লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন ২০১৭

নিতাই বাবু
Published : 16 July 2017, 03:28 PM
Updated : 16 July 2017, 03:28 PM

বর্তমানে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসব নির্বাচন দেশের অন্যান্য নির্বাচনের চেয়েও কম নয়। আমাদের বঙ্গদেশে আগে অন্যান্য নির্বাচন ধারাবাহিকভাবে হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন ছিল না । প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হলে একটানা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়তে পারতো। এর মধ্যে আর কারোর কোনো ভর্তি ফি দিতে হতো না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবক নির্বাচন প্রচলিত হবার পর থেকেই দিতে হচ্ছে । যা গরিব মানুষের জন্য এক ধরণের মরার উপর খাড়ার ঘা। তবু মানুষ থেমে নেই, শত কষ্টে আর অভাবের মাঝেও চালিয়ে যাচ্ছে সন্তানের লেখাপড়া। ভর্তি করছে নতুন নতুন স্কুলে, স্বপ্ন দেখছে নতুন করে । তাদের স্বপ্ন শুধু একটাই, সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অভিভাবকরা খোঁজে নামিদামি স্কুল-কলেজ ।

লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস্ উচ্চ বিদ্যালয় ।

নামীদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইলে অনেক আছে । কিছু আছে সরকারি, কিছু বেসরকারি । কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস্ উচ্চ বিদ্যালয়টি সুনাম অর্জনকারী । এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক নির্বাচন আগামী ২২জুলাই ২০১৭ ইং তারিখে । এছাড়া –

• নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ৩ জুলাই ২০১৭ ইং ।
• নমিনেশন জমা নেওয়া হয় ৫ জুলাই হতে ৮ জুলাই ২০১৭ ইং তারিখ ।
• ৮ জুলাই শুরু হয় নমিনেশন বাছাই পর্ব ।
• ১০ জুলাই ছিল প্রতীক বরাদ্দ ও ১১ জুলাই প্রার্থীতা প্রত্যাহার ।
• ২২ জুলাই বিদ্যালয়টির নির্বাচনে লড়বেন ১১ জন প্রার্থী ।
• সদস্যপদে প্রার্থী ৮ জন ।
• সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থী ৩ জন ।
• শিক্ষক প্রতিনিধি ৩ জন ।

আগে এই বিদ্যালয়টিতে অভিভাবক নির্বাচন হতো প্রতীক নিয়ে । গত ৪ বছর ধরে হয়ে আসছে ব্যালট নম্বর দিয়ে । যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাদের প্রতীক হিসেবে থাকবে একটি নম্বর বা সংখ্যা । নির্বাচনের দিন অভিভাবক ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন নম্বরে বা সংখ্যায়।

অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্যপদ নিয়ে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের নাম ও প্রতীকী ব্যালট নম্বর বা সংখ্যা নিম্নরূপ:
১। মোঃ আবুল হোসেন (এম. এস. এস)
ব্যালট নং১, গতবার প্রতিদ্বদ্বী ছিলেন
২। ডা: এম. এ. মোতালেব
ব্যালট নং২, সাবেক নির্বাচিত সদস্য
৩। আমিনুল ইসলাম মানিক
ব্যালট নং৩, সাবেক নির্বাচিত সদস্য
৪। আলী আহম্মদ মোল্লা
ব্যালট নং৪, সাবেক নির্বাচিত সদস্য
৫। মোঃ জসিম উদ্দিন (জসিম)
ব্যালট নং৫, সাবেক নির্বাচিত সদস্য
৬। দিল মোহাম্মদ (দিলু)
ব্যালট নং৬, এবারে নতুন মুখ
৭। মোঃ মনির হোসেন
ব্যালট নং৭, সাবেক নির্বাচিত সদস্য
৮। মোঃ সালাহ্উদ্দিন আহমেহ (এম.কম)
ব্যালট নং৮, এবারে নতুন মুখ

