ওয়ার্ড কমিশনারের একগুয়েমিতে জনদুর্ভোগ চরমে, মাননীয় মেয়র দেখবেন কি?

নিতাই বাবু
Published : 20 May 2017, 05:02 AM
Updated : 20 May 2017, 05:02 AM

মসজিদের সামনে রাস্তায় জলাবদ্ধতা, একদিনের বৃষ্টিতে পানিতে ভরে যায় মসজিদ। নামাজ পড়তে পারেনা মুসল্লিরা।

আজ কয়েকদিন যাবত লাগাতার বৃষ্টি হওয়ার কারণে শহরের বাইরের কিছুকিছু পাড়া-মহল্লার নিচু জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। যেসব জায়গায় এখনো রাস্তার সাথে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়নি, সেসব জায়গায়। প্রতিবছরই গ্রীষ্মের শুরুতে এরকম পরিস্থিতি দেখা দেয়, তারমধ্যে ডিএনডি বাঁধের ভেতরেই সবচেয়ে বেশি। ইদানিংকালে নারায়ণগঞ্জ সিটির গোদনাইল এলাকার কিছুকিছু পাড়া-মহল্লার নিচু জায়গায় দেখা যায় এই জলাবদ্ধতার চিত্র। যেসব রাস্তার সাথে ড্রেন করা আছে, সেই ড্রেনের সাথে রাস্তা ঘেঁষা বাড়ির মালিকদের গাতা-খন্দল, বাথরুম, বাড়ির উঠোন, বাড়ির পিছনের নিচু জায়গা পাইপ দিয়ে ড্রেনের সাথে সংযোগ দিয়েছে, সেসব জায়গায় বৃষ্টি হলেও আর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়না। আর যেসব জায়গা বা পাড়া-মহল্লার সাথে থাকা রাস্তা এখনো ড্রেন সহ পাকা হচ্ছেনা, সেসব পাড়া-মহল্লায় দেখা যায় জলাবদ্ধতা। একটুখানি বৃষ্টিতে হাটু পানি, নিদারুণ কষ্টে জীবন ধারণ করতে হয় এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের।

বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে মানুষের দোকানঘর, ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত।

এমনই একটি জায়গা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৮ নং ওয়ার্ডের গোদনাইল চৌধুরীবাড়ি আদর্শ বাজার সংলগ্ন এলাকার।

এলাকাটি নায়ায়ণগঞ্জ সিটির ৮ নং ওয়ার্ড ভুঁইয়াপাড়ার অন্তর্গত। ৮ নং ওয়ার্ডের এই এলাকার নির্বাচিত কমিশনার হলেন সম্মানিত জনাব রুহুল আমিন মোল্লা। তিনি গত ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ নাসিক নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, এই এলাকার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ড দোকান মালিক কমিটির সভাপতি, জনাব মোহাম্মদ মহসিন ভুঁইয়া। সেদিন দুর্ভাগ্যবশত অল্পকিছু ভোটের ব্যবধানে মহসিন ভুঁইয়া জনাব রুহুল আমিন মোল্লার সাথে পরাজয় বরণ করেন। এটাই হলো অত্র এলাকার জনগণের দুর্ভাগ্য আর রুহুল আমিন মোল্লার সোভাগ্য এবং রাগ। সেই রাগের শিকার এখন অত্র এলাকার জনগণ, অবহেলিত হলো এই এলাকাটি। যেখানে আছে মানুষ, সেখানে কিছুনা কিছু সমস্যাও থাকে বা থাকতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। আবার মানুষের সমস্যাও চিরদিন স্থায়ীভাবে থাকেনা, থেকে শুধু কথা।

বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া একটি বসতবাড়ি। পঁচা পানিতে হাটতে হাটতে পায়ে পাঁচন ধরেছে অনেকের।

