণ, ওনার বাড়ি আর জন্মস্থানও নোয়াখলীর মাইজদি টাউনে!

একসময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্লগের এক আড্ডায় ভাগ্যক্রমে দেখা হয়ে যায় লেখক সাজ্জাদ রাহমানের সাথে। প্রথমে পরিচয়, পরে আড্ডার একফাঁকে আলাপ, একদেশের একজেলার দুইজন আমরা, তাই জীবন নিয়েও অনেক আলাপ-সালাপ হয়েছিল।

অসাধারণ প্রতিভাধর একজন মানুষ সাজ্জাদ রাহমান।

এরপর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্লগের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও 'নগর নাব্য- মেয়র সমীপেষু' বইয়ের মোড়ক উম্মোচনের দিন ঢাকা ধানমণ্ডির ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি টাওয়ারে সাজ্জাদ রাহমানের সাথে দেখা। সেদিন ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর পক্ষ থেকে আমার সম্মাননা প্রপ্তিতে ব্লগের সবার মতো সাজ্জাদ রাহমানও ভীষণ খুশি হয়েছেন। সেই খুশির বার্তা নিয়ে সাজ্জাদ রাহমান একদিন নারায়ণগঞ্জ আমার বাসায় এসে উপস্থিত হলেন। সেদিন সাজ্জাদ রাহমান আমার অফিসে আর বাসায় প্রায় তিন-চার ঘন্টা অবস্থান করেছিলেন, চিরদিন আমার সেই স্মৃতি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেদিন থেকে সাজ্জাত রাহমান সম্পর্কে আমি আরও বেশি করে জানতে আগ্রহী হয়ে পড়ি।

জানতে থাকি সাজ্জাদ রাহমানের ফেসবুক আইডি থেকে, কখনো বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে, কখনো মেসেজ ইনবক্সে। তিনি একজন অসাধারণ নাট্যকার, মঞ্চনাটক হলো ওনার দেহের রক্ত, অভিনয় তার জীবনসঙ্গী, লেখালেখি তার মনের খোরাক। জেনেছি তার সাথে ঘনিষ্ঠতা হবার পর আর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইট থেকে। সময় সময় জিজ্ঞেসও করেছিলাম হাসি ঠাট্টার ছলে, প্রত্যুত্তর দিয়েছিলেন তিনি, তাই জেনেছি।

কয়েকজন নতুন মুখের সাথে সাজ্জাদ রাহমান।

সাজ্জাদ রাহমান নাটক পরিচালনা সহ কখনো প্রযোজক, কখনো অভিনেতা, আবার দুর্দান্ত লেখক ও রচনাকার। আবার DBC নিউজেও কর্মরত। জানা যায়, ওনার জীবনের সাথে এই মঞ্চনাটক সঙ্গী হয় ১৯৮৮ সাল থেকে 'তরঙ্গিনী নাট্যকেন্দ্র' এর মাধ্যমে। 'তরঙ্গিণী নাট্যকেন্দ্র' ছিলো নোয়াখালীর অন্যতম জনপ্রিয় নাট্য সংগঠন। তখন তরঙ্গিণী নাট্যকেন্দ্রের উদ্যোগে কাঁদো নদী কাঁদো, নদী ফিরে এসো, বাঁচো এবং বাঁচতে চাও, ওরা কদম আলী, ন্যাশনাল টেরর গার্টেন, আড়াই হাজার সালের দিনকাল, বিফলে মূল্য ফেরত প্রভৃতি সাড়া জাগানো নাটক ছিলো আলোচনার শীর্ষে। তখনকার সময় গোটা নোয়াখালীর মানুষের মুখেই ছিল এই 'তরঙ্গিণী' নাট্যকেন্দ্রের কথা, যা সাজ্জাদ রাহমানের কাছ থেকে জানা যায়। আর আগেকার মানুষে এমনিতেই ছিল সাংস্কৃতি প্রিয়, যেখানে ছিল কোনো নাটক বা যাত্রাপালা, সেখানেই ছিল মানুষের ভীড়। তাই 'তরঙ্গিণী নাট্যকেন্দ্র' এর জয়গান ছিল মানুষের মুখেমুখে।

মঞ্চনাটকের দিকনির্দেশনা।

এরই ধারাবাহিতায় সম্প্রতিকালে সংগঠনটি নতুন করে রাজধানীতে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে সাজ্জাদ রাহমানের উদ্যোগে। ওনার উদ্দেশ্য শুধু একটাই, তা হল আমাদের দেশে চলচ্চিত্রে এই দুর্দিনে মানুষকে নতুন করে সিনেমাহলমুখী করা। বর্তমানে আমাদের দেশে চিত্রজগতে সেই আগের মতো বিখ্যাত বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীর খুবই অভাব, তা সবারই জানা। এসব সংকট নিরসনের লক্ষ্যে গত ৬ মে শনিবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর মিরপুরে 'মেগাসোর্স করপোরেশন' কার্যালয়ে বেশ কিছু নতুন মুখ নিয়ে এই নবযাত্রা ঘোষণা করেন চিত্রপরিচালক, টিভি নাট্যকার ও পরিচালক সাজ্জাদ রাহমান। সেখানে সাজ্জাদ রাহমান আমাকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু আমার শারীরিক অসুস্থতার কারণে সাজ্জাদ রাহমানের ঘোষিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকিতে পারি নাই। যদি উপস্থিত হতে পারতাম তাহলে অনেক আনন্দ পেতাম, উনিও খুশি হতেন। যেতে পারি নাই সেটাই এখন দুঃখ।