সংরক্ষিতা মহিলা আসন নিয়ে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের নাম ও ব্যালট নম্বর বা সংখ্যা নিম্নরূপ:
১। নাসরিন জাহান মণি
ব্যালট নং৯, এবারে নতুন মুখ
২। রিনা আক্তার
ব্যালট নং১০, এবারে নতুন মুখ
৩। সাদিয়া ইসলাম ময়না
ব্যালট নং১১, সাবেক নির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা আসন


বিদ্যালয়টির ইতিহাস

১৯৪৭ সালে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের মালিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন । উদ্দেশ্য ছিল শ্রমিকদের সন্তানাদির লেখাপড়া । অন্তত ক্লাস ফাইভ (প্রাইমারি) পর্যন্ত যাতে পড়তে পারে । প্রথম বিদ্যালয়টি ছিল ফ্রি প্রাইমারি স্কুল । পরবর্তীতে শ্রমিকদের দাবির মুখে এটি উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপ নেয় । এক সময় লক্ষ্মীনায়ণ কটন মিলটি বন্ধ হয়ে যায় । মিলের সাথে বিদ্যালয়টিও বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয় । কিন্তু বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন ত্যাগী ও সাহসী । এক দিন ত্যাগী কয়েকজন শিক্ষক বিনা বেতনে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দেন । তাদের এই ঘোষণার উদ্দেশ্য ছিল বিদ্যালয়টি যাতে বন্ধ না হয় । ওই ত্যাগী শিক্ষকদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ অবধি চালুই রয়েছে বিদ্যালয়টি । সুনামের সাথেই চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম, বাড়ছে স্থাপনা, বাড়ছে শিক্ষার্থী ।

এলাকার অলিগলিতে ছেয়ে গেছে পোস্টারে ।

বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় ২৮০০ ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে । আগে ছিল চৌচালা টিনের ঘর। এখন টিনের ঘরের সাথে আছে রড সিমেন্টে গড়া বিল্ডিং । বর্তমানে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বাৎসরিক সমাপনী পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করছে । এই সুনাম গোদনাইল এলাকার অন্য কোনো বিদ্যালয়ে নেই । তাই প্রতিবছর সমাপনী পরীক্ষার পর বাড়তে থাকে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা। অন্য বিদ্যালয়ের নতুন ছাত্র ছাত্রীরাও ভর্তির জন্য ভিড় জমায়। ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে ২০১৬ সালে মেয়েদের জন্য চালু করে প্রভাতি শিফট। আর ছেলেদের জন্য চালু করে দিবা শিফট । এছাড়াও প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে বসার সুব্যবস্থা। প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে আছে ফ্যান, ও সিসি ক্যামেরা । বর্তমানে বিদ্যালয়টি সার্বক্ষণিকভাবে সিসি ক্যামেরা দ্বারা মনিটরিং করা হয় । যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে ।

এবার আসি নির্বাচন নিয়ে

এবার সদস্যপদ নিয়ে যেই ৮জন ব্যক্তি এবার লড়ছেন, সবাই অত্র এলাকার । তারা মান্যগণ্য ও স্বনামধন্য ব্যক্তি । শিক্ষার দিক থেকেও কেউ কারো চেয়ে কম নয় । এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কয়েকজন নতুন মুখও দেখা যাচ্ছে । নতুনরাও সুশিক্ষিত, ক্ষমতাবান, ন্যায়পরায়ণ, শিক্ষানুরাগী, অন্যায়ের বিরুদ্ধেও সোচ্চার । পুরানো যারা আছেন, তাদেরকে তো আগে পরে বেঁছেই নিয়েছিল ভোটাররা । নির্বাচন মানেই যাচাই বাছাই, আর পরিবর্তন । ভোটাররা হিসেব মিলিয়ে দিবেন ব্যালটের মাধ্যমে । পুরানোদের মধ্যে যারা ভালো করেছেন তারা থাকবেন । ভোটাররাও তাদের পুনরায় নির্বাচিত করবেন । যাদের প্রতি ভোটারদের ক্ষোভ বা মনোকষ্ট আছে তারাই বিদায় নিবেন । এমনটাই দেখা যায় দেশের প্রতিটি নির্বাচনে ।

সুনামধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৯০০ । কিছু শীতলক্ষ্ম্যা নদীর পূর্ব পাড়ের, কিছু পশ্চিম পাড়ের। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোট গ্রহণ । আটজন সদস্যপদ নিয়ে লড়ছেন, পাস করবেন ৪ জন । আর সংরক্ষিত মহিলা আসনে লড়ছেন ৩ জন, পাস করবেন ১ জন । মোট ১১ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে ভোটাররা বেছে নিবেন ৫ জনকে । পুরুষ ৪ জন, মহিলা ১ জন । নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধি ৫ জনের সাথে থাকবে শিক্ষক প্রতিনিধি তিনজন। প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা অনুযায়ী প্রতিনিধি সদস্যদের ক্ষমতা ভাগাভাগি থাকবে।

জানা যায়, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে গভর্নিং বডি চলছে অ্যাডহক কমিটি দিয়ে । চলবে নির্বাচন শেষে শপথবাক্য পাঠ না করা পর্যন্ত। এদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা ছুটছে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের কাছে । রাস্তাঘাটে, বাড়িতে, দোকানে, আনাচেকানাচে খুঁজছে ভোটার। যেখানেই ভোটারকে পাচ্ছে, মিনতি করছে একটি ভোটের জন্য। বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ছেয়ে গেছে সাদাকালো পোস্টারে। এলাকাজুড়ে বয়ে চলছে এক অন্যরকম নির্বাচনী হাওয়া । দেখে মনে হয়, এ যেন সিটি কর্পোরেশন বা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।

অভিভাবকদের ছয় দফা দাবি
• সমাপনী পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাস করার পরও পুনরায় ভর্তি কেন? এ ব্যাপারে বিজয়ী প্রতিনিধি সদস্যবৃন্দ যেন ভেবে দেখে । বাতিল না করতে পারলেও যেন ভর্তি ফি সীমিত থাকে ।
• স্কুল ছুটির পর স্কুলের সামনে অথবা ভেতরে যেন বখাটদের উৎপাত না থাকে ।
• মেয়ারা যাতে নির্বিঘ্নে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ।
• বর্তমানে বহুসংখ্যক ছাত্র ছাত্রী শীতলক্ষ্ম্যা নদীর পূর্ব পাড় থেকে আসে । তাদের নদী পারাপারের জন্য একটি ট্রলার দিতে হবে । যাতে বৃষ্টির দিনেও তারা ঠিকমত বিদ্যালয়ে আসতে পারে ।
• বছর শুরুতেই নতুন পাঠ্যবই হাতে দিতে হবে, বিনিময়ে কোনো প্রকার মূল্য নিতে পারবে না ।
• মাসে মাসে অযথা নানারকম ফি বা চাঁদা নিতে পারবে না ।

পরিশেষে
নির্বাচন মানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা মানে জয় পরাজয় । ১১ জন প্রার্থী থেকে ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবকবৃন্দ বেছে নিবেন ৫ জনকে। তাদের কাছে ন্যস্ত করবেন আগামী দুই বছরের জন্য বিদ্যালয়টির দায়িত্ব । তাদের ওপর আস্থা রাখবেন ছাত্রছাত্রীদের যুগোপযোগী মান উন্নয়ন শিক্ষা ব্যবস্থার । তাদেরকে বানিয়ে দিবেন ২৮০০ জন ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক। নিজ ঘরে পিতামাতা থাকবে অভিভাবক, বিদ্যালয়ে থাকবে অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্যবৃন্দ । তারাই ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা গ্রহণ ও জীবন গঠনের সাথে থাকবেন জড়িত । তাই এবারের নির্বাচন ঘিরে সাধারণ অভিভাবকদের আগ্রহ তুঙ্গে। আশা করি এলাকার সবার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।