জানা যায়, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে যখন গোদনাইল চৌধুরীবাড়ি আদর্শ বাজার সংলগ্ন এলাকাটি বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়, তখন এলাকার মানুষ একত্রিত হয়ে নির্বাচিত কমিশনার জনাব রুহুল আমিন মোল্লার কাছে যায়। কীভাবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, এ ব্যাপারে ওনার করণীয় কী- তা জানার জন্য। কিন্তু ফল হলো উল্টো। তিনি হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে ঠান্ডা মাথার হাসিঠাট্টার ছলে সকলকে বলে দেয়, এই এলাকার কোনো কাজ আমি করবো না। আমি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হইনি, আপনারা তো আর আমাকে ভোট দেননি, নির্বাচনের সময় সমর্থন দিয়েছিলেন মহসিন ভুঁইয়াকে। কাজেই, এখন আপনাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আপনারা মহসিন ভুঁইয়ার কাছেই যাবেন, তনিই আপনাদের সমস্যার সমাধান করে দিবে। তিনি এভাবেই সবাইকে সাফ কথা জানিয়ে দেন, আমি আপনাদের এলাকার কোনো কাজই করবোনা। আপনারা এখন যেতে পারেন, বলেন রুহুল আমিন মোল্লা। অথচ তিনিই এই এলাকার গণমানুষের ভোটে নির্বাচিত কমিশনার। এই এলাকাটির দুই দিকে রোড, আর দুই দিকে বসতবাড়ি, কলকারখানা, নীট গার্মেন্টের মধ্যখানের এই এলাকার দৃশ্য যে দেখবে তারই মনের কষ্টের কাঁপন ধরবে শরীরে জলাবদ্ধতার শিকার মানুষের কষ্ট দেখলে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নীট গার্মেন্টের নির্গত বিষাক্ত কেমিক্যালের পঁচা পানির ওপর ইট দিয়ে উঁচু করে টেবিলের মতো বানিয়ে তার ওপর রান্নাবান্না করছে বসবাসরত ফ্যামিলির মানুষেরা। আর বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে মসজিদে নামাজও আদায় করতে পারছেনা মুসল্লিরা।

বাড়িতে পানি জমে যাওয়ার কারণে বহু কষ্টে ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থা।

এসব নিদারুণ চিত্র নিজ চোখে দেখেও সম্মানিত কমিশনার রুহুল আমিন মোল্লার মনের ক্ষোভ যায়নি, মন গলেনি পানিতে বাস করা মানুষের কষ্ট দেখে। মানুষের কষ্ট দেখে দুইচারটা কথা বলে মানুষকে শান্তনা দেওয়া দূরের কথা, উল্টো তাদের ক্ষোভের কথাই শুনিয়ে দিলেন কমিশনার রুহুল আমিন মোল্লা। তারজন্য জনাব রুহুল আমিন মোল্লাকে জনগণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাচ্ছি, জনগণের দুয়ারে একটি ভোটের জন্য যেদিন গিয়েছিলেন, সেইদিনটির কথা ভুলে যাওয়ার জন্য। একটা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় দুএকটি পাড়া-মহল্লা থাকেনা, থাকে অনেকগুলো এলাকা পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ডও থাকে অনেক। সব ওয়ার্ডের মানুষ সরাসরি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে যেতে পারেনা, সমস্যা দেখা দিলে যায় ওয়ার্ড কমিশনারের কাছে। জনগণ যদি ওয়ার্ড কমিশনারের ক্ষোভের শিকার হয়, তখন সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র ছাড়া এলাকাবাসীর বান্ধব আর কে থাকে? তাহলে মাননীয় মেয়রই দেখবে এলাকার জনগণের সমস্যা, শুনবে দুঃখ-সুখের কথা।