মঞ্চনাটকের শুটিং, উপস্থিত নতুন পুরাণ অভিনেতা-অভিনেত্রী।

পরদিন মোবাইল ফোনে কথোপকথনের এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন- টিভি নাটক বলুন আর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কথাই বলুন অভিনয় প্রশিক্ষণের জায়গা থিয়েটার। কিন্তু অনেকেই একথা জানেন না, আর সে কারণেই তারা ক্যামেরার সামনে গিয়ে হোচট খায়, অনেকে হতাশ হয়ে ক্যারিয়ার ছেড়ে দেয়। তাদের কথা বিবেচনা করে এবং থিয়েটারে নতুন প্রাণস্পন্দন সৃষ্টির লক্ষ্যে তরঙ্গিনী নাট্যকেন্দ্রের এই অভিযাত্রা। তাই আমি নতুনদের করছে আহবান করছি যেকেউ এই তরঙ্গিণী নাট্যকেন্দ্রে আসতে পারবে, নতুনদের জন্য 'তরঙ্গিণী নাট্যকেন্দ্রে'র দরজা সবসময় খোলা থাকবে। তাই তিনি নিয়মিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটেও এর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আমি সাজ্জাদ রাহমানের ফেসবুক আইডিতে তরঙ্গিণী নাট্যকেন্দ্রের প্রচারণা দেখেই বিডি ব্লগে এ বিষয়ে একটা পোস্ট লিখতে উদ্বুদ্ধ হই। কারণ, আমরা অনেকেই সম্মানিত লেখক সাজ্জাদ রাহমান সম্পর্কে অনেককিছু জানিনা। জানিনা ওনার ব্যক্তিগত প্রতিভার কথা, শুধু জানি একজন ব্লগার/লেখক হিসেবে। সাজ্জাদ রাহমানের এই সুন্দর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

উল্লেখ্য, সাজ্জাদ রাহমান এর উদ্যোগেই ১৯৮৮ সালে নোয়াখালীতে 'তরঙ্গিনী নাট্যকেন্দ্র' এর যাত্রা আরম্ভ হয় এবং ১৯৯৬ পর্যন্ত নিয়মিত নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে সংগঠনটি এলাকায় বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৯৬ সালে সাজ্জাদ রাহমান চাকুরীসূত্রে চট্টগ্রামে চলে গেলে সংগঠনের গতিপথ স্তিমিত হয়ে যায়। সেখানে তিনি 'ত্রিতরঙ্গ' নাট্যদলের সাথে কাজ শুরু করেন এবং চট্টগ্রাম বেতারের জন্যে নিয়মিত নাটক লিখতে থাকেন। আমি জানি তিনি লিখেছেনও অনেক, কিন্তু চাকরির কারণে নিরুপায় হয়ে ওনাকে আবার ঢাকায় আসতে হয়।

এরপর ২০১১ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউট থেকে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনায় ৬ মাস ব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেন। এরপর বেশ কিছুদিন টিভি নাট্য পরিচালক নরেশ ভুঁইয়া, এজাজ মুন্না, ফজলুর রহমান এর সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ২০০৬ সালে চ্যানেল আইতে 'প্রফেসর' ধারাবাহিক নাটকের পান্ডুলিপি রচনার মাধ্যমে টিভি নাটকের যাত্রা শুরু হয়।

তাঁর রচনা ও পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ধারাবাহিক নাটক কান্ডকারখানা, শিউলী ভিলা, রহস্য অতঃপর রহস্য প্রভৃতি। একক নাটকের মধ্যে রয়েছে হাফলেট, কোন আলো লাগলো চোখে, আতর আলী, এখনও যায়নি আধার, নীল চুমুক, কল্পলোকের গল্প, ফিরে আসে বারবার, ধ্রুবতারা, ঘটৎকচ পিন্ডিচটকাই, পিঙ্কি, ইশতেহার, এক বলে এক রান, দাবার সংসার, নোনা জলের গল্প, প্রজাপতি ভালোবাসা প্রভৃতি। ২০১৫ সালে তিনি 'সেই মেয়েটি' শিরোনামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দেন যেটি মুক্তির মিছিলে।

বর্তমানে তিনি ডিবিসি নিউজ চ্যানেলে কর্মরত আছেন। এবং ফোকাস বাংলা নামের একটি অনলাইন পত্রিকার সাথেও সম্পৃক্ততা আছে, যা বুঝা যায় ফেসবুক স্ট্যাটাস-এর মাধ্যমে। আবার নিয়মিত আছেন আমাদের প্রাণের ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমেও। সাজ্জাদ রাহমান এর প্রত্যাশা 'তরঙ্গিনী নাট্যকেন্দ্র' দেশের মঞ্চনাটকের সুদিন ফেরাতে ভূমিকা রাখবে এবং দর্শককে হলমুখী করবে। সাজ্জাদ রাহমানের সাথে আমরাও আশাবাদী। সাজ্জাদ রাহমানের এই মহৎ উদ্দেশ্য যেন সফল হয়। মানুষ আবার নতুন করে হলমুখী হোক এই আমাদের প্রত্যাশা।

পরিশেষে একটি কথা উল্লেখ করতে চাই, তাহলো সাজ্জাদ রাহমান সম্পর্কে আমি যতটুকু জেনেছি, এখানে আমি ততটুকুই উপস্থাপন করেছি মাত্র। যদি ভুল হয়ে যায়, 'সাজ্জাদ রাহমান' আমাকে ক্ষমা করে দিবেন আশা করি।