বহু কষ্টে একজন মাহিলাকে কোনরকমভাবে দাঁড়িয়ে রান্নাবান্না করতে দেখা যায়।

মাননীয় মেয়র, আপনিও তো নির্বাচন করেছেন, আপনারাও তো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো। আপনার নারায়ণগঞ্জ সিটির কোনো এলাকার জনগণ যদি আপনার কাছে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য যায়, আপনি কি তাদের এভাবে বলতে পারবেন? মাননীয় মেয়র, এদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জনগণের ভোটে নির্বাচিত, নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে। তাই বলে কি নির্বাচিত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীর এলাকার জনগণের কোনো সমস্যা দেখবে না? মাননীয় মেয়র, আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন যে, গোদনাইল চৌধুরীবাযড়ি রেললাইন আদর্শ বাজারের দক্ষিণে গোগনাইল রসূলবাগ রাললাইন পুল পর্যন্ত বর্তমানে ড্রেন সহ পাকা সড়ক। এবং রেললাইন আদর্শ বাজারের পূর্বদিকে আরামবাগ রোডও বর্তমানে ড্রেন সহ পাকা, যা আপনার উন্নয়নের রূপরেখার সুখ্যাতি এক চিত্র। এই এলাকার কাজও কিছুদিনের মধ্যে আরম্ভ করবেন, যা বিশ্বস্ত সূত্রে জানা। এই রেললাইনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ যখন পাকা সড়ক হয়ে গেছে, এটিও হয়ে যাবে অচিরেই, যা লোকমুখে শোনা।

আমরা দেখেছি আপনাকে, দেখেছি আপনার উন্নয়ন। দেখেছি যেখানেই রাস্তার কাজ চলছে, সেখানেই দেখেছি আপনাকে। দেখেছি কখনো ভোরবেলায়, কখনো বিকালবেলায় এলাকার জনগণকে সাথে নিয়ে পরিদর্শনে নেমেছেন উন্নয়নের কাজ তদারকি করার জন্য। বুঝিয়ে দিয়েছেন জনগণকে, বলে দিয়েছেন আপনাদের কাজ আপিনারা কনট্রাকটর থেকে বুঝে নিবেন। দেখবেন কাজ করার সময় রড-সিমেন্ট কম দেয় কিনা।

মাননীয় মেয়র, দেখিনি আপনাকে কোনো হিংসাত্মক মনোভাব দেখাতে। শুনিনি কখনো আপনার মুখে যে, এই এলাকার কাজ আমি করবেনা, এই এলাকার মানুষ আমাকে ভোট দেয়নি। দেখিনি এদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীকে আর কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে এসব কথা বলতে বা শুনাইতে। আমরা কখনো কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধির মুখে শুনিনি যে, ওই এলাকা আমার বিরোধী এলাকা, ওই এলাকার জনগণ আমার বিরোধী, তারা আমাকে ভোট দেয়নি, আমি তাদের কোনো কাজ করবেনা বা দেখবেনা। এমন হিংসাত্মক কথা এই প্রথম শুনলাম সম্মানিত রুহুল আমিন মোল্লার মুখে, শুনালেন তিনি তারই নির্বাচিত এলাকার সাধারণ জনগণকে।

মাননীয় মেয়র, আমরা আপনার কাছে কোনো বিচার চাচ্ছি না, আমরা কোনো নালিশ করছিনা। আমরা শুধু একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির হিংসাত্মক মনোভাবের কথা আপনাকে শুনালাম। সেই সাথে গোদনাইল চোধুরীবাড়ি আদর্শ বাজার সংলগ্ন বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত এলাকার সাধারণ মানুষের দুঃখকষ্টের বাস্তব গল্পও শুনালাম। নারায়ণগঞ্জ সিটির জনগণের ভোটে আপনি বর্তমান নির্বাচিত মেয়র, আপনার কাছেই আমাদের চাওয়া পাওয়ার দাবি। একজন নির্বাচিত ওয়ার্ড কমিশনার যখন এলাকার জনগণের কথায় কর্ণপাত করছেনা, তখন আপনাকেই শুনাই আমাদের দুঃখ-সুখের কথা। আপনি আমাদের 'নগর মাতা' আপনিই শুনবেন আমাদের আর্তনাদ। আমরা কাউন্সিলর চিনিনা, আমরা চিনিনা মেম্বার, আমরা চিনি আপনাকে। তাই আমাদের এই বহুদিনের সমস্যাটা আপনি নিজে সরেজমিনে এসে দেখবেন কি?